পাণ্ডুলিপি থেকে পাঁচ কবিতা

Looks like you've blocked notifications!

স্কোয়াশ বল

স্কোয়াশ বলের পিছনে ছুটতে ছুটতে আমরা মূলত হরিণীর গ্রীবায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। অজস্র মাতৃদুগ্ধের ভিড়ে খুঁজে নিয়েছিলাম নিরেট এবং গোল স্কোয়াশ বল। বাবা বলেছিল, ভুল ক্যালকুলাসের ভিতর যেসব সমুদ্র অমিমাংসিত থেকে গেছে সেখানে ভিড় করে বিকিনি পরা নারী ঝিনুক।

কেন তবে শিশুদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল স্কোয়াশবল অথবা জারের ভিতরে লুকিয়ে থাকা ঝিনুকের খাবার?

তৃষ্ণা, ঘ্রাণ এবং নৈঃসঙ্গ্য—এসবের সঙ্গে ঝিনুক কিংবা শিশুদের কোনো সম্পর্ক নেই।

যারা ক্যালকুলাস বইয়ের ভিতর রেখেছিল সামুদ্রিক ঘড়ি, তারাও কেবলই লবণের কাছে ফিরে গিয়েছিল।

চল আমরাও ফিরে যাই লবণের দিকে।

নতুবা হরিণীর গ্রীবা একা একা সমুদ্র হয়ে যাবে।

 

মাছ ধরার গান

বাবার সঙ্গে আমরা যখন মাছ ধরার গান শুনতে যেতাম, আমাদের একটা নদীর প্রয়োজন হতো। আমরা আঙুল দিয়ে মাটি কেটে কেটে নদী বানাতাম। বাবা একটা পাতা নদীতে দিয়ে বলত, এটা হলো মাছ। সেই থেকে আমরা পাতা দেখলে মাছ মাছ বলে চিৎকার করে উঠতাম।

সেবার শীতকাল আর গেল না। মানে শুধুই শীত। আমরা নদীতে গিয়ে মাছ নিয়ে আসতাম। গাছে লাগিয়ে রাখতাম। আর বাবাকে বলতাম, পাতাদের কোনো নদী নেই কেন?

—কারণ তার গাছ আছে।

আমার মন খারাপ হতো। আমি ওই দূরের আকাশ ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম, আর ভাবতাম আমার নদী কিংবা গাছ কোনোটাই নাই।

কনক বলত, জানিস, ওই যে তোর শাদা ঘুড়িটা সেখানে আকাশ বেঁধে রেখেছিস, যার কাঁধে হাত দিয়ে ভাবিস, ওটা কি জানে রঙের তীব্রতা কখনো দৃশ্য দিয়ে মাপা যায় না!

—সে শুধু জানে কোনো প্রত্যাদেশেই সে ভেঙে পড়বে না। কারণ প্রকৃতিতে সেই কেবল ইশ্বরের নিকটবর্তী।

—তুইও ইশ্বরের কাছে থাকিস। ঠিক বারোটা এক মিনিটে ঝুলে গেছিস। তুই জানিস না?

—আমাকে কেবল মানুষের চিবুকের দৈর্ঘ্য মাপার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।

—তবে সিল মাছের সঙ্গে শীতের দূরত্বের কী হবে?

—স্তনের উষ্ণতার সঙ্গে সিল মাছের যতটুকু পার্থক্য তা এবার আমরা সোয়েটার দিয়ে পুষিয়ে নেব।

 

অন্ধ ব্লুজ

তোমার অন্ধ ব্লুজ নিয়ে হারিয়ে যাও দূরের কোনো ট্যাটুবনে। আর্মেনিয়ান কুমারীদের এখন ঘরে ফেরার সময়। হাওয়াই গিটারের সুর কুমারীদের অর্গাজম হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে ক্রমশ। কেউ হয়তো বিউগল মুখে দিয়ে ভাবছে কুমারী ঘুঘুদের নাভীমধ্যস্থ যৌনতার কথা।

—ঘুঘুপাখির সাথে কুমারীদের সম্পর্কের বিষয়ে আমরা কতটুকু জানতে পারি?

—তারা গোপন চিরুনীর ভিতর লুকিয়ে রাখে ককেশিয়ান সিম্ফনির অমরত্ব।

আমি পাতার গায়ে লিখি অমরত্ব। কুমারীর গায়ে লিখি অমরত্ব। অমরত্ব ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের গানের ভিতর। অমরত্বের ভিতর একা একা কাঁদছে আমার ব্যক্তিগত আর্মেনিয়ান হাওয়াই গিটার।

 

কী বিষাদ! কী বিষাদ!

সহজ আত্মহত্যার দিন আর ফিরবে না। চুলের ভাঁজে ভাঁজে জড়িয়ে গেছে তোমার পুরুষের আঙুল। আমরা ক্রমশ ভুলছি মেরুন রঙের পোস্টম্যান। ‘কী বিষাদ! কী বিষাদ!’ বলে চিৎকার করছে একদল পাহাড়ি যুবক। কনক এসবের পায়ে পায়ে রেখে আসে বব মার্লেও সোলো কনসার্ট।

—এইসব মৃত্যুদিনের গান, তার পাশে দৈত্যাকার বেইজিস্ট।

—তবুও কোথাও কোথাও আফিম বাগানে হাই তুলছে ক্লান্ত অডিয়েন্স।

—দেখ, ড্রামস্টিকের তালে তালে চলছে হেডব্যাঙিং, তার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে অলিভের গাঢ় ছায়া।

—যারা এখনো ধুতুরা থেকে বিষ আলাদা করতে শেখেনি?

—প্রতিটি ভোরের জন্য রয়েছে আত্মহত্যার আলাদা আলাদা নিয়মাবলী।

—তবে আরেকটু অপেক্ষা, এরপর ডানা মেলবে বিষাক্ত কনসার্ট।

 

কনক কিংবা ধূসর জীবনানন্দ

আমরা পাপের দিকে ভাগ হয়ে বসি। প্রতিটি উপদলে দুজন মানুষ এবং একটি অযৌন তরমুজ ফল। ওইসব দিনে আঙুলের ডগায় পাখিদের হাড় লিখে রাখতাম। কনক তার স্তনের বোঁটায় ছিপ গাঁথতে গাঁথতে বলত :

—এই বরষায় আমরা মাছ এবং মৈথুনের পার্থক্য ঘুচিয়ে দেব।

আবার সন্ধ্যার দিকে শুয়োরের আনাগোনা বেড়ে যাবে। ওভারকোটে লেগে থাকবে রক্তাক্ত তরমুজের দাগ।

কনক আর ধূসর জীবনানন্দের খোঁজে আরো একটা অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে ফেলব। ধূসর ছাইটুকু ওভারকোটে রেখে অপেক্ষমাণ মোটরগাড়িতে উঠে বসব।

 

(২০১৭ সালের একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিতব্য ‘ব্রায়ান অ্যাডাম্স অথবা মারমেইড বিষ্যুদবার’ বইয়ের পাণ্ডুলিপি থেকে।)