কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রতিবাদে চিত্র প্রদর্শনী

Looks like you've blocked notifications!

‘ওরা বলেছিল, তুমি শান্ত। কিন্তু ওই নীরবতার মাঝেই তোমার দ্রোহের উত্তাপ অনুভব করেছিলাম। যখন কথা বলা শুরু করলে তুমি, ওরা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। ওদের ভয়ের কারণটা আমি বুঝতে পারি। ভয় পেয়ে ওরা ঘিরে ধরেছিল তোমাকে। কিন্তু ওদের একাকিত্বটুকুও আমি বুঝতে পারি। তুমি যে কড়ইগাছের নিচে বসতে, সেদিকটা দেখাল ওরা। যে বটগাছের নিচে বসে তুমি অবলীলায় সত্য কথা বলতে, সেটাও দেখাল। তুমি মাটির বাড়ির যে মেঝেতে শুয়ে থাকতে, সেদিকেও চোখ গেল ওদের। যে পাটির ওপর বসে বিশ্রাম নিতে তুমি, আমি ছুঁয়ে দেখলাম সেটি। মনস্থির করলাম, এর ওপরই তোমার প্রতিচ্ছবি আঁকব’—এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন আলোকচিত্রী ও অ্যাক্টিভিস্ট শহীদুল আলম।

বাংলাদেশের অবাঙালি জাতিসত্তার নারী কল্পনা চাকমা দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সব সময়ই সোচ্চার ছিলেন। ১৯ বছর আগে কল্পনা চাকমা অপহরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ ‘কল্পনা’স ওয়ারিয়ার্স’ শিরোনামে ১২ জুন সন্ধ্যা ৬টায় দৃক গ্যালারিতে শুরু হয়েছে আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী শহীদুল আলমের আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং সঙ্গে থাকছে কল্পনা চাকমা অপহরণ হওয়ার পর সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে যে কয়জন ব্যক্তি সোচ্চার ছিলেন, তাঁদের পোর্ট্রেটের পারফরমেটিভ ইন্সটলেশন। ভিজুয়াল ডকুমেন্টারি এবং পাটির ওপর অত্যাধুনিক লেজার ফটো এচিংয়ে গবেষণার ফলস্বরূপ একটি সমন্বিত মাধ্যমে সাজানো হয়েছে কল্পনা’স ওয়ারিয়ার্স প্রদর্শনীটি ।

১২ জুন সন্ধ্যায় ধানমণ্ডির দৃক গ্যালারিতে কবিতা চাকমার ‘জ্বলি না উধিম কিত্তেই’ (‘রুখে দাঁড়াব না কেন’) কবিতাটি যখন আবৃত্তি করা হচ্ছিল, তখন যেন প্রতিবাদী হয়ে গ্যালারির দেয়ালও প্রতিধ্বনি দিচ্ছিল ‘জ্বলি না উধিম কিত্তেই’। এ সময় কল্পনা চাকমার সহযোদ্ধাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন গ্যালারিতে। তাঁরা মোমবাতি প্রজ্বালন করে যেন এই হারিয়ে যাওয়া নীরবতাকে সরব করার প্রত্যয় নিলেন আরো একবার।

প্রদর্শনীর ছবিগুলো যে মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে, তা পাহাড়িদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। সাক্ষাৎকার প্রদানকারীদের প্রত্যেকের কথায় বারবার কল্পনার সাদাসিধে জীবনের কথা উঠে এসেছে। সে সূত্রেই সাধারণ আলোকচিত্র মাধ্যম থেকে বের হয়ে পাটি হয়ে উঠেছে অন্যতম ক্যানভাস, যে পাটিতে শুতেন কল্পনা চাকমা। যে আগুন দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল পাহাড়ি বাড়িগুলো, লেজার বিম দিয়ে আঁকা ছবির মাধ্যমে সেই আগুনই যেন ফিরে এসেছে, মিশে গেছে বিপ্লবীর প্রতিচ্ছবির মাঝে। কাপ্তাই লেকের আশপাশে গড়ে ওঠা জনবসতির এক অদ্ভুত ছবি, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অস্থিরতা, কল্পনা চাকমার মিটিংকক্ষের দৈনন্দিন জিনিসপত্র, তাঁর সহযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকারের ভিডিও—এ সবকিছুই রয়েছে প্রদর্শনীতে।

এ আয়োজনে যাঁদের শ্রমঘামমাখা গবেষণা রয়েছে, তাঁরা হলেন নৃবিজ্ঞানী ও সমাজকর্মী সায়দিয়া গুলরুখ, লেখক রেহনুমা আহমেদ এবং আলোকচিত্রী সাদিয়া মরিয়ম। কল্পনা চাকমা স্মরণে শহীদুল আলমের এটি তৃতীয় প্রদর্শনী। এটি দৃকের ‘আর নয়’ ক্যাম্পেইনেরও একটি অংশ।

প্রদর্শনীটি ১৭ জুন পর্যন্ত চলবে। আর প্রদর্শনী খোলা থাকবে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।