ধূসর রেখাবৃত্তি

মানবনির্মিত বস্তুর চিরচেনা অবয়ব

Looks like you've blocked notifications!

আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে শুরু হলো শিল্পী সোমা সুরভী জান্নাতের ‘ধূসর রেখাবৃত্তি’ শীর্ষক একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। গত শুক্রবার প্রদর্শনীর প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য এবং শিল্পী ও সমালোচক মোস্তফা জামান। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার পরিচালক ব্রুনো প্লাস অতিথিদের স্বাগত জানান এবং অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।  প্রদর্শনীতে সুরভীর প্রায় ১০০টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে।

‘ধূসর রেখাবৃত্তি’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে আমরা প্রত্যক্ষ করি এক শিল্পীর অভ্যুদয়, যার শিল্পকর্ম বিরাজ করে বাস্তব আর কল্পনার মাঝামাঝি। শিল্পী ও সমালোচক মোস্তফা জামান বলেন, “সোমা সুরভী জান্নাত কাজ করেন সেই পৃথিবী নিয়ে, বহুলাংশে যা দৃশ্যমান বাস্তব, প্রায়শই তবু প্রশস্ততা ও গভীরতায় অতলান্তিক দুরবগাহ এবসার্ডের জগৎ যেন, আবার কখনও কখনও যেন এক অপসৃয়মণন দিগন্ত— আমাদের যুক্তির ও বিচারবুদ্ধির বাইরে আর এক বাস্তব।”

অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, “প্রদর্শনীতে মানুষ, পশু এবং মানবনির্মিত বস্তুর চিরচেনা অবয়ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেন অপরিচিত আদলে। কারণ তাদের দেখা হয়েছে কল্পনার কাঁচের ভেতর দিয়ে। কার্যত তাদেরকে প্রতীকে রূপান্তরিত করা হয়েছে, এমনভাবে যেন, তাদের প্রকৃত গঠন ও  অবস্থান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। শিল্পী সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেছেন এমন এক পরিসর যেখানে দর্শকেরা এই পৃথিবী এবং তৈরি করা বিভিন্ন প্রতীকের মধ্যে আন্তঃসম্পর্কের বিষয়ে গভীরসঞ্চারী অনুভবের মধ্যে দিয়ে তাদের সার্বিক উপলব্ধি উন্নততর করে নিতে পারে।”

মনজুরুল ইসলাম আরো বলেন, “‘ধূসর রেখাবৃত্তি’ প্রধানত একগুচ্ছ আন্তঃসম্পর্কিত ড্রয়িং-এর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে, সম্মিলিতভাবে তারা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এক সাঁওতাল গ্রামে সোমা সুরভীর বসবাসের অভিজ্ঞতাকে রূপদান করে। কলমের হালকা আঁচড়ের রেখাচিত্রগুলো, হাতে তৈরি কাগজে ফুটে ওঠা বিষয়বস্তু এবং প্রাকৃতিক উপাদানের ওপর এক নতুনতর প্রেক্ষিতে আলোকসম্পাত করেছে।”

অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য বলেন, “একজন নিষ্ঠাবান সাধক হিসেবে সুরভী চেষ্টা করেন তাঁর প্রকৃতি সম্পর্কীয় অভিজ্ঞতাগুলোকে সঞ্চারিত করতে তার শৈল্পিক পরিসরে, যা তিনি নিয়ত সৃষ্টি করে চলেন। যে সময় ও পরিসরের তিনি নিজেই ছিলেন একটি অংশ, তার প্রচেষ্টা কেন্দ্রিভূত এখন সেই সময় ও পরিসরকে জালবন্দি করার কাজে— এ এক জটিল বুনন, যার ভেতর তিনি ‘পৃথিবীতে তার অস্তিত্বের’ বোধগম্যতা গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছিলেন। বাস্তবতার সাথে সরাসরি মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের তৈরি হয়ে ওঠা। এই কর্মপ্রক্রিয়া তার নিজস্ব অর্থ ও কার্যক্রম  সৃষ্টি করে নেয় এবং শিল্পীর কাছে  নিজের দাবিও তৈরি করে নেয় যখন তিনি, বহির্জগতের সব আপাত সম্পর্কহীন বিষয়বস্তু উপাদানসমূহের মাঝে ঐক্য সন্ধান করতে সচেষ্ট।”

সোমা সুরভী জান্নাত স্নাতক সম্পন্ন করেছেন ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ-এর ড্রয়িং ও পেইন্টিং বিভাগ থেকে এবং স্নাতকোত্তর করেছেন ২০১৬ সালে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর পেইন্টিং বিভাগ থেকে। তিনি এরই মধ্যে দেশে বিদেশে ১৫টিরও বেশি দলগত প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন, যার মধ্যে অন্যতম হলো ৭ম বেইজিং আন্তর্জাতিক আর্ট বিয়েনাল, চায়না, ২০১৭। তিনি ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক আর্ট প্রদর্শনীর তৈলচিত্রে ‘মিডিয়া বেস্ট এওয়ার্ড’ পেয়েছেন।

প্রদর্শনীটি চলবে ৭ এপ্রিল শনিবার পর্যন্ত। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্রবার ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ। প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত।