কথার মন্তাজ
ছবির কাজ শুরু করতে চাই : মেজবাউর রহমান সুমন
বাংলাদেশের টিভি নাটকে এক ঘণ্টার বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে নতুন ধরনের গল্প বলা শুরু করে যে প্রজন্ম, সেই প্রজন্মের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র মেজবাউর রহমান সুমন। শুরুটা করেছিলেন ‘অরুপার কাছে যাচ্ছি’ দিয়ে ২০০৬ সালে। আলোচনায় আসেন ‘দখিনের জানালাটা খোলা আলো আসে আলো ফিরে যায়’ করে। এর পর বানিয়েছেন ‘শহরতলীর আলো’, ‘প্রেম ও পরাবাস্তবতা’, ‘তারপর পারুলের দিন’, ‘জোছনা নদী ও রশিদের কিছু কল্পদৃশ্য’, ‘স্মিতা, সাদা জামা এইসব’, ‘তারপরও আঙুরলতা নন্দকে ভালোবাসে’, ‘ফেরার পথ নেই থাকে না কোনোকালে’, ‘শেষ বলে কিছু নেই’, ‘সুপারম্যান’-এর মতো আলোচিত সব টিভি নাটক। ‘কফি হাউজ’ এর মতো জনপ্রিয় ও আলোচিত ধারাবাহিকের নির্মাতাও তিনি। এর পর শুরু করেন বিজ্ঞাপন নির্মাণ। নিজের প্রতিষ্ঠান ‘ফেইসকার্ড’ থেকে এরই মধ্যে জনপ্রিয় কিছু বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেছেন। আছেন গানের সঙ্গেও। জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘মেঘদল’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, গীতিকার ও গায়ক। ‘দ্রোহের মন্ত্রে ভালোবাসা’ ও ‘শহরবন্দী’ নামে দুটি অ্যালবাম রয়েছে মেঘদলের। তৃতীয় অ্যালবাম ‘অ্যালুমিনিয়ামের ডানা’র কাজও গুছিয়ে এনেছেন প্রায়। চলচ্চিত্র, নাটক, বিজ্ঞাপন ও গান নিয়ে দুই ঘণ্টার চতুর্মুখী আলাপচারিতায় পাওয়া গেল তাঁকে।
প্রশ্ন : অনেক দিন আপনার কোনো নাটক টিভিতে যাচ্ছে না। কেন?
মেজবাউর রহমান সুমন : চারুকলার পেইন্টিং ডিপার্টমেন্টে আমাদের প্রথম ক্লাসটি নিয়েছিলেন রফিকুন নবী স্যার। সেই প্রথম ক্লাসেই উনি বলেছিলেন যে, এই ক্লাসে যে ৬৫ জন আছে তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ দুজন ছবি আঁকবে আর বাকি ৬৩ জনই ছবি আঁকবে না। উনি যখন এ কথা বললেন তখনই আমার মনে হলো, আমার মনে হয় হবে না। মানে দুজনের মধ্যে থাকার এই প্রতিযোগিতায় আমি কখনোই ছিলাম না। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করিনি, প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট কিংবা সেকেন্ডও হতে পারিনি। তখনই আমি বুঝলাম যে, আমি এই দুজনের বাইরে থাকবে, আরো অনেক কিছুরই বাইরে থাকব, তাই আমার আর ছবি আঁকা হয়নি।
ফিকশনের ব্যাপারটাও আসলে ওই রকমই। অনেকদিন ধরে কাজ করছিনা, আমার মত অনেকেই হয়তো কাজ কমিয়ে দিয়েছে। এ রকম অনেকেই থাকবে না। কিন্তু আবার একেকজন একেক রকমভাবে থাকবে। যেমন, আমি ছবি আঁকার সঙ্গে সরাসরি নাই কিন্তু আমার কাছে মনে হয় যে আমি সরে যাইনি, আমি মাঝেমধ্যে ছবি আঁকি এখনো, ছবি আঁকা ছাড়িনি কিন্তু ছবি আঁকাটা আমার পেশা হয়ে ওঠেনি। তবে আমার নাটক, গান, বিজ্ঞাপন সবকিছুতেই এই ছবি আঁকার অভিজ্ঞতাটা কাজে দিয়েছে। আমি এখন ফিল্ম করতে চাচ্ছি। আমার মনে হয় ফিল্মের মধ্যেও সেই ছবি আঁকাটা চলে আসবে। সেভাবেই নাটক বানানো থেকেও সরে যাইনি, আছি, অন্যরকমভাবে আছি, বিজ্ঞাপন বানাচ্ছি।
প্রশ্ন : কয়েক বছর ধরে এটা অনেকটা নিয়মের মতো হয়ে গেছে। সবাই প্রথমে নাটক দিয়ে শুরু করে, তারপর হয়তো সিরিয়াল বানায় বেশ কয়েকটা, এর পর বিজ্ঞাপনের দিকেই চলে আসে। এটা কিসের জন্য? বিজ্ঞাপনে আর্থিক নিরাপত্তা রয়েছে সে জন্য নাকি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমটা অনেক বড়, এখানে গুছিয়ে কাজ করা যায়?
