অক্টাভিও পাজের কবিতা

আমাকে শোনো যেভাবে কেউ বৃষ্টিকে শোনে

Looks like you've blocked notifications!

অক্টাভিও পাজ একজন কবি, লেখক ও কূটনীতিক। ১৯১৪ সালের ৩১ মার্চ মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে জন্মেছিলেন তিনি। ছোটবেলায় দাদার ব্যক্তিগত পাঠাগার ছিল তাঁর দুনিয়া। আর এই দুনিয়াই তাঁকে পরবর্তী সময়ে কবি ও লেখক হিসেবে তৈরি করে।

১৯৩৩ সালে প্রকাশিত হয় অক্টাভিও পাজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লুনা সিলভেস্ত্রে’।  এর কয়েক বছর পর ১৯৩৮ সালে ‘টলার’  নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন তিনি। পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন পাজ নিজেই।

অক্টাভিও পাজের কাব্যগ্রন্থ ২০টির বেশি। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান অক্টাভিও পাজ।

১৯৪৫ সালে মেক্সিকো সরকারের হয়ে কূটনীতিক হিসেবে কাজ শুরু করেন অক্টাভিও। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ভারতে মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অক্টাভিও পাজ। তবে পরে সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। ১৯৯৮ সালের ১৯ এপ্রিল মারা যান অক্টাভিও পাজ। 

আজ অক্টাভিও পাজের ১০২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর চারটি কবিতার বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করা হলো।

স্পর্শ

আমার হাত

তোমার অস্তিত্বের পর্দা সরিয়ে

গহিনতর নগ্নতার চাদর জড়ায়

উন্মোচিত করে তোমার শরীরের শরীরগুলোকে

আমার হাত

শরীর জন্ম দেয় তোমার শরীরের জন্য

 

সেতু

এখন আর এইক্ষণের মাঝে,

আমি আর তুমির মাঝে,

সেতু নামের শব্দ।

সেখানে প্রবেশ করতেই

তুমি তোমার মাঝে অন্তরীণ হও :

পৃথিবী যুক্ত হয়

আর চক্রের মতো বন্ধ হয়ে আসে।

এক কূল হতে অন্যতে,

প্রতিবারই

প্রশস্ত এক শরীর :

এক রংধনু।

তার গহিন কোলে ঘুমোব আমি।

 

পথ

এই যে দীর্ঘ, স্তব্ধ পথ।

ঘোরের মধ্যে হাঁটি, হোঁচট খাই, গড়িয়ে পড়ি,

উঠে দাঁড়াই, অন্ধের মতো চলি, পায়ের তলা

মাড়িয়ে যায় নীরব পাথর আর শুকনো ঘাস।

আমার পেছনে কেউ একইভাবে পেরোলে পাথর আর ঘাস :

আমি থামতেই, সেও থামে;

দৌড়োতেই, সেও দৌড়োয়, ঘুরে দেখি : কেউ না।

সবকিছু অন্ধকার, দরজাহীন

শুধু পায়ের শব্দ অস্তিত্বের সাড়া দেয়,

এইসব প্রান্ত ধরে আমি ঘুরছি তো ঘুরছিই

যা চিরতরে পথের দিকে চলে গেছে

যেখানে কেউ অপেক্ষা করে না, পিছু হাঁটে না,

যেখানে আমি এমন একজনকে খুঁজে পেয়েছি যে হোঁচটের পর

উঠে দাঁড়িয়েছে, আমার দিকে তাকিয়ে বলছে : কেউ না।

 

আমাকে শোনো যেভাবে কেউ বৃষ্টিকে শোনে

আমাকে শোনো যেভাবে কেউ বৃষ্টিকে শোনে,

মন দিয়ে নয়, দিশেহারা হয়ে নয়,

ছোট ছোট পায়চারি, ধারহীন বৃষ্টি,

যে জল বাতাস, যে বাতাস সময়,

দিন যা ছুটছে এখনো,

রাত যা আসতে বাকি,

কুয়াশার গড়নগুলো

যেখানে ঘুরে গেছে বাঁকটা,

সময়ের শরীরগুলো

নেমে গেছে ঢাল বেয়ে,

আমাকে শোনো যেভাবে কেউ বৃষ্টিকে শোনে,

না শুনেই বুঝে নাও যা বলতে চাইছি

চোখ উন্মুক্ত, ঘুমন্ত

পাঁচ ইন্দ্রিয় জাগিয়ে রেখে,

বৃষ্টি হচ্ছে, ছোট ছোট পায়চারি, ধ্বনিদের ফিসফাস,

বাতাস আর জল, তুলোর মতো শব্দগুলো :

কী আমরা, কী এই

দিন আর বছরগুলো, এই মুহূর্ত,

তুলোর মতো সময় আর বিদীর্ণ দুঃখ,

আমাকে শোনো যেভাবে কেউ বৃষ্টিকে শোনে,

জ্বলছে ধোঁয়া পিচ,

উড়ছে বাষ্প আর সরে যাচ্ছে দূরে,

রাত তার ভাঁজ খোলে আর আমার দিকে তাকায়,

তুমি আসলে তুমি আর তোমার বাষ্পের শরীর,

তুমি আর তোমার রাতের মুখ,

তুমি আর তোমার চুল, নীরব বজ্রপাত,

তুমি পার হও রাস্তা আর প্রবেশ করো আমার কপালে,

জলের পায়চারি আমার চোখজুড়ে,

আমাকে শোনো যেভাবে কেউ বৃষ্টিকে শোনে,

জ্বলছে ধোঁয়া পিচ, তুমি পার হও রাস্তা,

এইসব কুয়াশা, বিহ্বল হওয়া রাত,

এইসব রাত, তোমার বিছানায় ঘুমিয়ে,

এইসব তরঙ্গ, তোমার নিঃশ্বাসে ফুঁসছে,

তোমার জলের আঙুল আমার কপাল ভেজায়,

তোমার আগুনের আঙুল আমার চোখ পোড়ায়,

তোমার বাতাসের আঙুল খোলে সময়ের চোখজোড়া,

স্বপ্ন ও পুনর্জাগরণের বইছে স্রোত,

আমাকে শোনো যেভাবে কেউ বৃষ্টিকে শোনে,

বছর গড়ায়, ফিরে আসে মুহূর্ত,

পাশের ঘর থেকে শোনা যায় কি পায়চারি আর?

এখানে নয়, ওখানেও না : তুমি শোনো তাদের

অন্য এক সময়ে যা আসলে এখন,

শোনো সময়ের পায়চারি,

তুলোর মতো স্থানগুলো সৃষ্টি যার, কোথাও নেই সে,

শোনো কীভাবে বৃষ্টি গড়াচ্ছে টেরেসে,

এই রাত যেন পরিপূর্ণ এক রাত বনের পথে,

বজ্রেরা বাসা বেঁধেছে পাতার আবডালে,

অস্থির এক অরণ্য লাগামহীন ছুটছে,

কবিতার পাতা তোমার ছায়ায় ঢাকা পড়ছে।