অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার

এত মানুষ ভালোবাসে আগে বুঝিনি: হুমায়ূন আহমেদ

Looks like you've blocked notifications!

বাংলা সাহিত্যের সম্রাট হুমায়ূন আহমেদকে ঘিরে কৌতূহলের শেষ নেই। এখনো তাঁর অনেক পাঠক বিশ্বাস করতে চান না তিনি বেঁচে নেই। আমাদেরও কখনো কখনো তাই মনে হয়। বেঁচে আছেন হুমায়ূন আহমেদ। আমাদের চারপাশে আছেন তিনি। বিশেষ করে তাঁর লেখা যেকোনো একটি উপন্যাস পড়লেই মনে হবে তিনি ধারেকাছে বসে দেখছেন সবকিছু। চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিউইয়র্ক থেকে মাত্র ২০ দিনের জন্য দেশে এসেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ, তখন ২০১২ সাল। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হুমায়ূন আহমেদের দেশে ফেরার অনুভূতি সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন সামসুদ্দোহা পান্না। সেই দিন খুব বেশি কথা বলেননি তিনি। পরেরদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে পৌঁছান পান্না। সকাল থেকে রাত, কয়েক দফায় এই সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সেখান থেকেই কিছু চুম্বক অংশ এখানে দেওয়া হলো। 

প্রশ্ন : দেশে এসে আপনার কেমন লাগছে?

উত্তর : তুমি যদি দীর্ঘ এক বছর দেশের বাইরে থাকো এবং পরে দেশে ফেরো তখন তোমার চোখে পানি চলে আসবে। প্লেন ল্যান্ড করার আগমুহূর্তে সবাই যখন সিটবেল্ট পরে, তখন আমার চোখে পানি চলে আসে। সত্যিকার অর্থে এটি দেশে ফেরা না। ২০-২৫ দিনের জন্য এসেছি। আবার ফিরে যেতে হবে। যখন পুরোপুরি ফিরতে পারব, তখন অনেক ভালো লাগবে।

প্রশ্ন : আপনি লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন? কোন ধরনের লেখা লিখছেন?

উত্তর : লেখালেখি চালিয়ে যেতে হবে। লেখালেখি ছাড়া বাঁচতে পারব না। একটা প্রবলেম হচ্ছে আমার হাতে নিউরোপ্যাথি প্রবলেম। হাত শক্ত হয়ে যায়, পায়ের চামড়া শক্ত হয়ে যায়, পা নাড়াতে পারি না। এ একটা প্রবলেম। তেমন কোনো ওষুধ নাই। তবে চায়নিজ একটা ওষুধ আছে, নাম ফুটো। বলা হয়ে থাকে আঙুল ফুটো। তবে এ আঙুল ফুটানোর মধ্যে আমি নাই। এই নিউরোপ্যাথি নিয়ে আমি লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছি। নানাবিধ কারণে লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছি, যদি আর না লিখতে পারি, দূরের জার্নি হলেও আমি তৈরি আছি।

প্রশ্ন : হ্যাট সম্পর্কে জানতে চাই। 

উত্তর : আমি তো হ্যাট পরি না। যত দিন পর্যন্ত শরীরে ক্যানসার থাকবে, তত দিন পর্যন্ত শরীরে হ্যাট থাকবে। যেদিন ডাক্তার বলবে আপনি ক্যানসারমুক্ত, সেদিন হ্যাট থাকবে না। এটা একটা ফান, শখ, খেলা মনে হতে পারে। যখন দেখবে মাথায় হ্যাট, তখন ক্যানসার নিয়ে ঘুরছি। হ্যাট নাই ক্যানসার নাই। 

প্রশ্ন : আপনার তৈরি বিভিন্ন চরিত্র আছে, তারা আপনার কাছে আসে, জানতে চায়, কথা বলে এ সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।

উত্তর : প্রিয় চরিত্রগুলো নিয়ে চিন্তা করতে ভালো লাগে। তারা তো আসে না। আমি আনাই। মাঝে মাঝে তারা আসে স্বপ্নে, মাঝে মাঝে বাস্তবে দেখা যায়। 

প্রশ্ন : আপনার অসুস্থতার মধ্যে আপনার তৈরি করা কোনো চরিত্রের সঙ্গে কি কথা হয়েছে?

