নবম পর্ব
রবির জীবনে মৃত্যুশোক
সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথের দাদা দ্বিজেন্দ্রলাল ঠাকুরের ছেলে। ‘সাধনা’ পত্রিকার সম্পাদক।
মৃত্যু : ৮ নভেম্বর ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে।
সুধীন্দ্রনাথের মৃত্যুসংবাদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য ছোট মেয়ে মীরা দেবীকে ৮ নভেম্বর ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ লেখা এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ বলেন :
‘আজ সকালে হঠাৎ সুধীর মৃত্যু হয়েচে। কার্সিয়াং থেকে বোধ হয় ইনফ্লুয়েঞ্জা ও তার পরে ন্যুমোনিয়ায় ওকে আক্রমণ করেছিল। হাঁপানি খুব হয়েছিল আমার কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে সেটা একেবারে সেরে যায়। আমরা কেউ খবরই পাইনি যে ওর কোনো সাংঘাতিক ব্যামো হয়েচে। ইদানীং রমাদের উপদ্রবে এবং সৌম্যের জন্যে উদ্বেগ ও বড়ো বিপন্ন ছিল, তার উপরে অসুখের পীড়ন ক্ষীণশরীরে সইতে পারেনি।’
একই দিনে (৮ নভেম্বর ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ) রবীন্দ্রনাথ ইন্দিরা দেবীকে লিখেছেন : ‘আজ সকালে সুধী-র হঠাৎ মৃত্যু হয়েচে।... তিন দিন আগে খুব হাঁপানিতে কষ্ট পাচ্ছিল। আমার কাছ থেকে ওষুধ খেয়ে সেটা সেরে যায়। তার পরেই আজ হঠাৎ এই বিপদ।’
নীতীন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় (নীতু)
মীরা দেবীর ছেলে। রবীন্দ্রনাথের একমাত্র নাতি।
মৃত্যু : ২২ শ্রাবণ ১৩৩৯ বঙ্গাব্দ, ৭ আগস্ট১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ। জার্মানিতে।
যেদিন নীতুর মৃত্যু হলো, তার পরের দিন এ মৃত্যুসংবাদ পৌঁছে রবীন্দ্রনাথের কাছে। তখন তিনি বরাহনগরে প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এ শোকের সময় কবি কেমন ছিলেন সে প্রসঙ্গে প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় লেখেন : ‘সেইদিন (নীতুর মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার দিন) ‘মাতা’ (বীথিকা) কবিতাটি লিখিলেন। নারীহৃদয়ের বাৎসল্যকে কবি ভাষা দিয়াছেন অপরূপ ভঙ্গিতে। কিন্তু মনের গহনে চলিতেছে ছবি ও গল্পের প্রবাহ, লিখিলেন ‘সহযাত্রী’ (১ ভাদ্র ১৩৩৯ বঙ্গাব্দ)। শান্তিনিকেতনে ফিরিবার কয়েকদিন পর ‘বিশ্বশোক’ (১১ ভাদ্র [১৩৩৯ বঙ্গাব্দ]। পুনশ্চ)।’ গদ্যকবিতায় লেখেন:
‘দুঃখের দিনে লেখনীকে বলি,
লজ্জা দিয়ো না।
সকলের নয় যে আঘাত
ধোরো না সবার চোখে।
ঢেকো না মুখ অন্ধকারে,
রেখো না দ্বারে আগল দিয়ে।
জ্বালো সকল রঙের উজ্জ্বল বাতি,
কৃপণ হোয়ো না।’
৬ আগস্ট ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ‘দুর্ভাগিনী’ নামে একটি কবিতা লেখেন। সেই কবিতায় নিজ সন্তানের মৃত্যুবেদনা প্রকাশ কেমন গভীর হতে পারে তা ব্যক্ত হয়েছে। কবিতাটির অংশবিশেষ এ রকম:
‘তোমার সম্মুখে এসে, দুর্ভাগিনী, দাঁড়াই যখন
নত হয় মন।
যেন ভয় লাগে
প্রলয়ের আরম্ভেতে স্তব্ধতার আগে।
এ কী দুঃখভার,
কী বিপুল বিষাদের স্তম্ভিত নীরন্ধ্র অন্ধকার
ব্যাপ্ত করে আছে তব সমস্ত জগৎ,
তব ভূত ভবিষ্যৎ!
