সাহিত্যে নোবেলজয়ী কাজুয়োর সাক্ষাৎকার

‘আসলেই কি আমি নোবেল পেয়েছি?’

Looks like you've blocked notifications!

কাজুয়ো ইশিগুরো ‘অ্যান আর্টিস্ট অব দ্য ফ্লোটিং ওয়ার্ল্ড’, ‘নেভার লেট মি গো’, ‘হোয়েন উই আর অরফানস’-এর মতো বিখ্যাত সাহিত্যকর্মের জনক। চিত্রনাট্য, ছোটগল্প এমনকি গানের কথাও লিখেছেন ২০১৭ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী এই লেখক। সম্প্রতি নোবেল প্রাইজের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে কাজুয়ো ইশিগুরোর সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন অ্যাডাম স্মিথ।

কাজুয়ো ইশিগুরো : মিস্টার স্মিথ কেমন আছেন আপনি?

অ্যাডাম স্মিথ : খুবই ভালো। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এত ব্যস্ততার মাঝেও পুনরায় আমার ফোন ধরার জন্য। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য আপনাকে অভিনন্দন। 

কাজুয়ো : হ্যাঁ, ধন্যবাদ। আমি দুঃখিত যে আপনাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। এখানকার বিশৃঙ্খল পরিবেশে আমি কিছুটা শঙ্কিত। হঠাৎ করেই অনেক গণমাধ্যমের ভিড় বেড়ে গেছে এবং তারা আমার বাসার সামনে ভিড় করে আছে।

স্মিথ : হ্যাঁ আমি তা আন্দাজ করতে পারছি। অপ্রত্যাশিতভাবে আপনার দিনটাই বদলে গেছে। খবরটা কীভাবে পেলেন?

কাজুয়ো : আমি রান্নাঘরে বসে আমার এক বন্ধুকে ই-মেইল পাঠাচ্ছিলাম এবং তখনই ফোনটা বেজে উঠেছে। এরপরই সবকিছুর শুরু। আমার লিটারারি এজেন্টরা গোটা ঘোষণা সরাসরি দেখেছেন। আমার মনে হয় তাঁরা আশা করেননি যে আমি নোবেল পাব। তাঁরা শুধু জানতে চেয়েছিলেন এই বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার কে পাচ্ছে। এবং এর পর থেকে আমি একের পর এক ফোন ধরে যাচ্ছি। প্রতিটা ফোনেই আমার মনে হয়েছে এটা আসলে একটা ধাপ্পা অথবা এটা একটি ভুল খবর অথবা আসলেই কি আমি নোবেল পেয়েছি? ধীরে ধীরে বিষয়টা আমার কাছে পরিষ্কার হতে থাকে। এরপর যখন বিবিসি আমাকে ফোন দেয়, তখন আমি বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিই। এটা অনেকটা মেরি সেলেস্ট [জাহাজের] মতো, এসব কিছু হওয়ার আগে, বেলা ১১টার আগে সবকিছু স্বাভাবিকই ছিল। এরপরই শুরু হলো তোলপাড়। এখন আমার রাস্তার সামনে লোকজন দাঁড়িয়ে আছেন আমার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য। 

স্মিথ : এমনটা কি চলতেই থাকবে?

কাজুয়ো : না না, আমার মনে হয় না এটা দীর্ঘ সময় ধরে চলবে। আমি বলতে চাইছি এটা অসম্ভব সম্মানের। অন্তত আমার চারপাশের পরিস্থিতি দেখে তাই মনে হচ্ছে। আমার মনে হয় নোবেল পুরস্কারের চেয়ে সম্মানের পুরস্কার আপনি আর কোথাও পাবেন না। সুইডিশ একাডেমি সফলভাবে অনেককেই এই সম্মানের অংশীদার করেছে এবং আমার মনে হয় দ্বন্দ্ব-কলহ এবং পক্ষপাতহীন রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে তাঁরা এটা করে যাবে। আমার মনে হয় এই পৃথিবীতে সম্মানিত হিসেবে যা কিছু বিশুদ্ধ আছে তাদের মধ্যে নোবেল পুরস্কার অন্যতম। এই পৃথিবীতে যার কাজই সবার দ্বারা সমাদৃত হয় তাকেই এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তাই সুইডিশ একাডেমির মাধ্যমে নোবেল পুরস্কারের মধ্যে অনেক সম্মান নিহিত রয়েছে। এবং এটি অন্য একটি কারণেও আমার জন্য অনেক সম্মানের, কারণ আমি যাদেরকে আমার জীবনের আদর্শ এবং নায়ক বলে মনে করেছি তাঁরাও এই পথে গিয়েছেন। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো বব ডিলানের মতো মানুষের পুরস্কার পাওয়ার এক বছর পর আমি পুরস্কার পেয়েছি। আমার বয়স যখন ১৩ বছর, তখন থেকেই তিনি আমার নায়ক। সম্ভবত তিনি আমার জীবনের সেরা নায়ক।   

স্মিথ: বব ডিলানের সঙ্গ পাওয়াটা দারুণ।

কাজুয়ো : হ্যাঁ। আমি বব ডিলানের নকল খুব ভালো করতে পারি। কিন্তু আপনাকে দেখানোর জন্য এখন তা করতে পারছি না।

স্মিথ : এটা খুবই দুঃখের বিষয়। দেখতে পারলে খুব ভালো লাগত। ডিসেম্বরে যখন স্টকহোমে আসবেন তখন দয়া করে অবশ্যই দেখাবেন। 

কাজুয়ো : হ্যাঁ। সেটা চেষ্টা করে দেখব।  

স্মিথ : না আপনাকে অবশ্যই দেখাতে হবে। আশা করি যুক্তরাজ্যে আপনার সময়টা দারুণ কাটছে। নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন বলে কি জায়গাটির অন্যরকম গুরুত্ব তৈরি হয়েছে আপনার কাছে?