মেজবাউর রহমান সুমন : বিজ্ঞাপনের দিকে কিন্তু সবাই আসছে না বা আসে না। আমাদের দেশে এখন কিন্তু ফিল্ম, বিজ্ঞাপন বা নাটক নির্মাণের বিষয়টা পেশা হিসেবে উঠে আসছে। মানে আগে কিন্তু একটা ছেলে বা মেয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে টিকে থাকতে পারত না। সে আসলে একজন ডিরেক্টরের সঙ্গে অনেক দিন কাজ করত তারপর সে নিজেই ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করা শুরু করত। এ রকমটা হতে পারে। কারণ আগে আমাদের দেশে ফিল্ম বা ভিজ্যুয়াল প্রোডাকশনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সে কারণে এভাবেই আরেকজনের সঙ্গে কাজ করা ছাড়া কাজ শেখার আর কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু যেসব ইন্ডাস্ট্রিতে ফিল্ম অনেক এস্টাবলিশড একটা ফর্ম সেখানে কিন্তু একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরের কাজই এটা থাকে। সে ধরেই নেয় যে সে সারা জীবন অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর হিসেবেই কাজ করবে। হয়তো ফোর্থ এডি হিসেবে সে কাজ করা শুরু করে, তার লক্ষ্য থাকে ফার্স্ট এডি হওয়া। ও কিন্তু কখনোই ডিরেক্টর হতে চায় না। ব্যাপারটা আসলে এ রকমই।
আপনি কবিতা লিখতে পারেন দেখে আমারো মনে হলো যে আমি কবিতা লিখতে পারি- এভাবে ভাবলে আসলে হবে না। এটা তো আমার মধ্যে থাকতে হবে। ফিল্মমেকিংটাও এ রকম। একটা ক্লোজআপ, একটা মিডশট, আর লংশট জানতে পারলেই কিন্তু একজন ডিরেক্টর হয়ে যায় না। ডিরেক্টর নিজে থেকেই তৈরি হয়, তার নিজের এক ধরনের বক্তব্য থাকে, প্রকাশ ভঙ্গিমা থাকে—যেটা সে ফিল্মের মাধ্যমে এক্সপ্রেস করতে চায়। সেও এক ধরনের কবির মতো বা গল্পকারের মতো নিজের ভিজ্যুয়ালটা দর্শকদের সামনে হাজির করে।
আমাদের এখানেও এটা আস্তে আস্তে হচ্ছে মানে একজন এডি (অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর) হিসেবে সারভাইভ করতে পারছে। আমরা ফিকশন করে যেটা পারছিলাম না। এটা করতে না পারার একটা সময়ে গিয়ে মনে হয়েছে যে আমাদের জন্য প্রথমে সারভাইভ করাটা অনেক জরুরি। আজকে আমার একটা টিম আছে। আমার সঙ্গে প্রায় ১৫-১৬ জন লোক কাজ করছে। এটা টেলিভিশন নাটক বানিয়ে আসলে সম্ভব ছিল না। আমার একটা অফিস আছে, সেটআপ আছে, এখানে আমি পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ করি, প্রি-প্রোডাকশন করতে পারি। আমার নিজস্ব এডিট প্যানেল আছে, সাউন্ড স্টুডিও আছে। আজ থেকে পাঁচ বছর আগেও এসব কিছুই আমার ছিল না। আমি রাস্তার চায়ের দোকানে বসে আমার নাটকের