উত্তর : আমার অসুস্থতার মধ্যে মিসির আলী চরিত্রটি এসেছে। মিসির আলীও আমার মতো। ও বলে ৬২ বছর বাঁচলেন আর কত? এসব খোঁজখবর নেয়। মিসির আলী বিভিন্ন ক্রাইসিস থেকে উদ্ধার করে তবে অসুস্থতা ওর কোনো ক্রাইসিস নয়। ও সারাক্ষণ অসুস্থ থাকে।

প্রশ্ন : হিমুকে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? কোনো এক সময়ে হিমুকে নিউইয়র্কে দেখতে পাব কি?

উত্তর : ওকে নিয়ে নিউইয়র্কে ছেড়ে দিলে কেমন হয়? এটাই বুঝাচ্ছেন তো? কিন্তু প্রচণ্ড ঠান্ডায় নিউইয়র্কে হিমু হাঁটতে পারবে না। তা ছাড়া হিমু তো ভিসা পাবে না। কারণ ও খালি পায়ে থাকে। হিমুকে নিলে আমি সামারে নেব। কেননা, সামারে আমেরিকানরা আধা লেংটা হয়ে থাকে। জার্মানির ফ্রাংকফুর্টে বইমেলায় একবার হিমুকে পেয়েছিলাম। সে আমাকে এসে সালাম করল, বলল, স্যার আমি হিমু। তখন আমি বললাম তোমার হলুদ পাঞ্জাবি কই? তখন সে জ্যাকেট খুলে দেখাল। হিমুকে নিয়ে মাজেদা খালার ওখানে উঠব। 

প্রশ্ন : সাধারণ মানুষের জন্য আপনি কাজ করতে চান, যেমন ক্যানসার হাসপাতাল করতে চান, এ সম্পর্কে কিছু বলুন।

উত্তর : লেখার টানে এসব চলে আসে। হঠাৎ করে লেখার টানে এসব চলে আসে। যেদিন এ-সংক্রান্ত লেখা প্রকাশ হলো তখন অবিশ্বাস্যভাবে সাড়া পেলাম। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের। ক্যানসার হাসপাতাল করলে দেশের সব মানুষকে নিয়ে করব। আমার নিজের এত টাকা নাই। যা ছিল সব চিকিৎসা করে ফেলেছি। সব মানুষ যদি এক টাকা করে দেয়, তাহলে তো ষোল কোটি টাকা।

প্রশ্ন : আপনার সাম্প্রতিক লেখালেখি নিয়ে কিছু বলুন।

উত্তর : এখন দেয়াল লিখছি। পাগলা ঘণ্টা বাজতে থাকল। তারপর মারা গেলেন খালেদ মোশাররফ, এরপর কর্ণেল তাহের। মাঝখানে জাতীয় চার নেতা। এরপর জিয়া মারা গেলেন। মূলত জিয়া পর্যন্ত আসছি।

প্রশ্ন : কী বই পড়ছেন এখন?

উত্তর : আপনি প্রতিদিন যদি একটি করে বই পড়েন, তাহলে বছরে ৩৬৫টি বই পড়বেন। ১০ বছরে ৩৬৫০টি বই পড়তে পারবেন। আমাদের একটা ভুল ধারণা আছে। এক জীবনে আমরা প্রচুর বই পড়তে পারব। কেউ যদি ১০ হাজার বই পড়ে, তাহলে সে অনেক বই পড়েছে। আপনি যদি বাজারে যান তাহলে চাল কিনবেন। কিন্তু আপনার যে বই পছন্দ না, সে বই ফ্রি দিলেও কিনবেন না।

প্রশ্ন : দেয়াল উপন্যাসের পর কী নিয়ে লিখবেন, ভেবেছেন কিছু?

উত্তর : এখন কিছু ভাবছি না। আপনি যদি ভয়াবহ ব্যাধিতে পড়েন, তখন আপনার চিন্তাশক্তি সীমিত হয়ে যাবে। তখন আপনি এক-একটা করে এগোবেন।

প্রশ্ন : আপনার সুস্থতা যাঁরা কামনা করেছেন, তাঁদের সম্পর্কে কিছু বলবেন?

