বইয়ের বিজ্ঞাপন হতেই পারে : পলাশ মাহবুব

Looks like you've blocked notifications!

পলাশ মাহবুব, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার। লিখছেন অনেকদিন ধরে। সাহিত্যের বেশির ভাগ শাখায় কাজ করেছেন এবং করছেন। লেখালেখিতে নিজস্ব একটি কথনভঙ্গি তৈরি করতে সমর্থ হয়েছেন তিনি। এবারের বইমেলায় সাতটি নতুন বই প্রকাশিত হচ্ছে এই লেখকের। বইমেলা এবং লেখালেখি নিয়ে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।

আগামীকাল থেকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হচ্ছে। কেমন লাগছে?

পলাশ মাহবুব : লেখক-পাঠক ও প্রকাশকদের কাছে ফেব্রুয়ারি মাসটি অন্য আর দশটি মাসের মতো নয়। আমরা পুরো বছর অপেক্ষা করি ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য। ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষার মাস, পৃথিবীর দীর্ঘতম বইমেলার মাস। আগামীকাল থেকে শুরু সেই মাস। খুব ভালো লাগছে। আশাকরি এ বছর একটি অসাধারণ বইমেলা পাব আমরা।

এবারের মেলায় আপনার কোন কোন বই প্রকাশিত হবে?

 পলাশ মাহবুব : নতুন বইয়ের সংখ্যা সাত-আটটি হবে। আর বেশ কয়েকটি বই পুনর্মুদ্রিত হবে। নতুন বইয়ের মধ্যে আছে কিশোর উপন্যাস ‘লজিক লাবু’। এটি প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরি। টো টো কোম্পানি সিরিজের এবারের উপন্যাস ‘টো টো কোম্পানি ও বীরপ্রতীকের মেডেল’ আসবে অন্বেষা থেকে। ছোটদের গল্পের বই ‘সূর্যমুখিরা দুইবোন’ প্রকাশিত হবে অন্যপ্রকাশ থেকে। পাঞ্জেরি থেকে আসবে কিশোর গল্পের বই ‘তালা’ এবং ছড়াগ্রন্থ ‘থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে’। তাম্রলিপি প্রকাশ করবে বড়দের গল্পের বই ‘রোমিওপ্যাথি’। অনিন্দ্য প্রকাশ বের করবে প্রেমাণুকাব্য সিরিজের দ্বিতীয় বই ‘প্রেমাণুকাব্য-২’। পাশাপাশি ১৫ বছর আগে প্রকাশিত প্রেমাণুকাব্য-১ বইটিও অনিন্দ্য পুনর্মুদ্রণ করবে। এ ছাড়া কিশোর উপন্যাস ‘পিটি রতন সিটি খোকন’ নতুনভাবে আসবে পাঞ্জেরি থেকে এবং কিশোর গল্পগ্রন্থ ‘বই খুললেই ভূত’ পুনঃমুদ্রিত হচ্ছে অনিন্দ্য প্রকাশন থেকে।

আপনার প্রথম বই কতসালে প্রকাশিত হয়?

পলাশ মাহবুব : ১৭ বছর আগে, ২০০০ সালে প্রথম বই প্রকাশিত হয়। বইয়ের নাম ‘পিপিলিকার পাখা’। বইটি প্রকাশ করেছিল জাগৃতি প্রকাশনী।

লেখালেখিতে আগ্রহী হওয়ার কারণ কী?

পলাশ মাহবুব : আগ্রহী হওয়ার প্রথম কারণ, ভুল ধারণা। লেখালেখিকে প্রথমে সহজ ভেবেছিলাম। কিন্তু শুরু করার পর দেখলাম ঘটনা পুরো উল্টো। লেখালেখি কঠিনেরও কঠিন। কিন্তু ভালোবাসা যেহেতু হয়ে গেছে তাই ফেরার উপায় নেই। কঠিনেরেই ভালোবাসিলাম।

আপনার আজকের এই পর্যন্ত আসার পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?

পলাশ মাহবুব : আমার ধারণা একজনের লেখক হওয়ার পেছনে তাঁর নিজের অবদানটাই সবচেয়ে বেশি থাকে। কারণ কোনও বাবা-মাই প্রথম দিকে চান না সন্তান লেখালেখি করুক। এইম ইন লাইফ রচনায় লেখক হওয়ার বিষয়টি কখনো শেখানো হয় না। কারণ আমাদের দেশে শুধু লেখালেখি করে সম্মানজনক ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন এখনো সম্ভব নয়। এটি একটি অনিশ্চিত যাত্রা। সুতরাং আমার তো মনে হয় লেখক হওয়ার ঝুঁকি প্রথমে নিজেকেই নিতে হয়। আমিও তাই নিয়েছি। তবে এ পর্যন্ত আসার পেছনে বহু মানুষের সহযোগিতা, উৎসাহ, প্রেরণা আর ভালোবাসা ছিল। যা এখনো আছে। আশাকরি ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

অনেকে বলেন প্রযুক্তি যেভাবে আগাচ্ছে তাতে বইয়ের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। আপনিও কি তাই মনে করেন?

