রবীন্দ্রনাথ আমাদের আত্মার চারদিকে অসংখ্য সবুজ বৃক্ষের চারা রোপণ করেছিলেন

Looks like you've blocked notifications!

মানুষের চোখের বালি অপসারণে প্রেমিক বাঙালির নিভৃত ঘরে কোনো ডুবুরির খোঁজ মিলেছিল কি না, তা যেমন বিবেচ্য আজো, তেমনি কালান্তর-এর মতো অনবদ্য গ্রন্থ রচনা করেও মানুষের ধর্মীয় ও সম্প্রদায়গত সুচেতনাগুলো কেন ওঠেনি জেগে ভাবতে ভাবতে একদিন ক্যামেলিয়ার সঙ্গে ভ্রমণে বেরিয়ে মনে পড়ে গেল আজ অবিনাশ ঘোষালের জন্মদিন। অবিনাশের ৩২তম জন্মদিনের নিমন্ত্রণে এসে কতিপয় উৎসুক পাঠক আজই প্রথম তাঁর ভ্রমণের চিত্ররূপ চাক্ষুষ করবে বলে গভীর উৎকণ্ঠায় আছে। অথচ সন্ধ্যাবেলায় কার সম্মানে প্রদীপ জ্বলেছিল, তা আজও রহস্যই থেকে গেল। রবীন্দ্রনাথ একজন দক্ষ পরীক্ষক হিসেবে নিজের উপন্যাস পর্যালোচনায় যোগাযোগকে কত মার্কস দিয়েছিলেন, এ প্রশ্ন অনেকের মনের। যেমন কাদম্বরীর মৃত্যুতে রবীন্দ্রনাথ-মৃণালিনী পরিণয়ের কোনো সংযোগ ছিল কি না, বাংলা ভাষায় এমন অমীমাংস্য জিজ্ঞাসা খুব বেশি নেই। একবার সুরবালা ও হৈমন্তীকে পদ্মাপারের সব জমিদারিত্বের খেসারত দিতে দেখেছি, এভাবে স্ত্রীর পত্র ও মধ্যবর্তিনী সম্পর্কে যা ধারণা করে বসে আছেন, তা নিয়ে মৈত্রেয়ীর সঙ্গে তাঁর মতবিনিময় প্রকৃত সত্যের হেরফের ঘটাতে পারত বৈকি। আজকাল আমাদের রক্তকরবীর রবীন্দ্রনাথ কখনো গীতবিতান, কখনো সঞ্চয়িতা বুকে চেপে মাধ্যমিক পাড়ি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, প্লেনে চড়ে সারা পৃথিবী ঘোরেন; অথচ সপ্তম শ্রেণির এক খুদে বালক একবার ইংল্যান্ড পৌঁছান প্রায় ২৪ দিন জাহাজ ভ্রমণের পর। ইংরেজদের ঘিরে তাঁর এই অদম্য আগ্রহ সত্ত্বেও রাশিয়া ও চীন ভ্রমণ প্রাক্কালে তাঁর হাতঘড়ি ও টুথপেস্টের মতো প্রয়োজনীয় টুকিটাকি ফেলে রেখেই দেশে ফিরে আসেন যেন বারবার ভ্রমণের মতো অনিবার্যতা তৈরি হয় তাতে। জোড়াসাঁকোর উপাসনালয় থেকে যখন শ্রীনিকেতন ও শান্তিনিকেতন দৃষ্টিগোচর ছিল, তখন শাহজাদপুর ও শিলাইদহ বেড়াতে এসে ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় ঋণ আদায় করতে না পারার এক চমৎকার নজির স্থাপন করেন। আর এই অনাদায়ের ব্যর্থতার কাঁটাতার ছিঁড়ে লালনের সব একতারা কিনে পদ্মায় নৈবেদ্য দিতে চান। ধারণা করি, সাঁইজির মতো জাতহীন সাধকই পারেন রবিদার মতো একজন কঠিনেরে ভালোবাসা মানুষের শোকতাপ-ব্যর্থতা সকল ভুলিয়ে দিতে। ইয়েটসের সঙ্গে তাঁর বনিবনা তেমন হতো না, যদি না তিনি নদীর কলধ্বনি, ঝরাপাতার গান গীতাঞ্জলির ভাষায় শোনাতেন তাঁকে। কিংবা তিনি সোনার তরীতে চড়ে নিরুদ্দেশ যাত্রায় সঙ্গে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছিলেন কি না, তা অনেকের অজ্ঞাত। হঠাৎ দেখা গেল, এমন অনেক অনিবার্যতা অসমাপ্ত রেখেই বহু বছর আগে বিশ্বভারতীর দোতলার কামরায় শুয়ে দেয়ালের রংগুলো মুছে দিতে বলে আমাদের জীবনের জলছবি নির্মাণে চূড়ান্ত ইস্তফা দিলেন রবীন্দ্রনাথ।