উত্তর : এত মানুষ ভালোবাসে এটা আমি আগে বুঝতাম না। এখন বুঝি। কেউ তাঁর জীবনের বিনিময়ে আমার প্রাণ বাঁচাতে চেয়েছেন। আবার কেউ একটা বছর আমাকে দিয়ে দিতে চেয়েছেন। আমি দেশে ফিরেছি মূলত ভক্তদের শুভকামনার জন্য। তবে চান্দের যেমন কলঙ্ক আছে, তেমনি শুভকামনার মধ্যে অশুভকামনাও থাকে। যেমন একজন ভক্ত লিখেছে, উচিত শিক্ষা হয়েছে।

প্রশ্ন : এখন আপনার সময় কেমন কাটে?

উত্তর : ইন্টারনেটে বসে। হাঁটাহাঁটি করে, আপনাদের সাথে কথা বলে, গাছের সাথে কথা বলে।

প্রশ্ন : আপনি বলছিলেন প্রকৃতির সাথে কথা বলবেন, কীভাবে বলবেন?

উত্তর: আমি যখন এখানে আসি, তখন গাছগুলো একসাথে হাসি দেয়। আমি গাছগুলোর কাছে যাই, আমি আমার গুডউইশ তাদের দেই। তারা তাদের গুডউইশ দেয়। মূলত আমার কথা তারা বোঝে না, তাদের কথাও আমি বুঝি না। এটা মানসিক ব্যাপার। তবে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু থাকলে তিনি একটা সূত্র আবিষ্কার করতেন। অনেক গাছের মাঝে ছোট একটা গাছ আছে তখন ছোট গাছকে বলি কিরে ব্যাটা তুই গিট্টু মেরে বসে আছিস কেন? তোরে কি কেউ পানি দেয় না? এভাবে কথা হয় প্রকৃতির সাথে।

প্রশ্ন : দেশ নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

উত্তর : যে দেশে বড় হয়েছি, যে দেশে মুক্তিযুদ্ধ যুবকের চোখে দেখেছি, সে দেশ আমার চোখে অনেক বড়। আমি তো পড়াশোনা শেষ করে অনায়াসে আমেরিকায় থেকে যেতে পারতাম। কিন্তু রাইট নাউ আমি দেশে ফিরে এসেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্প বেতনে চাকরি নিয়েছি। সে সময় সংসার চালানো অনেক কঠিন কাজ ছিল। লেখালেখি দিয়ে পয়সা তো অনেক পরে এসেছে। এ দেশে জন্মগ্রহণ করেছি, এ দেশেই মৃত্যু হবে, এটাই আমি মনে করি।

আমি খুব আশাবাদী মানুষ। আমি মনে করি বাংলাদেশ খুবই উন্নতি করবে। আগে খাবারের জন্য, কাপড়ের জন্য চিন্তা করা লাগত। ১৯৮৪ ও ১৯৯৪ সালে গম বাইরে থেকে আনা লাগত। কিন্তু এখন এগুলো বাইরে রপ্তানি করা হচ্ছে।

এখন পুকুরে মাছ, মাছ চাষ হচ্ছে। ইয়াং ছেলেরা আগে চাকরি হন্নে হয়ে খুঁজত। কিন্তু তারা এখন চাকরির বাইরে কিছু করা যায় কি না এটা ভাবছে। এটা তাদের মাথার ভেতর ঢুকেছে। আগে একটা-দুইটা করে গাছ মানুষ লাগাত। এখন ঢাকা শহরজুড়ে নার্সারি। আমাদের দৃষ্টি, চিন্তাভাবনা প্রসারিত হচ্ছে। লোকজন শিক্ষিত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ শিক্ষিত হচ্ছে। যখন প্রতিটি মানুষ শিক্ষিত হয়ে যাবে, তখন কী অবস্থা হবে আপনি চিন্তা করতে পারবেন না।