সব সান্ত্বনার শেষে সব পথ একেবারে
মিলেছে শূন্যের অন্ধকারে;
ফিরিছ বিশ্রামহারা ঘুরে ঘুরে,
খুঁজিছ কাছের বিশ্ব মুহূর্তে যা চলে গেল দূরে;
খুঁজিছ বুকের ধন, সে আর তো নেই,
বুকের পাথর হল মুহূর্তেই।
চিরচেনা ছিল চোখে চোখে,
অকস্মাৎ মিলালো অপরিচিত লোকে।
দেবতা যেখানে ছিল সেথা জ্বালাইতে গেলে ধূপ,
সেখানে বিদ্রূপ।
সর্বশূন্যতার ধারে
জীবনের পোড়ো ঘরে অবরুদ্ধ দ্বারে
দাও নাড়া;
ভিতরে কে দিবে সাড়া?
মূর্ছাতুর আঁধারের উঠিছে নিশ্বাস।
ভাঙা বিশ্বে পড়ে আছে ভেঙে-পড়া বিপুল বিশ্বাস।
তার কাছে নত হয় শির
চরম বেদনাশৈলে ঊর্ধ্বচূড়া যাহার মন্দির।’
প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র নীতিন্দ্রনাথের মৃত্যুতে মীরা দেবীকে সান্ত্বনা দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ১২ ভাদ্র ১৩৩৯ বঙ্গাব্দ ২৮ আগস্ট ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ রবিবার একটি চিঠি লেখেন। সে চিঠিতে তিনি নিজের পুত্রের মৃত্যুশোকের আঘাতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে লেখেন :
‘... শমী যে রাত্রে গেল তার পরে রাত্রে রেলে আসতে আসতে দেখলুম জ্যোৎস্নায় [রাখীপূর্ণিমা] আকাশ ভেসে যাচ্চে, কোথাও কিছু কম পড়েছে তার লক্ষণ নেই। মন বললে কম পড়েনি, সমস্তর মধ্যে সবই রয়ে গেছে, আমিও তারি মধ্যে। সমস্তর জন্যে আমার কাজও বাকি রইল। যতদিন আছি সেই কাজের ধারা চলতে থাকবে। সাহস যেন থাকে, অবসাদ যেন না আসে, কোনোখানে কোনো সূত্র যেন ছিন্ন হয়ে না যায়, যা ঘটেচে তাকে যেন সহজে স্বীকার করি, যা কিছু রয়ে গেল তাকেও যেন সম্পূর্ণ সহজ মনে স্বীকার করতে ত্রুটি না ঘটে।’
আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু
বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
মৃত্যু : ২৩ নভেম্বর ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ।
জগদীশচন্দ্র বসুর মৃত্যু প্রসঙ্গে প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন :
‘... ইতিমধ্যে সংবাদ আসিল গিরিধিতে স্যার জগদীশচন্দ্রের হঠাৎ মৃত্যু হইয়াছে। রবীন্দ্রনাথের সহিত জগদীশচন্দ্রের নিবিড় যোগ এককালে ছিল। ক্রমে কালের ব্যবধানে, কর্মক্ষেত্রের বিভিন্নতা হেতু দুইজনের মধ্যে পূর্বের সে নিবিড়বন্ধন শিথিল হইয়া যায়; তৎসত্ত্বেও পরস্পর পরস্পরকে গভীর শ্রদ্ধা করিতেন।’ জগদীশচন্দ্রের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে রবীন্দ্রনাথ যে শোক বার্তা লিখে পাঠালেন, তার এক জায়গায় বলেন: ‘তরুণ বয়সে জগদীশচন্দ্র যখন কীর্তির দুর্গম পথে সংসারে অপরিচিতরূপে প্রথম যাত্রা আরম্ভ করিলেন... সেই সময়ে আমি তাঁর ভাবী সাফল্যের প্রতি নিঃসংশয় শ্রদ্ধাদৃষ্টি রেখে বারে বারে গদ্যে পদ্যে তাঁকে যেমন করে অভিনন্দন জানিয়েছি, জয়লাভের পূর্বেই তাঁর জয়ধ্বনি ঘোষণা করেছি, আজ চিরবিচ্ছেদের দিনে তেমন প্রবল কণ্ঠে তাঁকে সম্মান নিবেদন করতে পারি সে শক্তি আমার নেই। আর কিছুদিন আগেই অজানা লোকে আমার ডাক পড়েছিল। ফিরে এসেছি। কিন্তু সেখানকার কুহেলিকা এখনও আমার শরীর মনকে ঘিরে রয়েছে। মনে হচ্ছে আমাকে তিনি তাঁর অন্তিমপথের আসন্ন অনুবর্তন নির্দেশ করে গেছেন।’
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক।
মৃত্যু : ২ মাঘ ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ, ১৬ জানুয়ারি ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ।