প্রি-প্রোডাকশন করতাম। তেজগাঁয়ের একটা চায়ের দোকানে বা মনিপুরীপাড়ার একটা চায়ের দোকানে আমি আর আমার দুজন এডি মিলে বসতাম যে আমরা কী করব না করব। ওখান থেকেই লোকেশন রেকি করতে পাঠানো, ওখান থেকেই আর্টিস্ট কল দেওয়া। কিন্তু এটা আসলে শুরুটার জন্য সুন্দর। ওই সময়গুলোর কথা ভাবলে এখনো রোমাঞ্চিত হই। কিন্তু এই যে আমি ১০ বছর ধরে কাজ করছি, সেটার জন্য এটা সুন্দর না। এটার জন্য একটা ফরম্যাট দরকার।
একটা সিনেমা বানানোর জন্য নাবিকের থেকেও বেশি জরুরি হয়ে যায় অসংখ্য দক্ষ কর্মী। সেই চর্চাটাই আমরা এখন বিজ্ঞাপন বানানোর মাধ্যমে করতে পারছি। এভাবেই কেউ কেউ হয়তো ডকুমেন্টারি বানাচ্ছে, কেউ নাটক বানাতে বানাতে সিরিয়াল বানাচ্ছে। সিরিয়াল কিন্তু সারভাইভ করার জন্যই। তো, ঘুরেফিরে সেই টিকে থাকার ব্যাপারটাই কিন্তু আসছে।
প্রশ্ন : টিভি নাটকে এখন অনেকটাই একই ধরনের গল্প বা নির্মাণ দেখা যায়। যেটা আপনাদের সময় ছিল না। মানে সাহিত্যনির্ভর কাজ বা ভালো মৌলিক গল্প নিয়ে অনেক কাজ হতো। এখন সেটা কম দেখা যায়। গল্পের বা নির্মাণের এই শূন্যতা কেন টিভি নাটকে?
মেজবাউর রহমান সুমন : এটা আসলে দীর্ঘ আলোচনার বিষয়। কেন হচ্ছে না, কেন হচ্ছে? আমাদের সিনেমা যেমন হচ্ছে না, সেটা একটা দীর্ঘ আলোচনা। ফিকশনের জন্য আমার কাছে মনে হয় যে একটা সময়ে কিছু নির্মাতা নতুন ধরনের গল্প দর্শকদের সামনে হাজির করা শুরু করেন। যদি নাম ধরে বলি, তাহলে সাইদুল আনাম টুটুলের নাম বলা যেতে পারে। আমাদের আতিক ভাই, নুরুল আলম আতিক ভাইয়ের নাম বলা যেতে পারে। গিয়াসউদ্দিন সেলিম, অনিমেষ আইচ এবং দিনশেষে আমার নামটাও বলতে পারি। আরো অনেকের নাম হয়তো এখন মাথায় আসছে না।
এরা প্যাকেজ নাটকের ফর্মুলার কাজ থেকে বের হয়ে নতুন ধরনের গল্প বলতে চাচ্ছিল। মানে প্রেমের গল্প, দুজন ছেলে, একজন মেয়েকে নিয়ে ড্রয়িং রুম মার্কা গল্প সেটা থেকে তারা সরে গিয়ে কেউ কেউ গ্রামের গল্প বলল, কেউ কেউ শহর, কেউ মফস্বলের গল্প বলল। সেই গল্পগুলোর মধ্যে ড্রয়িং রুম, ডাইনিং স্পেস থাকল না, আমাদের পাড়ার মোড়, গলির দোকান চলে আসল।
মানুষের এই ধরনের গল্প বলার ক্ষেত্রে আমাদের ফারুকী ভাইও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। সেটা কিন্তু আমাদের গল্প। মানে নায়িকা প্রচণ্ড ভারী মেকআপ নিয়ে আর ড্রয়িংরুমে বসে সংলাপ বলছে না। এই ফর্মুলাটা তারা ভেঙে দিল। আবার তাদের কাজের ধারাটা কিন্তু আলাদা ছিল। যেমন, আতিক ভাইয়ের কাজগুলো অনেক বেশি পোয়েটিক, আবার সেলিম ভাই তেভাগা আন্দোলন নিয়ে ফিকশন বানিয়েছেন। আবার ফারুকী ভাই মফস্বলের ছেলেমেয়েদের যে প্রেম, ব্যাচেলর লাইফের যন্ত্রণা সেগুলো তুলে আনলেন। কারণ তিনি নিজেও তখন ব্যাচেলর ছিলেন (হাসি)।