পলাশ মাহবুব : এ বিষয়ে আমার ভাবনটা একটু ভিন্ন। আমি মনে করি প্রযুক্তির নানা মাধ্যম আসলেও বইয়ের আবেদন থাকবে। কারণ বিছানায় বালিশের পাশে মাথার কাছে বই রাখা আর ল্যাপটপ রাখার অনুভূতি কিন্তু এক না। পড়তে পড়তে বুকের ওপর বই রেখে ঘুমিয়ে পড়ার সুখ আপনি কোথায় পাবেন, যদি বই না থাকে? সুতরাং বই থাকবে। অন্তত পৃথিবীতে মানুষ যত দিন আছে তত দিন তো থাকবেই।

সাহিত্যের কোন শাখা নিয়ে আপনার লিখতে ভালো লাগে?

পলাশ মাহবুব : কবিতা এবং প্রবন্ধ ছাড়া বাকি প্রায় সবকিছুই লেখা হয়েছে। তবে গল্প আর উপন্যাস লেখায় আগ্রহ বেশি। আর ছড়া অনেকটা সহজাত হয়ে গেছে।

বইকে কি আপনি পণ্য মনে করেন?

পলাশ মাহবুব : আমি কি মনে করি সেটা বড় কথা না। তবে বাস্তবতা বলছে, বই অবশ্যই একটি পণ্য। তবে বিশেষায়িত পণ্য। অন্য সাধারণ পণ্যের চেয়ে বইয়ের মর্যাদা আলাদা। কিন্তু দিনশেষে বই একটি পণ্য। তা না হলে মেলা করার দরকার ছিল না।

বইয়ের প্রচারণার বিষয়টিকে অনেকে নেতিবাচকভাবে দেখেন। আপনি কীভাবে দেখেন?

পলাশ মাহবুব : অবশ্যই ইতিবাচক হিসেবে দেখি। বইয়ের প্রচারণা খারাপ কিছু না। বিশেষ করে আমাদের দেশে যেখানে দিনে দিনে বইয়ের পাঠক কমে যাচ্ছে সেখানে তো বইয়ের প্রচারণার বাড়তি মনযোগ দেওয়া উচিত। আরেকটা বিষয় হচ্ছে একজন প্রকাশক বইয়ের পেছনে বিনিয়োগ করেন। তিনি তাঁর বিনিয়োগ উঠিয়ে আনার জন্য বিজ্ঞাপন দিতেই পারেন। তা ছাড়া ভালো জিনিসের প্রচারণা চালানো তো খারাপ কিছু না। তা ছাড়া বই তো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না যে তার বিজ্ঞাপন করা যাবে না।

শুধু বইমেলা কেন্দ্রিক বই প্রকাশনাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

পলাশ মাহবুব : খারাপভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কারণ বইমেলা ছাড়া এখন নতুন বই খুব একটা প্রকাশিত হয় না। আমাদের পুরো প্রকাশনা জগতটাই তো বইমেলাকেন্দ্রিক। তা ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে আমি শত ফুল ফুটতে দেওয়ার পক্ষে। সব ফুলকেই যে সুবাস ছড়াতে হবে তা তো নয়।

লেখক এবং প্রকাশকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?

পলাশ মাহবুব : ভালো সম্পর্ক ছাড়া তো ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যায় না। তবে লেখক-প্রকাশকের সম্পর্ক হতে হবে তারচেয়েও বেশি কিছু। তাদের দুয়ের মধ্যে থাকা উচিত স্বপ্নময় একটি সম্পর্ক। ভালো কিছু করার এবং উপহার দেওয়ার আন্তরিক সম্পর্ক।

আপনার প্রিয় লেখকদের নাম বলুন

পলাশ মাহবুব : অনেক অনেক প্রিয় লেখক আমার। প্রতিনিয়ত সেখানে নতুন নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে। আমি মুগ্ধ হয়ে তাঁদের লেখা পড়ি। আর মনে মনে ভাবি, ইস! যদি তাঁদের মতো লিখতে পারতাম।

লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

পলাশ মাহবুব : পরিকল্পনা একটাই। লিখে যেতে চাই। লিখে যেতে চাই। লিখে যেতে চাই।