রবীন্দ্রনাথ উপমহাদেশের সম্পদ : মঞ্জুলা বসু

Looks like you've blocked notifications!
অধ্যাপক মঞ্জুলা বসু। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম

অধ্যাপক মঞ্জুলা বসু, রবীন্দ্রচর্চার প্রচার ও প্রসারে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি  কলকাতা টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউটে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর অনেক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ‘সমাজ অর্থনীতি রবীন্দ্রনাথ’ তাঁর উল্লেখযোগ্য বই। টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকা ‘টেগোর ইন্টারন্যাশনাল’-এর সম্পাদক ছিলেন তিনি।

অধ্যাপক মঞ্জুলা বসুর জন্ম ১৯৩২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী ছিলেন তিনি। চাকরি জীবন শুরু করেছিলেন শান্তিনিকেতন বিশ্ব ভারতীতে। এরপর অধ্যাপনা করেছেন ত্রিপুরার আগরতলা ও বর্ধমানে।

গত ২৭ জানুয়ারি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কেন্দ্র করে সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র ও মননধর্মী সংগঠন ‘খামখেয়ালী সভা’-এর পক্ষ থেকে তাঁকে রবীন্দ্রগুণী সম্মাননা ২০১৮ দেওয়া হয়। এ উপলক্ষে বাংলাদেশে আসেন তিনি। সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা অডিটরিয়ামে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

আলাপচারিতায় উঠে আসে বাংলাদেশ ও কলকাতার রবীন্দ্রচর্চা, রবীন্দ্রনাথকে অন্য ভাষাভাসি মানুষের ভেতরে কীভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়- এসব বিষয়।

এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশে এসে কেমন লাগছে?

অধ্যাপক মঞ্জুলা বসু : বাংলাদেশে এসে খুব ভালো লাগছে। অন্য দেশ বলে মনে হচ্ছে না। নিজেদের মতোই সবার কাছে আদর পাচ্ছি। তা ছাড়া আমাদের ভাষাও এক। সেই জন্য আমরা সহজেই কাছে আসতে পারি।

এনটিভি অনলাইন :  বাংলাদেশে রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চার বিষয়টি এখন কেমন বলে মনে হয় আপনার?

মঞ্জুলা বসু : প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চর্চার চেষ্টা আগেও হয়েছে। রবীন্দ্রগুণী আহমেদ রফিক রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র চালিয়েছিলেন। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো বেশিদিন চালানো যায়নি। বাংলাদেশে অনেক রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ও অনুরাগী রয়েছেন। তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে কাজ করছেন।

আমরা কলকাতা টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে ড. সনজিদা খাতুন, আহমেদ রফিক, আনিসুজ্জামান এঁদের কজনকে রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মান রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য উপাধি দিয়েছি। আগামী সমাবর্তনে সৈয়দ আকরম হোসেনের নাম প্রস্তাব করা হচ্ছে। বাংলাদেশে ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই গভীরভাবে রবীন্দ্র চর্চা করছেন। আর এখানে তো অনেক উঁচু মানের গায়ক গায়িকা রয়েছেন।

এনটিভি অনলাইন : এবারের খামখেয়ালী সভার রবীন্দ্রগুণী সম্মাননা পাচ্ছেন। অনুভূতিটা কেমন?

মঞ্জুলা বসু : আমি খামখেয়ালি সভার কাছ থেকে যে সম্মান পাচ্ছি তাতে আপ্লুত বোধ করছি। এদের কাজকর্ম আমি যেটুকু দেখেছি তাতে মনে হয়েছে এরা যথেষ্ট সুসংগঠিত। আমি এদের সাফল্য ও স্থায়িত্ব কামনা করছি। 

এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশ ও কলকাতার- রবীন্দ্রচর্চাকে আরো বাড়ানোর জন্য করণীয় কী?

মঞ্জুলা বসু : আমরা এক সময় টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশের রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগে রবীন্দ্রচর্চার বার্ষিক আলোচনা চক্র চালাবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এই বিষয়ে বাংলাদেশে এবং কলকাতা টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউ উভয়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে। সেই উদ্যোগ অবশ্য নানা কারণে আর দীর্ঘকাল চালানো সম্ভব হয়নি। আমার মনে হয় উভয় দেশেই পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে রবীন্দ্রচর্চাকে আরো প্রসারিত করার দায়িত্ব আমাদের রয়েছে।

এনটিভি অনলাইন : কলকাতায় বাংলা ভাষার চর্চা কেমন হচ্ছে?

মঞ্জুলা বসু : পশ্চিমবঙ্গে এখন কিছু লোক ইংরেজির দিকে ঝোঁক দিচ্ছে। তবে এখনো এমন অনেক লোক রয়েছেন যাঁরা খুব সিরিয়াসলি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গবেষণা করেছেন। আর সাধারণভাবে হিন্দির ব্যবহার যে বাঙালির মাঝে খুব প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে তা কিন্তু নয়। বাঙালির দায়িত্ব হিন্দি ও অন্যান্য ভাষাভাষিদের মধ্যে অনুবাদের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথকে পৌঁছে দেওয়া। রবীন্দ্রনাথ যে শুধু প্রাদেশিক কবি তাই নন, তিনি এই উপমহাদেশের সম্পদ, এটাই প্রতিষ্ঠিত করা বাঙালির দায়িত্ব।

এনটিভি অনলাইন : পশ্চিম বঙ্গে রবীন্দ্রচর্চার বর্তমান অবস্থা কী রকম?

মঞ্জুলা বসু : ওপার বাংলায় আজকাল পাঠক্রমে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে রবীন্দ্রনাথকে আগে থেকে বেশি পড়া হয়। রবীন্দ্র সংগীত অনেকেই পেশাগতভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে চর্চা করে থাকে। আর আজকাল আবৃত্তি চর্চা পেশা হিসেবে যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে। সেখানেও রবীন্দ্রনাথ একটা বড় জায়গা অধিকার করে রয়েছেন।

এনটিভি অনলাইন : আপনাকে ধন্যবাদ।

মঞ্জুলা বসু : আপনাকেও ধন্যবাদ।