এভাবে আমাদের চারপাশে যে গল্পগুলো আছে সেগুলোই সরাসরি টিভিতে তুলে দেওয়া হলো। ফলে ফেক স্টোরি টেলিংয়ের বদলে মানুষের নিজস্ব গল্পটাই চলে এলো। ফলে এই নির্মাতারা আমাদের মধ্যবিত্ত দর্শকদের কাছে অনিবার্য হয়ে পড়লেন। সেই ধারাবাহিকতায় অনিমেষ দা এলেন, আমি আসলাম। অনিমেষ দার কাজটা আবার একেবারে আমাদের যে অভিজ্ঞতা বা জীবন সেটা হাজির করলেন। আমি কাজ করলাম সম্পর্কের গল্প নিয়ে। সম্পর্কের জীবনের যে অন্য বোধ, ক্রিয়া আছে সেটা আমি বোঝাতে চেষ্টা করলাম। সেটা ‘আঙুরলতা’র মধ্যে আছে, ‘জোছনা নদী’র মধ্যে আছে, ‘পারুলের দিন’-এর মধ্যে আছে। কিন্তু এই গল্পগুলো কিন্তু আগে আমরা টিভিতে দেখাতে পারতাম না। সেটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। টেলিভিশনের কর্তাব্যক্তিরা নানা প্রশ্ন করত তখন, আমাদের নাটকে এত দুঃখ কেন? সুখ খুঁজে পাওয়া যায় না কেন? মজার ব্যাপারটা হচ্ছে আমরা যখন ফিকশন থেকে দূরে সরে গেলাম, তখন তারাই বলছে, আমাদের এই গল্পগুলো দরকার। কারণ তত দিনে দর্শক আমাদের গল্পগুলো পছন্দ করে ফেলেছেন।
এখনো আমি যে এত বছর কাজ করি না, ঈদ এলে দর্শকরা জানতে চান নতুন কোনো কাজ আসছে কি না? এই যে একটা পরিবর্তন, সেটা আবার দরকার। এখন যারা কাজ করছে টিভিতে তারা সেই পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে না। তারা ধারাবাহিকতা রাখছে ফারুকী ভাইয়ের। অথবা যারা একটু অলটারনেটিভ ফিকশন বানাতে চায় তারা ধারাবাহিকতা রাখছে আতিক ভাইয়ের, গিয়াসউদ্দিন সেলিম ভাইয়ের, অনিমেষ দার বা আমার। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে রেভল্যুশনটা হবে না। আমরা যে কাজ করেছি সেটাকে ভেঙে দেওয়া উচিত। নতুন ফর্মে গল্প বলা উচিত যেটা আমরা গত পাঁচ-সাত বছর ধরে অনুপস্থিত দেখছি। সেটা চালু থাকা উচিত। মানে নতুন গল্প কেন আসছে না? সেই প্রশ্নটা আসলে যারা কাজ করছে তাদের কাছেই করা উচিত।
তবে আমি নিশ্চিত যে নতুন ধরনের গল্প বলা শুরু হবে। নতুন কেউ একজন আসবে যে তার গল্প বলা শুরু করবে। মানে এটা প্রচলিত একটা পদ্ধতি। যে আগের কাজকে ভেঙে দিয়ে নতুন ধরনের কাজ করা। পৃথিবীর সব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেই এটা হয়। ১০ বছর পর পর দেখবেন নতুনদিকে মোড় নিচ্ছে। হিন্দি সিনেমা বা হলিউডেও দেখবেন এটা নিয়মিত হয়।
প্রশ্ন : এই পরিবর্তনে টেলিভিশনের ভূমিকাটা কেমন?
