বইয়ের কথা

সত্যাপি আমার স্বর

Looks like you've blocked notifications!

‘সত্যাপি আমার স্বর’ বইটি লিখেছে  কবি শেখ মেহেদী হাসান যিনি ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। বইটি এবছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশ করেছে চমন প্রকাশ। প্রচ্ছদ করেছেন মাঝি বাঁধন।

যদিও আমি কবিতার সবচাইতে দুর্বল পাঠক। কবিতা আজকাল বুঝি না, নাকি কবিতাই আমাকে দূরে ঠেলে দেয় জানি না। এর একটা বড় কারণ, উত্তরাধুনিক এই যুগের কবিরা কবিতাকে কঠিন থেকে কঠিনতর আর জটিল থেকে জটিলতর করে সাধারণ পাঠকের কবিতার প্রতি আগ্রহ ও ভাললাগাটা নষ্ট করে দিচ্ছেন। এখনকার কবিতার বই তাই কবিকেই কিনতে হয়। কবিতার বই নিয়ে আলোচনা কিংবা সমালোচনাও কবিকেই করতে হয়, পাঠকরা এখানে কেবলই দর্শক। এই প্রথমবারের মতো কবিতার স্বাদ পরিপূর্ণ ভাবে উপভোগ করার সুযোগ করে দিলো আলোচ্য এই বইটি। মোট ৩৭ টি কবিতা রয়েছে এতে। ১ নং কবিতা  ‘কোথায় তোমার কবিত’ থেকে পড়া শুরু করে শেষ কবিতা ‘কাঁদো কবিতা কাঁদো’ পর্যন্ত প্রতিটা কবিতা পড়ার পর মনে হয়েছে, কবিতাগুলো আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের জন্যই লেখা। একবার পুরোটা পড়ে তারপর ঘরে রেখে মন খারাপের সময়গুলোতে বারবার পড়ার মতো একটি বই। কবিতা কি? কবিতার সঙ্গা দিতে গিয়ে বহু কবি বহু রকমের উপমা দিয়েছেন।

যেমন, সদ্য প্রয়াত কবি আল মাহমুদ তার একটি কবিতায় লিখেছিলেন ‘কবিতা তো কৈশোরের স্মৃতি। সে তো ভেসে ওঠা ম্লান আমার মায়ের মুখ; নিম ডালে বসে থাকা হলুদ পাখিটি পাতার আগুন ঘিরে রাতজাগা ভাই-বোন, আব্বার ফিরে আসা, সাইকেলের ঘন্টাধ্বনি–রাবেয়া রাবেয়া– আমার মায়ের নামে খুলে যাওয়া দক্ষিণের ভেজানো কপাট!’ঠিক তেমনি ‘সত্যাপি আমার স্বর’ বইটিতে কবি শেখ মেহেদী হাসান লিখেছেন ‘কবিতা আমার নেশা, আমার ভাঙা বাঁশির সুর কবিতা আমার নটিনী, বেতাল বেসুরো নূপুর কবিতা আমার তুলি, তপ্ত রঙের আলাপন কবিতা আমার চিঠি সশস্ত্র সমন কবিতা ছেঁড়া প্রেমপত্র, স্বাক্ষী শুষ্ক প্রেমের কবিতা চোখের জল, নোনতা রক্ত ঘামের কবিতা আমার প্রাণ তুচ্ছ মৃত্যু নিনাদ কবিতা আমার প্রেম, প্রথম চুম্বনের স্বাদ’ অন্য আরেকটি কবিতা যেটির শিরোনাম ‘আমার কবিতা’, এখানে তিনি বলেছেন ‘ঘুমন্ত কবিতা- আমার শিশির ভেজা সকালগুলো, বিষাদের বিকেলগুলো’ বইটিতে কবি বিচিত্র সব বিষয় নিয়ে কবিতা লিখেছেন। যে কারণে একটা কবিতা পড়ে শেষ করার পর আরেকটা কবিতা পড়ার আকাঙ্ক্ষা জাগে। বইটিতে উনি দেশমাতাকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন, সন্তানকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। প্রেম ভালবাসা তো রয়েছেই; ধর্ষণ নিয়েও কবিতা লিখেছেন। তবে যে বিষয় নিয়েই লিখেছেন, সবগুলোই লিখেছেন বাস্তবতার নিরীখে। সন্তান নিয়ে লেখা কবিতাটা ছিল এরকম

‘শেকড় বাকড় নিয়ে খেলবে নাছোড়

খন্ড খন্ড ছবি রঙের আঁচড়

সারাক্ষণ ছোটাছুটি এ ঘর ও ঘর

মীনা রাজু মোটু ভাঁড় পাতলু ভোঁদড়।’

আবার প্রেম, ভালবাসা আর হারানোর বেদনা নিয়ে কিছু কবিতা লিখেছেন যেগুলো পড়লে অনেকের জীবনের গল্পের সঙ্গেই হয়তো মিলে যাবে। যেমন ‘তারপরেও’ শিরোনামের কবিতায় তিনি লিখেছেন ‘তারপরেও আমি হাসি

তারপরেও আমি উদাসী

তারপরেও আমি স্রোতে ভাসি

আর কত, আর কত এ অভিনয়?’

‘প্রয়োজন’ শিরোনামের আরেকটি কবিতার কথাগুলোও ভাল লেগেছে--

 

‘জীবনের প্রয়োজনে

শরীর ললনার

শরীরের প্রয়োজনে

জীবন ছলনার।’
‘কেউ সত্য বলে না’ কবিতাতেও তিনি বাস্তব কিছু কথা বলেছেন। যেমন,

 

“সত্য ঘুমিয়ে কবরে

বা জ্বলন্ত শ্মশানে

তুমি হাজার বছর ধরে

পৃথিবী খুঁড়েও পাবেনা

পাবেনা সত্যের কোন অস্থি

বা এক টুকরো ফসিল

 

ভালবেসে যদি বলো ‘সত্যি ভালবাসি"

তুমি অবহেলা পাবে

ভাল না বেসে বল ‘সত্যি ভালবাসি’

তুমি সম্মতি পাবে।"
 

কয়েকটা অণুকবিতাও রয়েছে বইটিতে। দারুণ ছিল সেগুলো--

 

‘এক বালতি বিভ্রান্তির জলে সারলে স্নান?

অথচ উষ্ণ জল নিয়ে সে ছিল দন্ডায়মান।’
 

সবকটি কবিতাই ভাল লেগেছে। তবে সবচাইতে বেশী ভাল লেগেছে, ‘বুড়ামি’ কবিতাটা। ঠিক কি কারণে এই কবিতাটা ভাল লেগেছে সে ব্যাখ্যায় যেতে চাচ্ছিনা। কবি শেখ মেহেদী হাসান, আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ চমৎকার এই বইটির জন্য। নিয়মিত লিখুন, সত্য ও সুন্দরের পক্ষে লিখুন, অন্যায়ের বিপক্ষে লিখুন।