কাজুয়ো : আমার মনে হয়, গুরুত্ব তৈরি হয়েছে। এমনকি আপনার ফোন তোলার আগে আমি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি লেখার চেষ্টা করছিলাম এবং আমি এই তিন লাইনে কী লিখব সেটাই ভাবছিলাম। আমি মনে করি সময়টা আমার জন্য প্রাসঙ্গিক কারণ আমার মনে হয়… আমার ৬৩ বছরের কাছাকাছি, আমি এমন কোনো সময় মনে করতে পারছি না, যে সময়ে এই পশ্চিমা দুনিয়ায় মূল্যবোধগুলো স্পষ্ট ছিল। আমার মনে হয় আমরা যে সময়টার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি সেখানে আমাদের মূল্যবোধগুলো এখনো অস্পষ্ট, আমাদের নেতৃত্বের মতো। জনগণ নিরাপদ বোধ করছে না। তাই আমার ইচ্ছা নোবেল পুরস্কারের কিছু টাকা এই পৃথিবীর কিছু ইতিবাচক কাজে ব্যয় করব; যা বর্তমান এই পৃথিবীর জন্য উপযুক্ত হবে।     

স্মিথ : আমার মনে হয় এই বিষয়টির ওপরেই আপনি সব সময় লিখে গেছেন। আমাদের একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক। আমাদের সঙ্গে পৃথিবীর সম্পর্ক। এটাই সেই বিষয় যা নিয়ে আপনি গবেষণা করে গেছেন। আপনার কী মনে হয়?

কাজুয়ো : হ্যাঁ। আমার মনে হয় আমি করেছি। একটা জিনিস আমাকে প্রায়ই আগ্রহী করে তোলে, একই সঙ্গে আমরা কীভাবে ছোট এবং বড় দুই পৃথিবীতেই বসবাস করছি। আমাদের নিজস্ব একটি জগৎ আছে, যেখানে আমরা পরিপূর্ণতা এবং ভালোবাসাকে খোঁজার চেষ্টা করি। একই সঙ্গে সেখানে বড় একটি জগৎ রয়েছে যেখানে রাজনীতি, বিশৃঙ্খল দুনিয়া, আপনার ওপর ছড়ি ঘোরাবে। যখন আপনি একটি দুনিয়ায় বিদ্যমান থাকেন তখন অপর দুনিয়াকে আপনি ভুলে যান।

স্মিথ : ধনবাদ। আমার মনে হয় আমরা এই ব্যাপারে অন্য একদিন কথা বলব।

কাজুয়ো : হ্যাঁ।  

স্মিথ : এই মুহূর্তে গণমাধ্যমকে সামলানোর জন্য কী কাজ করছেন আপনি? গণমাধ্যমের এই মহাপ্লাবন সম্পর্কে আপনার মতামত কী?

কাজুয়ো : আমি এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই নিচ্ছি। এটা এখন হয়তো বেসামাল মনে হচ্ছে কারণ আমি যখন ঘুম থেকে উঠি তখন আমার কোনো ধারণা ছিল না যে দিনটা আলাদা হবে। এটা আরেকটা সাধারণ দিনের মতো হতে পারত। আমি মনে করি সংবাদমাধ্যম আসলে দারুণ একটা জিনিস, তাঁরা নোবেল পুরস্কারকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। আমি ভয় পাই সে দিনের জন্য যখন কেউ একজন সাহিত্যে নোবেল জিতবে এবং কেউ সে ব্যাপারে কোনো গুরুত্ব দেবে না।  

স্মিথ : সাহিত্য দিয়েই একটি ভালো দিনের উদযাপন হোক।

কাজুয়ো : হ্যাঁ এবং আমি মনে করি সাহিত্য একটি দারুণ জিনিস। এটা মাঝে মাঝে আপনাকে খারাপের দিকেও ঠেলে দেবে। সাহিত্যের জন্য যেহেতু নোবেল পুরস্কার রয়েছে, তাই এটা যেন ভালো কাজের জন্য দেওয়া হয়।  

স্মিথ : অসাধারণ, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, ডিসেম্বরে স্টকহোমে আপনাকে স্বাগতম জানানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।

কাজুয়ো : হ্যাঁ আমিও সেটার জন্য অপেক্ষা করছি। আপনার সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগল মিস্টার স্মিথ।  

স্মিথ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

কাজুয়ো : নিজের খেয়াল রাখবেন। বিদায়।