মেজবাউর রহমান সুমন : আমাদের টিভির কিন্তু এটা খুবই ভালো দিক। আমি বাইরের টিভি চ্যানেলগুলো যখন দেখি, ওদের অনেক সুন্দর সুন্দর অনুষ্ঠান আছে, অনেক গ্ল্যামারাস সিরিয়াল আছে, অনেক গোছানো কাজ কিন্তু এই যে এক ঘণ্টার একটা গল্প বলা, এই সুযোগটা ওদের নাই। এটা আমাদের টিভির খুবই ইতিবাচক একটা দিক আমি বলব। আমাদের টেলিভিশন নতুন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য একটা প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড হিসেবে কাজ করছে। এ কারণে আমরা টিভিতে বেশ ভালো কিছু কাজ পেয়েছি, যেগুলো দিয়ে ভালো চলচ্চিত্র হতে পারত। যেমন : অনেকেই বলেন, আমার ‘তারপরও আঙুরলতা নন্দকে ভালোবাসে’ ভালো চলচ্চিত্র হতে পারত। আমার মনে হয় টেলিভিশনের এ ধরনের গল্প বলা চালু থাকা উচিত। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে আমাদের টেলিভিশন এখনো কোনো ডিজাইন বা ফরম্যাটে আসেনি। এটা হয়ে গেলে আর সমস্যা থাকবে না। কারণ আমাদের দেশে এখন ফিল্ম ইনস্টিটিউট আছে। সেখান থেকে ছেলেমেয়েরা বের হয়ে কাজ শুরু করবে। আগে কিন্তু মানুষ সরাসরি ছবি বানাত। মানে প্রথমেই সিনেমা দিয়ে শুরু করতে হতো। তার আর কোনো উপায় ছিল না। এখন কিন্তু টেলিভিশন বা বিজ্ঞাপনে কাজের সুযোগ আছে। আমার মনে হয় সরাসরি ছবিতে না গিয়ে এই প্র্যাকটিসটার মধ্যে দিয়ে আসা উচিত। আমি বলব, এটা পজিটিভ। টেলিভিশন থেকে আমরা আরো ভালো ডিরেক্টর সামনে পাব।
প্রশ্ন : আপনার চলচ্চিত্র নির্মাণের কী খবর?
মেজবাউর রহমান সুমন : চলচ্চিত্রের কাজ বেশ খানিকটা গুছিয়ে এনেছি। তবে এখনো নাম ঠিক করিনি, নামটা খুঁজছি। গল্পটা তৈরি, চিত্রনাট্যের একটা ড্রাফট করে ফেলেছি, আরো অনেক ড্রাফটে যাব। আমি আসলে গত বছর শুরু করতে চেয়েছিলাম। আমার অনেক তাড়াহুড়া নাই, এ বছর শুরু করতে চাই, না হলে আগামী বছর।
প্রশ্ন : চলচ্চিত্রের গল্প সম্পর্কে কোনো ধারণা কি দেবেন?
মেজবাউর রহমান সুমন : ( হেসে) গল্প নিয়ে এখনই কিছু বলতে চাইনা। এটা একটা নারীপ্রধান গল্প। আমার গল্পের প্রধান চরিত্র একজন নারী এবং তার জীবনের একটা লম্বা জার্নি এবং এই মেয়েটা আমাদের এই অঞ্চলের একটা পরিচিত ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।
প্রশ্ন : নারীপ্রধান গল্প কেন বেছে নিলেন?