বীজতলা চেনেন? এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় এ বীজ লাগায়। বাংলাদেশ হচ্ছে মানুষের বীজতলা। আপনি যদি নিউইয়র্ক যান, অবাক হয়ে যাবেন। অসংখ্য বাঙালি সেখানে গিজগিজ করছে। তারা এ দেশ থেকে আত্মীয়স্বজন নিয়ে গিয়ে ওখানে বাংলা কমিউনিটি গড়ে তুলেছে। আমেরিকার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল বেলভিউ। সেখানে প্রথমে ইংরেজিতে লেখা, তারপর বাংলা, তারপর স্প্যানিশ। এটি একটি ম্যাসিভ এচিভমেন্ট। আমেরিকায় দুই ধরনের মানুষ আছে। যারা ব্লু কালার জব করে তারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর। এরা দেশে টাকা পাঠায় না বরং দেশ থেকে টাকা নিয়ে যায়। আরেক শ্রেণীর মানুষ, গরিব মানুষ, যারা দেশে টাকা পাঠায়। তারা যখন দেশে আসে, তখন এয়ারপোর্টে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়। তারা আমাকে বলেছে। প্রবাসে বাঙালিরা মেলা করে এটা দেশের প্রতি তাদের একটা ভালোবাসার নিদর্শন।

প্রশ্ন : আমাদের মতো তরুণদের প্রতি আপনার উপদেশ কী?

উত্তর : আমাদের কুরআন শরিফে একটা লাইন আছে, আল্লাহ কোরআন শরিফে বলেছেন, আমি মানুষকে তৈরি করেছি সর্বশ্রেষ্ঠ ফর্মে। সে যখন বদলায় আমি তখন বদলে দেই। তুমি একটা শিশু, যখন জন্মাও তখন তাকে পিওরেস্ট কোয়ালিটি দেওয়া হয়, কিন্তু সে নিজে কোয়ালিটি নষ্ট করে। আপনাদের প্রতি অনুরোধ আপনারা কোয়ালিটি নষ্ট করবেন না। বার্মা থেকে টন টন ইয়াবা আসছে, এগুলো বন্ধ হওয়া উচিত, ফেনসিডিল বন্ধ হওয়া উচিত। দারিদ্র্য ভয়াবহ জিনিস, এটি সব কোয়ালিটি নষ্ট করে। তাই দারিদ্র্য যেন তরুণদের না ছোঁয়। সব ধরনের ড্রাগ থেকে তরুণদের দূরে থাকতে হবে। সিগারেট থেকে দূরে থাকতে হবে। একটা গল্প শোনেন-

একবার সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে উঠলাম, দেখি সেখানে সিগারেট খাওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু আমি বললাম আমার সিগারেট খেতে দিতে হবে। আমি জরিমানা দেব। আমাকে সিগারেট খাওয়া শেষ করতে দিতে হবে। আমাকে প্লেন থেকে তো আটলান্টিকে ফেলে দিতে পারবে না।

প্রশ্ন : ক্যানসারের কি নিরাময় সম্ভব বলে আপনি মনে করেন? 

উত্তর : আমার একটা অভিযোগ আছে, ক্যানসারের ওষুধ যদি বাজারে ছাড়া হয় তাহলে বড় বড় হাসপাতাল, বড় ডাক্তার ওরা কই যাবে। এত বড় কেমোথেরাপি এগুলো কই যাবে। যদি ১৫ লাখ টাকা দিয়ে একটা ওষুধ খায় কেউ, তাহলে তার সব রোগ ভালো হয়ে গেলে, ওষুধ কোম্পানিগুলো কই যাবে? ক্যানসার সম্পর্কে রিউমার ছড়াচ্ছে ওষুধ কোম্পানিগুলো। দে হ্যাভ নো অ্যানসার হোয়াট ইজ ক্যানসার।

প্রশ্ন : আপনার সম্পর্কে ডাক্তারদের ধারণা কী?

উত্তর : ওদের ধারণা আমি ইংরেজি টিংরেজি কিছু জানি, কিছু বুঝি না। আমি শুধু মাথা নাড়াই। আমাকে ভুল বোঝার কারণ আছে, কারণ ওকে (শাওন) দিয়ে প্রশ্ন করাই।

আমি ডাক্তারকে বললাম, এই বেটা তোর কাছে কিছুই নাই। তুই কী চিকিৎসা করবি? তখন ডাক্তার আমার দিকে তাকিয়ে থাকল, আমি ভাবলাম, বুঝে ফেলল নাকি! তখন সে বলল, তার গ্র্যান্ডফাদারের নারায়ণগঞ্জে পোস্টিং ছিল।
প্রশ্ন : ওখানে প্রেয়ারগ্রুপ সম্পর্কে কিছু যদি বলেন।

