ওবায়েদ আকাশের তিনটি কবিতা

Looks like you've blocked notifications!

বৃক্ষ সম্পর্কিত অভিসন্দর্ভ

যে যার মতো বৃক্ষটি ধরে

ভাসিয়ে দিলে রাতের আঁধারে, সমুদ্র সলিলে

আর তোমরাই তো গাছের আঙুল গাছের নিঃশ্বাস দিয়ে

গড়েছিলে সুউচ্চ ইমারত

ধূসর বাকলে বনৌষধি আর

সহসা পরিবেশ বাঁচাও পৃথিবী বাঁচাও জাতীয়

সবুজের মেলায় টাঙিয়েছিলে

যে কোনো বৃক্ষ নিধনের বিপরীতে সুদৃশ্য নিষ্কৃতি

জানি, মানুষ চিরদিন ভয় করে সত্যদ্রষ্টা বৃক্ষ

ভয় করে গাছের গৌরব ভেঙে শেখা ইতিহাস

এবং বৃক্ষের সেই অভ্রান্ত ধৈর্যধারণের ক্ষমতা

এখন যে এসব করে সন্তর্পণে পালাতে চাইছ

তাও একদিন বৃক্ষের ছায়ায় পরস্পর বলাবলি করে

জানিয়ে দিয়ে গেলে

এবং বৃক্ষ সম্পর্কিত তোমাদের সদর্থক গবেষণা শেষে

যা কিছু অভিসন্দর্ভ মলাটে বাঁধিয়ে নিয়েছ

তাতে, সাম্প্রতিক পঙ্গুত্ব ঠেলে বেরুতে পারছে না

একটিও পল্লবিত গাছ

কারো পা আছে তো মাথা নেই

ঘা আছে তো ওষুধ নেই

শেকড় আছে শাখা নেই জাতীয় কত না বাহানা

অপঘাত

যতই গোধূলি-বার্তা, জলের কোমর, স্তন, ঊরুর

দাফতরিক প্রলোভন দেখিয়ে বলো, এসো বৃষ্টিতে

প্রবল ঝড়ের শেষে মেঠো রাস্তার রাত্রিরহস্যে

বাঁশঝাড় নুয়ে পড়া দেখে বলো আনত হতে

মধ্যরাতে থৈ থৈ জল ভেবে ডাঙায় মাছ শিকারের মতো

আত্মসুখ ছাড়া কিছুই মিলবে না

অথচ বিদ্যাসাগরের গদ্যে তোমার উচ্ছ্বাসহীনতা এবং

ডারউইনের ব্যাখ্যায় তোমার অবিচল অনাস্থা থেকে

স্বীয় মুখ কাগজে ঢেকে কতকাল হলো

পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রের তলদেশ মুখস্থ করে এলে

এবং একবার হেসে একবার ডুবে মোহাচ্ছন্ন আকাশে

নাক্ষত্রিক জীবনের মূল্যে নিজেকে আড়াল করে ছিলে

এখন খড়বিচালির গাদায় দাহ-সভ্যতার ওপার হতে

তোমার ইশারা আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো শঙ্কিত

তোমার মুখ আলো অন্ধকারের ছলনার মতো

কখনো করুণ কখনো বিদগ্ধ

আর হঠাৎ মৌসুমি হাওয়ায় শান্ত-দীর্ঘ জলের গ্রীবায়

স্থিরীকৃত তোমার আহ্বান

সামূহিক অপঘাতে দেখি শীতল সমুদ্রে ভাসছে

দীর্ঘশ্বাস

গাছের বাকল থেকে বেরিয়ে এসেছে উন্মাদনা

তার হাতে সিন্দুকের চাবি-

দেখে, গত শতকের বিপ্লবের আয়ু

প্রাচীন সিন্দুক ভেঙে কিছুতে বেরুতে পারছে না

মেঘের কাছে অঙ্গুলি তুলে : বৃষ্টি

চাঁদের কাছে নির্ভরতা চেয়ে : আলো

চলছিল কথোপকথন...

অথচ অব্যর্থ সমীকরণ থেকেই

উচ্চারিত হলো প্রবুদ্ধ বৃক্ষের নাম

নতুন শতকের পাতায় পাতায় এখন

জল কিংবা স্মৃতির বোঝাপড়া