মেজবাউর রহমান সুমন : আমার টেলিভিশনের কাজগুলোও কিন্তু সব নারীপ্রধান গল্প নিয়েই। আমার মনে হয়, আমি নারীদের গল্প, তাদের জীবন, সংগ্রাম ও নারী-পুরুষের সম্পর্কের গল্প বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমার বেশির ভাগ টিভি নাটকের নামও কিন্তু নারীপ্রধান চরিত্রের নামেই দেয়া। পুরুষের গল্প আমি অনেক কম বলেছি। কিন্তু নারীর গল্প নিয়ে আমার ভয়ংকর রকম আগ্রহ আছে। যেমন : ভ্যান গগের ছবিতে কিন্তু হলুদ রংটা বারবার চলে এসেছে। সেটা সে হয়তো সচেতনভাবে আনেনি কিন্তু তার মধ্যে ছিল তাই চলে এসেছে। আমারও সেরকম নারীর গল্প নিয়েই বেশি কাজ করা হয়েছে। তবে সেটা ইচ্ছাকৃত নয়।
প্রশ্ন : আপনার চলচ্চিত্রে কোনো ভারতীয় অভিনেত্রীকে কি পাওয়া যাবে? এখন অনেকেই ভারতীয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে চলচ্চিত্র বানাচ্ছেন।
মেজবাউর রহমান সুমন : অনেকে হয়তো ব্যবসায়িকভাবে চিন্তা করে ভারতীয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নেয়। আমি যদি ভারতীয় কোনো অভিনেত্রীকেও নেই সেটা বাণিজ্যিক কারণে নেব না। আমি চাই আমার আশপাশের থেকে কাউকে এই চরিত্রটা করার জন্য। এত শক্তিশালী একটা চরিত্র, আমি আসলে বুঝতে পারছি না, এটা কে করতে পারবে। আর ভারতীয় কাউকে যদি নিতেই হয়, সেটা নিরুপায় হয়েই নেব। মানে কেউ বলতে পারবে না যে আমাদের দেশের অমুক বা তমুক তো এই চরিত্রটা করতে পারত। তবে আমার মনে হয় আমি নতুন কাউকেই নেব এই চরিত্রটি করার জন্য। একেবারে নতুন বা কম পরিচিত কাউকে নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে।
প্রশ্ন : নতুন কাউকে নেওয়াটা কি ঝুঁকিপূর্ণ হবে না, যদি ব্যবসায়িক দিক থেকে চিন্তা করেন?
মেজবাউর রহমান সুমন : না, আমার কাছে এটা খুবই ভ্রান্ত ধারণা মনে হয়। দর্শক হয়তো শাকিব খানকে দেখতেই এখন হলে যাচ্ছে। কিন্তু শাকিব খানকে দেখতে দেখতে দর্শক কিন্তু টায়ার্ডও। মানে আপনি বা আমি কিন্তু শাকিব খানের ছবি দেখতে হলে যাচ্ছি না। অর্থাৎ নতুন দর্শক তৈরি হচ্ছে না। শাকিব খানের দর্শকরাই বারবার হলে যাচ্ছে তাঁকে দেখতে। দর্শকের কিন্তু নতুন কাউকে দেখার আগ্রহ বেশি থাকে। সালমান শাহ-মৌসুমী কিন্তু নতুন মুখ ছিল। সেই সময়ে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ তরুণ ছেলেমেয়েরা চার-পাঁচ বার হলে গিয়ে দেখেছে। একইভাবে কবরী-ববিতা-শাবনূর, এ রকম নতুন মুখ দেখতে দর্শক কিন্তু বারবার হলে গেছে।
তো, এই নতুন মুখ দেখানোর যে চ্যালেঞ্জটা সেটা কিন্তু পরিচালককেই নিতে হবে। যেমন এহতেশাম কিন্তু অনেক নতুন নায়িকাকে নিয়ে এসেছেন এবং তারা জনপ্রিয় হয়েছে। আমার মনে হয় এখনকার পরিচালকরা মনে হয় সেদিক থেকে দুর্বল। তারা শাকিব খানের বাইরে যেতে ভয় পায়। কিন্তু সিনেমার মার্কেটিং কিন্তু পোস্টার আর ট্রেইলার দিয়ে হয় না। সিনেমার মার্কেটিং হয় মুখে মুখে। আমি যে সিনেমাটা দেখে এসে বলেছি যে ‘ভালো না’, সেটা কিন্তু আমার আশপাশের আর কেউ দেখতে যায়নি। যেটা বলেছি ‘ভালো’, সেটা হয়তো দুয়েকজন দেখতে গেছে। কিন্তু যেই ছবিটা বলেছি ‘খুব ভালো’ সেটা সবাই দেখবে, বারবার দেখবে।
‘মনপুরা’ যদি ভালো ব্যবসা করে থাকে তাহলে সেটা এই দর্শকদের মুখে মুখেই প্রচার পেয়ে করেছে। না হলে কিন্তু ছবিটাতে ব্যবসা করার মতো কোনো উপাদান নেই। মিলি বা চঞ্চল ভাই কিন্তু সেই অর্থে গ্ল্যামারাস না। এসব কিছু না থাকার পরও দর্শক ছবি দেখতে গেছে এবং এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ব্যবসা সফল ছবির তালিকায় আছে ‘মনপুরা’।
প্রশ্ন : ভারতে তো ছবিটা রিমেকও হয়েছে।
মেজবাউর রহমান সুমন : হ্যাঁ। সেটাই। মানুষ একদম লুফে নিয়েছে। এটা হয়েছে গিয়াস ভাইয়ের গল্প বলার ক্ষমতার কারণে। নির্মাতার গল্প বলার ক্ষমতা থাকতে হবে। নতুন কাউকে নিয়ে এলে ছবি হিট হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি যদি নির্মাতার গল্পটা শক্তিশালী হয়। নির্মাতাকে তার সবচেয়ে শক্তিশালী গল্পটা নিয়ে পর্দায় হাজির হতে হবে, নতুন কাউকে নিয়ে।
প্রশ্ন : বিজ্ঞাপনে কীভাবে এলেন?
