একুশের বইমেলা : মধুরেণ সমাপয়েৎ

Looks like you've blocked notifications!

শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। এ বছরের একুশের গ্রন্থমেলার শেষটা ছিল প্রত্যাশার কাছাকাছি ভালো। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ কটা দিন মেলা প্রায় ভেসে গিয়েছিল। পাঠক ও ক্রেতারা ঠিকভাবে আসতে পারেননি মেলায়। বৃষ্টির ঝাপটায়, দোকানের ঝাপ নামিয়ে বসে থাকতে হয়েছিল স্টলকর্মীদের। তাই আর্জি ছিল মেলার সময়সীমা যেন দুদিন বাড়ানো হয়। শেষ মুহূর্তে সময় বাড়ানো হলো এবং এই বাড়তি দুদিনের ভেতর পড়ে গেল শুক্র ও শনি, সাপ্তাহিক বন্ধের দিন। আর এতেই মেলার শেষ দুদিন জমে উঠল।

গতকাল ২ মার্চ মেলার শেষ দিনে অনেকেই আসেন হাতে বইয়ের তালিকা নিয়ে। তারা এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি না করে সোজা নির্দিষ্ট স্টলগুলোতে গিয়ে কেনাকাটা করেছেন। আবার অনেকেই এসেছেন মেলার শেষদিন একটু ঘুরে যেতে। তবে কমবেশি সকলের হাতেই এদিন বইয়ের থলি দেখা গেছে।

আগের বছরের মার্চ থেকে প্রকাশিত বইগুলোকে যেহেতু পরের মেলার নতুন বই হিসেবেই ধরা হয়, সে হিসেবে ২০১৯ সালের মেলায় নতুন ও পুনর্মুদ্রিত বই এসেছে পাঁচ হাজারের বেশি। বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবারের মেলায় বই বিক্রি বেড়েছে ১০ শতাংশ। তবে ভিন্ন কথা বলেছেন অনেকেই। যেমন প্রকৃতি-পরিচয় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফিরোজ আহমেদ জানান, বড় কয়েকটি প্রকাশনী ছাড়া মেলায় এবার বিক্রি কম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ছোট প্রকাশনীগুলোর বিক্রি আগের বছরের তুলনায় কম।’

বাংলা একাডেমির হিসাব মতে, এবার বই বিক্রি হয়েছে ৭৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকার। গতবার অঙ্কটি ছিল ৭০ কোটি ৫০ লাখের ঘরে। এ হিসাব থেকে অবশ্য বলা যায়, বিক্রি বেড়েছে। গোছানো আয়োজন হিসেবে প্রশংসিত এবারের মেলায় আগতরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাঘুরি করতে পেরেছেন। যদিও কিছু কিছু স্টলের সামনের গলি ছিল সরু। আর শিশুদের জন্য আয়োজিত যে শিশুকর্নার ছিল, সেখানেও জায়গার সংকট ছিল বলে জানান অনেক অভিভাবক। তেজগাঁও থেকে আসা অভিভাবক আয়েশা আকতার বলেন, ‘ছুটির দিনগুলোতে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে বাচ্চারা শিশুপ্রহরে আসে। কিন্তু এসব শিশু ও তাদের অভিভাবকদের জায়গা দেওয়ার মতো জায়গা এই শিশুদের কর্নারে নেই।’

একই রকম অনুযোগ শোনা যায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তৈরি করা লিটল ম্যাগ কর্নার সম্পর্কেও। লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা রেজা ঘটক এটিকে ‘রোহিঙ্গা বস্তি’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলা একাডেমি অংশে বহেড়াতলার লিটল ম্যাগাজিন চত্বরকে চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হিসেবে সেখানে ছোটকাগজ ছাড়াও বারোয়ারি দোকান দিয়ে রোহিঙ্গা বস্তি বানানো হয়েছিল। যা ছিল ছোটকাগজের প্রতি বাংলা একাডেমির চূড়ান্ত ষড়যন্ত্র ও অবহেলার শামিল।’

একাডেমি প্রাঙ্গণে টানা ২৮ দিন ধরে চলা সেমিনার নিয়েও একইরকম অভিযোগ শোনা গেছে, অবহেলিত ছিল এই আয়োজনটিও। এর কারণ বেশিরভাগ মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে চলে গেছে, একাডেমি প্রাঙ্গণে এসে খুব কম মানুষই সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখেছেন। অবশ্য এই সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে আগামীবার ভিন্ন ভাবনার কথা বলেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। তিনি বলেন, ‘আগামীবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই এই সেমিনার আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।’ এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে মুক্তমঞ্চ রয়েছে, সেখানে ফুডকোর্ট তৈরির পরিকল্পনার কথাও বলেন তিনি।

মেলায় প্রতিবারের মতো এবারও সৃজনশীল বই, অর্থাৎ উপন্যাস ও গল্পের বই বেশি বিক্রি হয়েছে। কবিতার বইয়ের পাশাপাশি প্রবন্ধ নিয়েও পাঠকদের আগ্রহ ছিল। আরো একটি বিষয়ে মানুষের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো, সেটি হলো বাংলা একাডেমির নতুন সংযোজন ‘লেখক বলছি’। টানা ২৮ দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে এসে প্রতিদিন কথা বলেছেন পাঁচজন করে লেখক। তাঁরা নিজেদের প্রকাশিত নতুন বই নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি সরাসরি উত্তর দিয়েছেন পাঠকদের প্রশ্নের। এই আয়োজনে নতুন ও পুরোনো লেখকদের কথা শুনতে প্রতিদিনই ভিড় হয়েছে। মেলার বর্ধিত দুই দিন অবশ্য এই আয়োজন আর করা হয়নি।

মেলা গতকাল শনিবার শেষ হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার পর্দা নামে গত বৃহস্পতিবার। সেদিনের সমাপনী অনুষ্ঠানেই পূর্বঘোষিত পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় লেখক ও প্রকাশকদের হাতে।