কবিতা

কলি-ছেঁড়ার কাল

Looks like you've blocked notifications!

রাজাকাহিনী

(৮ জুলাই ২০১৫ : সিলেটে চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ১৩ বছরের রাজনকে)

পশুবধের সোল্লাসে শিশু নিকাশেও

                দম্ভের দারুণ উচ্চারণ

উবে যায় উফর-ফাঁপর আর্তনাদ—

‘আমি মরি যাইয়ার! কেউ আমারে বাঁচাও রে বা!’...

—এও এক উৎসব!

বলহীনকে বল-বলীয়ানে পিষিত করাও

                এক মতবাদ

ট্যাঁকে কঁড়ি, পেশিতে শক্তি

আর কী চাই চাঁদু...

বাকি সব বরবাদ!

 

‘বেবি অব বেঙ্গল’

(২৩ জুলাই ২০১৫ : মাগুরায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন অন্তঃসত্ত্বা নাজমা বেগম। গুলি মায়ের পেটের শিশুর শরীরও এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়)

মাতৃজঠরে সময়ের পূর্বাভাস

পাঠাল বুলেট

সে-ও ভারী কাজের কাজ হলো একখানা—

শিশুটির জন্মদাগ হয়ে রইল

সময়ের অফুরান ক্ষত।

সতর্কসংকেত উপেক্ষা করে তুই আসলি কেন?

        পথে পথে সীমারি-ঠোক্কর খেয়ে খেয়ে—

অপঘাত মৃত্যু ছাড়া থেকে ফেরার

পথ নেই কোনো!

 

রক্তবমি

(৩ আগস্ট ২০১৫ : খুলনায় মলদ্বারে পাইপের মাধ্যমে হাওয়া ঢুকিয়ে ১২ বছরের রাকিবকে হত্যা করা হয়)

সাত সমুদ্দুরের ওপার থেকে

        গুয়ানতানামো বে কারাগারের রেপ্লিকা

আমদানি করা সারা

গুহ্যপথে খাদ্য-অন্ন-জল...

উহু, এই খানে নয় কোনো নকল

উদ্ভাবনীতে আমরাও কী কম যাই!

পায়ু হয়ে বায়ু পাঠিয়েছি

সিধা ফুসফুসে

নাড়িভুঁড়ি ভরিয়ে দিয়েছি রিরংসাবিকৃত বিষময় বাতাসে

আধপেটা খাওয়া শিশুকামলা

তোর দেহখানা কমজোরি হলে—

কার কী করার থাকে বল!

কারো কিছু বলারও কী আছে—

বিকারবিহীন এ বাংলাদেশে?

এসব দেখে-শুনে ক্রোধে রক্ত

টগবগ ফোটে না আর

ভয়াবহতার উপলব্ধিতে জমাটও বাঁধে না হিমের মতো—

কাফকার ডি ফাবান্তলুংক বাস্তবে ঘটে শুধু

বাহ্যিক নয় সেই রূপান্তর—

সম্পূর্ণ নয়া বঙ্গ-সংস্করণ

শিরায় শিরায় না-মানুষি উপকরণ!

 

‘মুক্তি’-পণ

(২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : ঢাকার কেরানীগঞ্জে উদ্ধার করা হয় স্কুলছাত্র আবদুল্লাহর (১১) গলিত মরদেহ)

টাকাই তো চেয়েছিলাম

শুধু টাকা—

টাকা না থাকলেই মাথা ফাঁকা!

জানিস না মাথা ফাঁকা হলে

কী না কী না করা চলে!

        অপহরণ তো নস্যি ব্যাপার

        খুন করতেও দুবার ভাবি না আর!

বড়দের বাগে আনতে যদিও

একটু বেগ পেতে হয়

শিশুদের ক্ষেত্রে হত্যাটত্যা জলবৎ তরলং

মানে, জলের মতো সোজা প্রায়!

 

চার অক্কে চার

(১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : হবিগঞ্জে নিখোঁজ চার শিশুর বালুচাপা দেওয়া লাশ পাওয়া যায়)

এক ঢিলে দুই পাখি?

নাহ্ ভাই, সক্ষমতা বেড়েছে মোদের ঢের...

একসঙ্গে চার পাখি, থুক্কু, চার শিশু মারতে পারি—

দিতে পারি বালুচাপা

একটুও কাঁপে না বুক!

বিশ্বাস হয় না বুঝি

দেখ তবে আমার চোখে শিশুবধের সুখ!

আমায় চিনছিস না? আমি কে?

কেনরে করছিস ফালতু বকওয়াস

আমি বাংলাদেশের প্রতিস্পর্ধী

        আমি সময়ের লেবাস!