প্রকাশকের কথা

বইমেলায় পাঠক-ক্রেতার চেয়ে দর্শক বেশি : সৈকত হাবিব

Looks like you've blocked notifications!
বইমেলা নিয়ে হতাশাই ঝরেছে সৈকত হাবিবের কথায়। ছবি : সংগৃহীত

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রতিবছরই প্রকাশনীগুলো নতুন নতুন বই নিয়ে উপস্থিত হয় পাঠকের সামনে। প্রকাশনী, বই-ভাবনা আর এবারের বইমেলা নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন ‘প্রকৃতি’ প্রকাশনীর সম্পাদক-প্রকাশক, কবি সৈকত হাবিব।
 

১. এবারের বইমেলা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

উত্তর : এবারের বইমেলার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দিক নিয়ে বলা যাক : ক. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার পরিসর বেড়েছে। কিন্তু এর খুব অপব্যবহার হয়েছে। এলোমেলো বিন্যাস ও অপরিকল্পনার ছাপ দৃষ্টিকটুভাবে চোখে পড়ে। এই সুবিধা পাঠক বা প্রকাশক কারো তেমন কল্যাণে আসেনি। খ. কিছু প্রকাশক অন্যের বরাদ্দ করা স্টল দখল করেছেন; কেউ কেউ নিজের ইচ্ছামতো স্টলের জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু আয়োজকরা কোনো ভূমিকা নেননি। এতে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। গ. মেলায় প্রচুর জনসমাগম হয়েছে, কিন্তু পাঠক-ক্রেতার চেয়ে দর্শক বেশি (কারণ অধিকাংশই কোনো বইপত্র না কিনে কেবল বেড়িয়েছেন)। ফলে গুটিকয় প্রকাশক ছাড়া অধিকাংশ প্রকাশক এবারও ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। ঘ. এবারও মুক্তমতের লেখক-প্রকাশকের ওপর দমন চলেছে এবং ঙ. যথারীতি মানহীন বইয়েরই আধিপত্য চলছে...।

২. এ বছর আপনার প্রকাশনী থেকে বের হওয়া পাঁচটি উল্লেখযোগ্য বইয়ের নাম বলুন। কেন এগুলো উল্লেখযোগ্য?

উত্তর : প্রকৃতি প্রকাশন থেকে ২০টির বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সৈয়দ শামসুল হকের 'নির্বাচিত আশি কবিতা', নির্মলেন্দু গুণের ছয় ঋতুর কবিতা নিয়ে 'ঋতুসমগ্র', মোহাম্মদ রফিকের 'খোলা কবিতা', মোসাদ্দেক আহমেদের প্রবন্ধগ্রন্থ 'রূপকারের সৃজনরেখা', কামরুল হুদার রম্যরচনা 'মুঠো হাসি চাপা কান্না'। বইগুলো এ কারণে উল্লেখযোগ্য, বইগুলোর লেখকরা যেমন বিশিষ্ট, তেমনি বিষয়ও আকর্ষণীয়।

আমরা যেকোনো বই যত্নের সঙ্গে সম্পাদনা করে সুন্দরভাবে প্রকাশের চেষ্টা করি। এ ছাড়া আমরা প্রতিবছরই মেধাবী তরুণদের এবং বিভিন্ন বিষয়ে নানা ধরনের বই প্রকাশ করে থাকি। এবারও এমন কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে।

৩. আপনি নিজেও লেখক, প্রকাশনার কাজের জন্য সেটা কি ব্যাহত হয়?

উত্তর : আমার ক্ষেত্রে ব্যাহতই বলা যায়। কারণ, অন্য লেখকদের প্রতি মনোযোগ বেশি দিতে হয়, তাঁদের পরিচর্যা করতে হয়। এ কারণে নিজের জন্য সময় কমে যায়। আমি প্রকাশক হওয়ার পর থেকে নিজের বই প্রকাশ বরং অনেক কমে গেছে।

৪. এ বছর বইমেলায় প্রকাশকরা কেমন ব্যবসা করবেন বলে মনে করেন?

উত্তর : এর মধ্যেই ২৪ দিন চলে গেছে। কিন্তু অধিকাংশ প্রকাশকের মধ্যেই হতাশা বিরাজ করছে। কারণ, অনেকের বিক্রি গতবারের চেয়েও কম। আমাদের প্রকাশনাও এই দলে পড়েছে। বুঝতেই পারছেন, খুব আশাবাদী হতে পারছি না।

৫. এত দিন ধরে বই প্রকাশ করছেন, ভালো লেখার পরিমাণ কি বাড়ছে না কমছে? কেন কমছে বা বাড়ছে?

উত্তর : আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, একই সঙ্গে ভালো লেখক ও ভালো বিষয় দুদিক থেকেই অল্প পরিমাণে হলেও বাড়ছে। কিন্তু সেটা খুব কম চোখে পড়ছে কয়েকটি কারণে :

ক. বাজারি লেখকদের বিজ্ঞাপন, প্রচার ও মিডিয়া আধিপত্য; খ. প্রবীণ ও গণপরিচিত লেখকদের নির্বিচার মূল্যায়ন/প্রচার; গ. খ্যাতিলোভী সরকারি-বেসরকারি ক্ষমতাবান ব্যক্তি, ধনিক-বণিক লেখক-অলেখকদের নানা মাত্রিক দৌরাত্ম্য; ঘ. গণমাধ্যমগুলোর বিচার-বিবেচনার অভাব বা দায়সারা মনোভাব; ঙ. যোগ্য আলোচক-সমালোচক আর অনুষ্ঠানের অভাব; চ. সর্বোপরি রুচিবান/সচেতন পাঠকের সংখ্যাল্পতা।

আর আমাদের তো ভালোর চেয়ে মন্দ নিয়ে চর্চার দিকে ঝোঁক বেশি। তাই ভালোটা অনেক সময় চোখেও পড়ে না।