মেজবাউর রহমান সুমন : আমি তো ফিকশন বানাচ্ছিলাম। ২০১০ সালে এসে ভেবেছিলাম সিনেমা বানাব। তখন একটা স্টোরি আমার মাথায় ছিল। তবে তখন সেটা হয়নি খুব ভালো হয়েছে, এখন মনে হয়। কারণ তখন আসলে সিনেমা বানানোর মতো প্রিপারেশন আমার ছিল না। টেলিভিশনে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে ১২০ মিনিটের একটা গল্প বলা আসলে কঠিন। সেখানে একটা প্রিপারেশন দরকার। ডিরেক্টর থেকে শুরু করে পুরো টিমের। সেই প্রিপারেশন আমার তখন ছিল না।
সেই সময়ে আমি হতাশার মধ্যে পড়ে যাই। মনে হচ্ছিল আমি ফিকশনে একই ধরনের গল্প বলে যাচ্ছি, ‘ফেরার পথ নেই’ বললাম, ‘শেষ বলে কিছু নেই’ বললাম, ‘আঙুরলতা’ বললাম। এই যে গল্পগুলো আমার মনে হলো এভাবে বলে গেলে আমার নিজেরই ক্ষতি হবে। কারণ দু-চারটা খুব পাওয়ারফুল গল্প আমি টেলিভিশনে বলে ফেলেছি।
যেমন, অনেকেই বলেন যে আমার ‘তারপরও আঙুরলতা নন্দকে ভালোবাসে’ ফিল্ম হতে পারত। আমারও তাই মনে হয়। অনেকে ‘সুপারম্যান’-এর কথাও বলে। যারা বড় বড় ফিল্মমেকার তারাও কিন্তু আটটা-দশটা গল্পই বলে মোটের ওপর। আমি এই যে গল্প সব বলে ফেলছি, সেটা নিয়ে একটু ভয় পেয়ে গেলাম। তাই দুই বছর (২০১১ আর ২০১২ সালে) কাজ বন্ধ রাখলাম। ২০১২ সালে কিছু কাজ করি। সেই সময়ে ‘কফি হাউজ’ নামে একটা সিরিয়াল করেছিলাম। আরেকটা করেছিলাম, ‘মিথ্যা তুমি দশ পিঁপড়া’ এবং দুইটাতেই আমার নিজের কাছে মনে হয়েছে আমি ফেইল করেছি। সিরিয়াল যে আমার কাজ না, সেটা আমি বুঝে ফেলেছি। অনেক পর্ব বানানো, অনেক সিডিউল মেলানো, গল্প টানা, বড় করা, এই যে ফুটেজ তৈরির কারখানা হওয়া- এটা আমি পারি নাই। এটা যারা করতে পারছে তাদের স্যালুট, যে ওরা করে যাচ্ছে, করতে পারছে। আমি পারি নাই, আমার কাছে মনে হয়েছে ধারাবাহিক গল্প আমি বলতে পারি না। আমি যেকোনো একটা গল্প বলতে চাই, একবারে।
তখন আমার মনে হলো, এভাবে চলতে থাকলে আমি কিছু করতে পারব না। আমি যে গল্পটা বলতে চাই সেটা আর বলতে পারব না। তাই কাজ বন্ধ করে দিলাম। এক বছর পর হঠাৎ করে একটা করপোরেট হাউজ থেকে আমার কাছে ফোন এলো। তখন তারা একটা করপোরেট কাজ করতে দিল। সেটা অযথাই এসেছিল, মানে আসার কোনো কারণ আমি দেখি না। তখন নেসলে বাংলাদেশে গেলাম, কথা বললাম এবং কাজটা করলাম। কাজটা করলাম এবং করে আমি বেশ ভালো টাকা-পয়সাও পেলাম। আমার কাছে তখন মনে হলো যে, এটা তো আমি করতে পারি। আমার যে বাসায় বসে থাকতে হচ্ছে, সেটা থাকতে হবে না, আমি সারভাইভ করতে পারব। আমার যে দুজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিল ওদের নিয়ে আমি চলতে পারব।
প্রশ্ন : বিজ্ঞাপন নির্মাণের অভিজ্ঞতা কেমন?
