শীর্ষেন্দুর আলাপনে শেষ হলো ঢাকা লিট ফেস্ট
শেষ হলো দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সাহিত্য উৎসব ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’। তিন দিনের উৎসবে ১৫ দেশ থেকে দুই শতাধিক শিল্পী, সাহিত্যিক ও গবেষক অংশ নিয়েছেন। অনুষ্ঠিত হয়েছে ৯০টির বেশি সেশন। শেষ দিনে শেষবারে মঞ্চে ওঠেন দুই বাংলার জনপ্রিয় লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। এ সময় তিনি নিজের লেখালেখি নিয়ে কথা বলেন।
বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের সঞ্চলনায় শীর্ষেন্দু বলেন, লেখার আগে পুরো গল্প ভাবতে পারেন না তিনি। এ ছাড়া লেখালেখি তিনি নিজের জন্যই করেন, পাঠকের জন্য নয়। এ সময় উপস্থিত শ্রোতারা মনোযোগ দিয়ে দুই বাংলার এই জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকের আলাপ শোনেন।
উৎসবের শেষ দিন শনিবারের প্রথম প্রহরে ভাষার বৈচিত্র্য নিয়ে কথা বলতে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মঞ্চে ওঠেন কবি কামাল চৌধুরী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জিনাত ইমতিয়াজ আলী ও ভাষাগবেষক সৌরভ শিকদার। এ আলোচনার সূত্রধর ছিলেন গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গর্গ চট্টপাধ্যায়।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এবং লিঙ্গুইস্টিকস সার্ভে অব বাংলাদেশের যৌথ গবেষণায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে ২০ ভলিউমের ভাষাবিষয়ক গবেষণা গ্রন্থ। বক্তারা মূলত সেই জরিপ নিয়েই আলোচনা করেন এখানে।
বেলা ১১টায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে হিলড শীর্ষক সেশনে নিজের লেখা বই 'হিলড' থেকে কয়েকটি লাইন দর্শকদের পড়ে শোনান মনীষা কৈরালা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্। মনীষা বলেন, ‘আমি জানি না আমার ক্যানসার হওয়ার পর কত সময় পার হয়ে গেছে।। সে সময় আমি জীবনের কঠিন একটি বাস্তবতার মধ্যে ছিলাম। আমি বিষণ্ণ ছিলাম, খুব অস্বস্তি লাগত, শারীরিকভাবেও বিপর্যস্ত ছিলাম। আমার পাকস্থলী অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে গিয়েছিল। পরীক্ষা করার পর জানতে পারলাম আমার লিড স্টেজে ক্যানসার এবং তা ছড়িয়ে পড়েছে। চিকিৎসকরাও আমাকে বলতে চাচ্ছিল না যে আমার ক্যানসার হয়েছে। আমি বিস্ময় নিয়ে চিকিৎসকের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। অনেক পরে আমাকে জানানো হলো, আমার জরায়ুর ক্যানসার এবং সেটা কেটে ফেলে দিতে হবে। এটা শোনার পর মনে হলো আমার জীবনের নিঃসঙ্গ রাত শুরু।’
ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিন শুক্রবারের প্রথমার্ধে ছিল ‘সেভেন্টিওয়ান পোয়েমস’ সেশন। আলোচ্য বিষয় ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা কবিতার সংকলন—‘পিস অ্যান্ড হারমনি : সেভেন্টিওয়ান পোয়েমস ডেডিকেটেড টু শেখ হাসিনা’।
এ আলোচনায় যোগ দেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কবি মোহাম্মদ সামাদ, কবি কামাল চৌধুরী, আবুল আজাদ, সংকলনের সম্পাদক আহমেদ রেজা, সংকলনের ইংরেজি অনুবাদক আনিস মুহাম্মদ প্রমুখ। সংকলনটি প্রকাশ করেছে ‘গল্পকার’ প্রকাশনী।
জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কবিতা সবাইকে নিয়ে লেখা যায় না, সব বিষয় নিয়েও লেখা যায় না। কিন্তু পদ্য লেখা যায়। পদ্যে শব্দের অর্থ আক্ষরিক নয়, কিন্তু কবিতায় শব্দের অর্থ আক্ষরিক।
ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিন সকালে ছিল শিশুদের জন্য আয়োজন। সকালে নজরুল মঞ্চে ‘ক্লাসিক্যাল বেঙ্গল টেলস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে শিশুদের বিভা সিদ্দীকা বাংলা চিরায়িত গল্প পড়ে শোনান। এ সময় শিশুরা মনোযোগের সঙ্গে গল্পগুলো উপভোগ করে। এ ছাড়া দুপুরের দিকে ‘দ্য কিং উইথ ডার্টি ফিট’ সেশনে শিশুদের অভিনয় দেখিয়ে মুগ্ধ করেন স্যালি পম্মি ক্লিন্টন।
দুপুরে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ অডিটরিয়ামে ‘ব্রেক্সিট’ প্রসঙ্গে এক আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ও রাজনৈতিক সাংবাদিক জেমস মিক, ভারতীয় লেখক জয়শ্রী মিসরা, কবি ও লেখক আহসান আকবার এবং জার্মান লেখক ওলগা গ্রাইজনোভা।
‘আনকুল ব্রিটানিয়া?’ শিরোনামের এ আলোচনায় সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন ব্রিটিশ সাংবাদিক এড কামিং।
ঢাকা লিট ফেস্টের তৃতীয় দিনের মধ্য দুপুরে ‘বাংলাদেশের মৌলিক থ্রিলার : জাগরণ ও সম্ভাবনা শীর্ষক’ আলোচনা হয়ে গেল। কসমিক টেন্টের এই সেশনে আলোচক হিসেবে ছিলেন জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন এবং অনুবাদক শিবব্রত বর্মন, অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সুমন রহমান। বাংলাদেশে থ্রিলার নিয়ে লেখা শুরু হয় কাজী আনোয়ার হোসেন, তাঁর ‘ধ্বংস পাহাড়’ বইয়ের মাধ্যমে। তিনি যদিও অনেক বছর ধরে বাংলা সাহিত্যে থ্রিলার ঘরানার বই নিয়ে কাজ করছেন। বর্তমানে বড় পরিসরে মৌলিক থ্রিলার নিয়ে লেখা শুরু হয় পাঁচ-ছয় বছর ধরে।
থ্রিলার কী? এমন প্রশ্নের জবাবে শিবব্রত বর্মন বলেন, ‘কভার দেখেই আমরা বুঝতে পারি এটা একটা থ্রিলার, যেখানে সাসপেন্স ও উত্তেজনা থাকবে তাকে আমরা থ্রিলার বলতে পারব।’ নাজিম উদ্দীন আবার সেটার বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘থ্রিলারে ইনভেস্টিকেশন, ক্রাইম এগুলো না থাকলে থ্রিলার বলা যাবে না থ্রিলার হলো ফর্মুলাভিত্তিক ফিকশন, প্রত্যেক লেখক তার প্রতিটি থ্রিলার বইয়ের জন্যে আগে একটা ডায়াগ্রাম তৈরি করে তারপর লেখা শুরু করেন।’
বরফ যুগের সময়ে ‘ক্লভিস’ নামের একটি জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব ছিল। নৃতাত্ত্বিক হ্যাংক হান্নাহ গবেষণা করতে গিয়ে দেখেন এই ক্লভিস জাতিগোষ্ঠীর কারণে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ৩৫টি বৃহদাকার স্তন্যপায়ী প্রাণী। আরও গভীরে যেতে গিয়ে হান্নাহ দেখতে পান এক ভয়ানক দৃশ্য! মানবজাতির আগের জীবনধারণের অভ্যাস, এর ধারাবাহিকতা এবং ভবিষ্যতের ওপর ভয়ংকর প্রভাব দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন হান্নাহ। গল্পটি পুলিৎজারজয়ী সাহিত্যিক অ্যাডাম জনসনের প্রথম উপন্যাস ‘প্যারাসাইটস লাইক আস’-এর। এই শিরোনামেরই এক সেশনে ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিন শনিবার বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সম্মেলন কক্ষে ফিকশন সাহিত্যের দুই তারকা অ্যাডাম জনসন ও ফিলিপ হেনশার এক হন। তাঁদের আলাপচারিতার সূত্র ধরে পুরো অনুষ্ঠানটি উপভোগ্য করে তোলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মন্ময় জাফর।
‘ওগো নদী, আপন বেগে পাগলপারা, আমি স্তব্ধ চাঁপার তরু গন্ধভরে তন্দ্রাহারা’— রবীন্দ্রনাথের এই কথা দিয়েই শুরু করেন কবি শামীম রেজা। ‘এখনও কেন কবিতা’ শিরোনামের আলাপচারিতায় তাই স্বভাবতই উঠে আসে অমোঘ কিছু প্রশ্ন : কবিতা কী অথবা কেন কবিতা লেখা হয় কিংবা কবিতার প্রয়োজনীয়তা কি এখনো টিকে আছে?
ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিন দুপুরে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তন কক্ষে দেশের প্রথিতযশা অগ্রজ কবি আসাদ চৌধুরী, রুবি রহমান, পশ্চিমবঙ্গের সুমন গুণ এবং ড. নিখিলেশ রায় মুখোমুখি বসেন কবিতা নিয়ে কথা বলতে। সেশনটির সঞ্চালনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অব কম্পারেটিভ লিটারেচার অ্যান্ড কালচার-এর পরিচালক ও কবি শামীম রেজা।
ঝড়, টর্নেডো, সাইক্লোন কিংবা যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগই হোক, সেটার স্থায়িত্ব বেশি সময় থাকে না। কিন্তু গত বছর কিছু নারী এক নতুন আন্দোলনের সৃষ্টি করেছিলেন। সেই ঝড় ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে। ১৮ জন নারী ফরাসি এক আলোকচিত্রী কতৃক যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে এই আন্দোলনের নাম হয়েছে ‘মি টু’।
মি টু আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। রূপান্তরিত হয়েছে গণআন্দোলনে। এই ঝড়ের উত্তাপের কারণেই এই বছর সুইডিশ একাডেমি বাধ্য হয়েছে ‘সাহিত্যে নোবেল’ পুরস্কার স্থগিত করতে। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেছেন, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের যে কমিটি রয়েছে, তাঁদের সঙ্গে যৌন হয়রানির প্রশ্ন উঠেছে।
ঢাকা লিট ফেস্টের তৃতীয় দিনের দুপুরের অধিবেশনে ‘নো নোবেল : মি টু ইন লিটারেচার’ শীর্ষক আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন জার্মান লেখক ওলগা গ্রাসনোয়া, ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ও অধ্যাপক ফিলিপ হেনশার, ব্রিটিশ লেখক রিচার্ড বিয়ার্ড, আমেরিকান লেখক রস পটার ও ভারতীয় লেখক, সম্পাদক ও সমাজকর্মী হিমাঞ্জলি শংকর। সঞ্চালক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় লেখক চন্দ্রবিভাস চৌধুরী।
বাংলা সাহিত্যে নারী বা পুরুষের দ্বারা কোনও ‘নারী চরিত্র’ সৃষ্টি হয়নি— সালমা বাণী এই কথা দিয়েই শুরু করেন ঢাকা লিট ফেস্টের ‘বাংলা সাহিত্য : নারী ও পুরুষ’ শিরোনামের আলোচনা। বাংলা একাডেমিতে মূল ভবনের লনে অনুষ্ঠানটি হয়েছে মধ্যদুপুরে, ঢাকা লিট ফেস্টের তৃতীয় ও শেষ দিন শনিবারে।
আলোচক ছিলেন লেখক শাহনাজ মুন্নী, কবি অদিতি ফাল্গুনী, কথাসাহিত্যিক সালমা বাণী এবং অধ্যাপক সাদেকা হালিম। প্রাণবন্ত এ আলোচনার সঞ্চালক ছিলেন কবি শামীম রেজা।
কবিতায় নারীদের ভূমিকা, নারীদের অবস্থান, নারীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ঢাকা লিট ফেস্টের পড়ন্ত বিকেলে বাংলা একাডেমির লনে ‘ছয় নারী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচক হিসাবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নী; শিক্ষক, লেখক জাহানারা পারভীন, কবি ফরিদা হোসেইন, শিক্ষক ও লেখক আফরোজা সোমা এবং কবি ও সাহিত্যিক শাকিরা পারভীন। আলোচনা পর্বটি সঞ্চালনা করেন কবি জ্যাকি কবির।
ঢাকা লিট ফেস্টের রোহিঙ্গাবিষয়ক ‘রেইপ বাই কমান্ড : দ্য আফটারম্যাথ’ শীর্ষক আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক জিউইন রবিন্সন, এনজিওকর্মী রাজিয়া সুলতানা, ডা. মরিয়ম মোল্লা, মানবাধিকারকর্মী শিরিন হক এবং সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্।
শিরিন হক প্রথমেই রোহিঙ্গা নিয়ে পোস্টার দেখান। পোস্টারে ছবি তুলেছেন সাংবাদিক শহীদুল আলম। সেই ছবিতে একটি রোহিঙ্গা পরিবার ছিল, পরিবারের মেয়েটি ধর্ষিত হয়েছে মিয়ানমারের আর্মিদের দ্বারা। জিউইন রবিন্সন রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি মহৎ কাজ করছে। এতগুলো মানুষকে আশ্রয় দিচ্ছে, বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নোবেল প্রাইজ দেওয়া উচিত।’
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ অডিটরিয়ামে বিকেলের প্রথম সেশনে ভিন্নধারার শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ‘অন ড্রামডন হিল’ শীর্ষক আলোচনায় লেখক আহসান আকবারের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় স্কটিশ অভিনেত্রী টিলডা সুইনটোন।