শরৎচন্দ্রের মৃত্যু প্রসঙ্গে প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘শরৎচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে অনেক অলীক কথা মুখে মুখে সাহিত্যিক ও অসাহিত্যিক সমাজে চালু ছিল বরাবরই। নরেন্দ্র দেব ‘সাহিত্যাচার্য্য শরৎচন্দ্র’ নামক গ্রন্থে প্রবাসীর সম্পাদক, রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্র সম্বন্ধে কতকগুলি সংবাদ সরবরাহ করেন। এতদসম্পর্কে শ্রীনিকেতনে থাকিতে কবি রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের নিকট হইতে এক পত্র পান। তদুত্তরে তিনি (৯ জুলাই ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ) লিখিতেছেন, ‘গল্প প্রকাশ করা নিয়ে শরৎচন্দ্রের সঙ্গে প্রবাসীর দ্বন্দ্ব ঘটেছিল সেই জনশ্রুতির উল্লেখ এই প্রথম আপনার পত্রে জানতে পারলুম। ব্যাপারটা যে সময়কার তখন শরতের সঙ্গে আমার আলাপ ছিল না। অনেক অমূলক খবরের মূল উৎপত্তি আমাকে নিয়ে, এও তার মধ্যে একটি। এই জন্মে মরতে আমার সংকোচ হয় তখন বাঁধভাঙা বন্যার মতো ঘোলা গুজবের স্রোত প্রবেশ করবে আমার জীবনীতে, আটকাবে কে?’... শরৎচন্দ্র সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের প্রায় সমসাময়িক আর একটি পত্র পাই। ২০ চৈত্র ১৩৪৪ ‘যুগান্তরে’ প্রবোধচন্দ্র সান্যালকে লিখিত রবীন্দ্রনাথের একটি পত্র প্রকাশিত হয়। পত্রখানির শেষ অনুচ্ছেদে আছে, ‘কোনো কোনো মানুষ আছে প্রত্যেক পরিচয়ের চেয়ে পরোক্ষ পরিচয়েই যারা বেশি সুগম। শুনেছি শরৎ সে জাতের লোক ছিলেন না। তাঁর কাছে গেলে তাঁকে কাছে পাওয়া যেত। তাই আমার ক্ষতি রয়ে গেল। তবু তাঁর সঙ্গে আমার দেখাশোনা কথাবার্তা হয় নি যে তা নয়, কিন্তু পরিচয় ঘটতে পারলে না। শুধু দেখাশোনা নয়, যদি চেনা-শোনা হোত তবে ভালো হোত। সমসাময়িকতার সুযোগটা সার্থক হোত। হয় নি, কিন্তু সেই সময়টাতেই বিস্মিত আনন্দে দূরের থেকে আমি পড়ে নিয়েছি তাঁর বিন্দুর ছেলে, বিরাজ বৌ, রামের সুমতি, বড়োদিদি। মনে হয়েছে কাছের মানুষ পাওয়া গেল। মানুষকে ভালোবাসার পক্ষে এই যথেষ্ট।’’
রবীন্দ্রনাথ শরৎচন্দ্রের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে তাঁর বেদনা প্রকাশ করেন:
‘যাহার অমর স্থান প্রেমের আসনে,
ক্ষতি তার ক্ষতি নয় মৃত্যুর শাসনে।
দেশের মাটির থেকে নিল যারে হরি’,
দেশের হৃদয় তারে রাখিয়াছে ‘বরি’।’
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ও ব্যঙ্গচিত্রী। রবীন্দ্রনাথের ভাই গুণেন্দ্রনাথের বড় ছেলে।
মৃত্যু : ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ।
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে চিত্রকর, চিত্রবিশেষজ্ঞ এবং একজন জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন। কুষ্টিয়াতে বয়নবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথের প্রধান সহায়ক ছিলেন তিনি ও সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯০৫ সালে তিনি ও তাঁর ভাই অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ চিত্রশিল্পী হ্যাভেল, নিবেদিতা, উডরফ মিলে কলকাতায় স্থাপন করেন Indian Art Society। মৃত্যুর পূর্বে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর বাকশক্তিহীন হয়ে পড়েন।