উত্তর : তারা জিজ্ঞেস করে তুমি মুসলিম, তুমি কি হিন্দু? তোমার জন্য কি প্রেয়ারের ব্যবস্থা করব? তখন আমি বললাম, প্রেয়ার কেন? চিকিৎসা হচ্ছে এটা মেডিকেল সায়েন্স। তখন তারা বলে, যাদের জন্য প্রেয়ারের ব্যবস্থা করা হয় তাদের সার্ভাইবেল রেট অনেক বেড়ে যায়। 

প্রশ্ন : আপনার আঁকা ছবি নিয়ে উৎসব হচ্ছে, সে বিষয়ে আপনি কিছু বলুন।

উত্তর : ছবি আমি অনেক আগে থেকেই আঁকতাম। আমি মূলত অয়েল কালারে আঁকি। ওয়াটার কালারে ভুল করলে শুদ্ধ করা যায় না। অয়েল কালারে ভুল করলে শুদ্ধ করা যায়। বাইরে ছবি আঁকছি কিন্তু ভালো হয় না। সাডেন ডে দেখলাম, কিছু ছবি ভালো হচ্ছে, তখন ২৪টি ছবি এঁকে ফেললাম। এগুলোর ফটোগ্রাফ আছে। এলে আপনারা দেখতে পারবেন।

প্রশ্ন : আপনি এ পর্যন্ত আনুমানিক কয়টা বই পড়েছেন? এখন কী বই পড়ছেন?

উত্তর : আমার পড়ার একটা সিস্টেম আছে। যখন যেটা ভালো লাগে সব পড়ে ফেলি। কাফকা ভালো লাগল। কাফকার সব পড়ে ফেললাম। জাপানি গল্প ভালো লাগল, সব পড়ে ফেললাম। জাপানি গল্পের অনেক বই নিয়ে এসেছি। এ মুহূর্তে কিছু পড়ছি না।

প্রশ্ন : বাইরে আপনার প্রিয় খাবার কী ছিল?

উত্তর : শুকনো মরিচ ও ডিম ভাজি।

প্রশ্ন : আমরা সাক্ষাৎকার শেষ করব। আপনি কি আরো কিছু বলবেন? কোনো চমৎকার গল্প? 

উত্তর : আমি যখন নর্থ ডাকাটো ইউনিভার্সিটিতে গেলাম, তখন আমাকে থাকতে দেওয়া হলো এভারগ্রিন নামের একটা হোটেলে। হোটেলটি ছিল এক ধনী লোকের। সে তার মৃত্যুর সময় হোটেলটি ইউনিভার্সিটিকে উইল করে দিয়ে যায়।

ইউনিভার্সিটি হোটেল দিয়ে কী করবে? তারা এটাকে একটা ডরমেটরি বানাল, আমি এটাতে থাকলাম। খাওয়ার জন্য পাশের একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম। প্রচণ্ড আলো ঝলমলে রেস্টুরেন্ট। প্রচণ্ড বরফ পড়ছে। আমি গিয়ে দেখলাম খাবারগুলো প্রচণ্ড এক্সপেনসিভ। সে জন্য খুঁজে খুঁজে চেনা ও সহজ খাবার বের করলাম। নাম হলো ফ্রেঞ্চ টোস্ট। এরপর সকাল দুপুর রাতে আমি ফ্রেঞ্চটোস্ট খাই। এভাবে সাত-আট দিন খাওয়ার পর আমি যখন টেবিলে বসি, তখন ওয়েটাররা আমার কাছে আসে না। তারা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। এরপর দুজন ওয়েটার সব মেন্যু নিয়ে আমার কাছে আসল এবং বসল, বলল, মানুষের জীবনে কিছু খারাপ সময় থাকে। তোমার খারাপ সময় যাচ্ছে। তাই আমাদের পক্ষ থেকে তোমাকে সব খাবার আজ ফ্রি দেওয়া হলো। তখন আমি প্রচণ্ড ইমোশনাল হয়ে গেলাম। আমার চোখে পানি চলে এলো। এটা আনন্দে নয়, আবেগে। এরপর থেকে আমি আর ওই রেস্টুরেন্টে যাইনি।