‘আগত ভবিষ্যৎকে মোকাবিলা’ স্লোগানে প্রতিষ্ঠিত ভিন্নধারার শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ স্কটল্যান্ডের ড্রামডন স্কুল। অভিনেত্রী টিলডা সুইনটন পুরো সেশনজুড়ে মূলত এ প্রসঙ্গেই কথা বলেন। টিলডার মতে, বর্তমান বৈশ্বিক শিক্ষাব্যবস্থায় যে কাঠামো অনুসরণ করা হয় এবং শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহারের যে বাড়াবাড়ি, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একটি শিশুর শৈশব থেকে পরিণত হয়ে ওঠার পথে অন্তরায়; প্রতিটি ধাপেই তাকে একধরনের সামাজিক চাপ, বিষণ্ণতা ও হতাশার দিকে ঠেলতে থাকে, যা শিক্ষাব্যবস্থার চূড়ান্ত উদ্দেশ্যের বিপরীত অবস্থানে।
ড্রামডন স্কুল গতানুগতিক ও তথাকথিত এই কাঠামো থেকে একেবারেই দূরে। স্কুলটির কার্যক্রম ব্যাখ্যা করতে গিয়ে টিলডা বলেন, ‘তিন ধাপে এখানে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ৪-৭ বছর পর্যন্ত শিক্ষার বিভিন্ন উপকরণের সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়; কোনো পরীক্ষা দিতে হয় না তাদের। দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ ৭-১৪ বছর পর্যন্ত হাতে-কলমে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কলাকৌশলে অভ্যস্ত করা হয়, যা শিক্ষায় আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে শিশুদের। শিক্ষা কার্যক্রমের শেষ ধাপ অর্থাৎ ১৪-২১ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, যেখানে তারা একটা দীর্ঘ সময় কোনো নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে যেমন, স্থাপত্য, জীববিদ্যা, মনোবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে অধ্যয়ন করে। এই বিদ্যায়তনিক শিক্ষা শেষে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরে যেতে তাদের সাহায্য করে।’
এই শিক্ষাব্যবস্থায় নিজের যমজ সন্তানরা বেড়ে উঠেছে বলেও জানান টিলডা।
শেষবেলায় শামসুর রাহমান মিলনায়তনে বসেছিলেন সাংবাদিকরা ফেক নিউজ নিয়ে কথা বলতে।
ইস্যুতে আলোচনায় বসেন জাফর সোবহান, আফসান চৌধুরী, হুগো রেস্টল ও অ্যানি জাইদি। সেশনটি সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা ট্রিবিউনের প্ল্যানিং এডিটর আসিফুল ইসলাম।
পুরো আলোচনায় উঠে আসে বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক বাস্তবতার বিচারে বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার, সাংবাদিকদের আদর্শ-নৈতিকতা, সংবাদমাধ্যমের মালিকপক্ষ-সরকার সম্পর্ক, ‘আন্ডারগ্রাউন্ড মিডিয়া’র অস্তিত্ব ও জনমনে প্রভাবসহ আরও বিভিন্ন প্রসঙ্গ।
ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকতেই হবে। ফেক নিউজ ইস্যুটি এখন বেশ আলোচিত হওয়ার কারণ হলো, এমন সংবাদের কারণে সাধারণ মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। যা কখনো কখনো নেতিবাচক। মিডিয়া জগতে কোনটি ভুয়া তথ্য (মিসইনফরমেশন) আর কোনোটি তথ্যই নয় (ডিসইনফরমেশন) তা জনসাধারণের পক্ষে নির্দিষ্ট করে শনাক্ত করা কঠিন। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেই ফেক নিউজ যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটাতে পারছে।’
এই আয়োজনের সমাপনী ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সাত বছর ধরে এই আয়োজনে আমি একজন নিয়মিত দর্শক ও অংশগ্রহণকারী। আমি নিজেও এসেছি। ভবিষ্যতেও আসব। আগামী বছর আমি একজন বেসরকারি ব্যক্তি হয়েই থাকব। আমি শুভকামনা জানাই, যাঁরা এখানে এসেছেন এবং কয়েক দিন সময় কাটিয়েছেন। আয়োজকরাও লিট ফেস্টে যা হচ্ছে, তা নিয়েও সন্তুষ্ট। কারণ যখন এই আয়োজনের শুরুটা ছিল, তখন এটা খুব ছোট পরিসরে ছিল কিন্তু এখন আট বছরে বাংলা একাডেমির পুরো প্রাঙ্গণটাই আকর্ষণীয় হয়েছে সবার কাছে। আমি এখানে আমার নাতনিকে নিয়ে এসেছি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছি, আমরা কোথায় এসেছি বলো। সে আমাকে বলল বইমেলা। আমি দেখতে চাই, সে কী পরিমাণ আকর্ষিত হয়। আমি আশা করি, এই আয়োজনের শেষ দিনে চারপাশ ঘুরে সে ভালো সময় কাটাবে। আমি সবাইকে শুভকামনা জানাই। আমি আশা করি, আপনারা সম্পূর্ণ মুক্ত পরিবেশে উদযাপন করেছেন। কোনো বাধ্যবাধকতা ছাড়াই অতিথিরা এখানে আসতে পেরেছেন বলে আমি আশা করি।’