তাঁর মৃত্যুসংবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অত্যন্ত মর্মাহত হন এবং রচনা করেন একটি কবিতা। ‘সেঁজুতি’ কাব্যগ্রন্থে ‘গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর’ শিরোনামে সে কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত হয়। সে কবিতার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পায় স্নেহের এ মানুষকে হারানোর বেদনা।
গগনেন্দ্রনাথ
রেখার রঙের তীর হতে তীরে
ফিরেছিল তব মন,
রূপের গভীরে হয়েছিল নিমগন।
গেল চলি তব জীবনের তরী
রেখার সীমার পার
অরূপ ছবির রহস্যমাঝে
অমল শুভ্রতার।
মৌলনা জিয়াউদ্দীন
ইসলামীয় সংস্কৃতির অধ্যাপক, বিশ্বভারতী।
মৃত্যু : ১৩৪৫ বঙ্গাব্দ, ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ।
মৌলনা জিয়াউদ্দীন ছিলেন বিশ্বভারতীর বিদ্যাভবনের ইসলামীয় সংস্কৃতির অধ্যাপক। তাঁর অকালমৃত্যুতে শান্তিনিকেতনে যে শোকসভার আয়োজন করা হয়, সেখানে রবীন্দ্রনাথ একটি ভাষণ প্রদান করেন। সেই ভাষণে রবীন্দ্রনাথ বলেন:
‘আজকের দিনে একটা কোনো অনুষ্ঠানের সাহায্যে জিয়াউদ্দীনের অকস্মাৎ মৃত্যুতে আশ্রমবাসীদের কাছে বেদনা প্রকাশ করব, এ কথা ভাবতেও আমার কুণ্ঠাবোধ হচ্ছে। যে অনুভূতি নিয়ে আমরা একত্রিত হয়েছি তার মূলকথা কেবল কর্তব্যপালন নয়, এ অনুভূতি আরো অনেক গভীর।
জিয়াউদ্দীনের মৃত্যুতে যে স্থান শূন্য হল তা পূরণ করা সহজ হবে না, কারণ তিনি সত্য ছিলেন। অনেকেই তো সংসারের পথে যাত্রা করে, কিন্তু মৃত্যুর পরে চিহ্ন রেখে যায় এমন লোক খুব কমই মেলে। অধিকাংশ লোক লঘুভাবে ভেসে যায় হালকা মেঘের মতো। জিয়াউদ্দীন সম্বন্ধে সে কথা বলা চলে না; আমাদের হৃদয়ের মধ্যে তিনি যে স্থান পেয়েছেন তা নিশ্চিহ্ন হয়ে একদিন একেবারে বিলীন হয়ে যাবে এ কথা ভাবতে পারি নে। কারণ, তাঁর সত্তা ছিল সত্যের উপর সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। আশ্রম থেকে বাইরে গিয়েছিলেন তিনি ছুটিতে, তাঁর এই ছুটিই যে শেষ ছুটি হবে অদৃষ্টের এই নিষ্ঠুর লীলা মন মেনে নিতে চায় না। তিনি আজ পৃথিবীতে নেই সত্য, কিন্তু তাঁর সত্তা ওতপ্রোতভাবে আশ্রমের সব-কিছুর সঙ্গে মিশে রইল।
...
আমার নিজের দিক থেকে কেবল এই কথাই বলতে পারি যে, এরকম বন্ধু দুর্লভ। এই বন্ধুতের অঙ্কুর একদিন বিরাট মহীরুহ হয়ে তার সুশীতল ছায়ায় আমায় শান্তি দিয়েছে, এ আমার জীবনের একটা চিরস্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকল। অন্তরে তাঁর সন্নিধির উপলব্ধি থাকবে, বাইরের কথায় সে গভীর অনুভূতি প্রকাশ করা যাবে না।’
এই ভাষণটি ১৩৪৫ বঙ্গাব্দের ‘প্রবাসী’ পত্রিকার শ্রাবণ সংখ্যায় মুদ্রিত হয়।
প্রিয় এই মানুষটিকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ একটি কবিতা লিখেন :
‘কখনো কখনো কোনো অবসরে
নিকটে দাঁড়াতে এসে;
‘এই যে’ বলেই তাকাতেম মুখে,
‘বোসো’ বলিতাম হেসে।
দু-চারটে হত সামান্য কথা,
ঘরের প্রশ্ন কিছু,
গভীর হৃদয় নীরবে রহিত
হাসি-তামাশার পিছু।
কত সে গভীর প্রেম সুনিবিড়,
অকথিত কত বাণী,
চিরকাল-তরে গিয়েছ যখন
আজিকে সে কথা জানি।
........
ভরা আষাঢ়ের যে মালতীগুলি
আনন্দমহিমায়
আপনার দান নিঃশেষ করি
ধুলায় মিলায়ে যায়,
আকাশে আকাশে বাতাসে তাহারা
আমাদের চারি পাশে
তোমার বিরহ ছড়ায়ে চলেছে
সৌরভনিশ্বাসে।’
(চলবে)