মেজবাউর রহমান সুমন : ২০১২ সালের শুরুর দিক থেকে করপোরেট কাজ শুরু করলাম। এর ধারাবাহিকতায় এখন বিজ্ঞাপন বানাচ্ছি। গ্রামীণফোন, রবি, জেএসকের মতো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কাজ করছি। এটার আলাদা করে কোনো প্রিপারেশন ছিল না। বিজ্ঞাপন কীভাবে বানাতে হয়, কারা বিজ্ঞাপন বানায় তা নিয়েও আমার কোনো ধারণা ছিল না। কোনো ধারণা না থাকা সত্ত্বেও আমি বিজ্ঞাপন বানানো শুরু করি এবং ঘটনাচক্রে বানানোটা শিখেও ফেলি। সাড়ে চার বছর ধরে বিজ্ঞাপন বানাচ্ছি, প্রফেশনালি একটা হাউজ চালাচ্ছি। আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ফেইসকার্ড’, বছরে আমরা প্রায় ৩০টার বেশি বিজ্ঞাপন বানাই। মাসে প্রায় দুই-তিনটা করে টিভিসি বানাচ্ছি। এখনকার আমাদের দেশের প্রথম সারির চার/পাঁচটা প্রোডাকশন হাউজের মধ্যে আমাদের নাম আসবে। এখান থেকে এখন আমি যদি আমার সিনেমাটা বানাতে পারি, তাহলে আমি বলব যে আমি সাকসেস। মানে এই যে আমি সারভাইভ করতে পারলাম বিজ্ঞাপন করে, এখন সিনেমা করার কথা ভাবছি, সেটার সাকসেস। আর টিভি ফিকশন যখন বানাতাম তখন তিন-চার লাখ টাকা বাজেট থাকত, বিজ্ঞাপন বানাতে এসে যখন ৩০-৪০ লাখ টাকা বাজেট সামলে কাজ করেছি, সেখান থেকে অনেক কিছু শিখেছি। শুটিং সেটে ৩০০-৪০০ ব্যাকগ্রাউন্ড আর্টিস্টকে ম্যানেজ করাটাও বিজ্ঞাপন করতে এসে শেখা। আবার বিজ্ঞাপনের পোস্ট প্রোডাকশনের কাজের জন্য নিয়মিত দেশের বাইরে যেতে হয়। ভারতে যাচ্ছি, ওদের সবচেয়ে প্রফেশনাল হাউজে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ করছি। সেখানকার বড় বড় অ্যাড ফিল্ম নির্মাতার সঙ্গে দেখা হচ্ছে, ওদের কাজ দেখছি, ভিএফএক্স, সাউন্ড, কালার গ্রেডিংয়ের কাজ করছি, এই অভিজ্ঞতাটা আমার কাজে দেবে। আমার মনে হয় আমি সিনেমা বানাতে বানাতে শিখব না বরং প্রিপায়ার্ড হয়েই সিনেমাটা বানাব।
প্রশ্ন : সিনেমা-নাটক-বিজ্ঞাপন গেল, আপনি তো গানেরও মানুষ। মেঘদলের কী খবর?
মেজবাউর রহমান সুমন : ১৯৯৯ সালে আমরা মেঘদল শুরু করি। তখনও ‘মেঘদল’ নামটা হয় নাই। কিন্তু আমি, শিবু (শিবু কুমার শীল), উজ্জ্বল (মাসুদ হাসান উজ্জ্বল) একসঙ্গে গান গাই, বাজাই। আমরা তখন মঞ্চে গান করতাম, আমাদের সঙ্গে আরেক বন্ধু ছিল সৌরভ, ও বাঁশি বাজাত। শুরুতে আমরা নিজেদের গান গাইতাম। শিবু নিজে গান লিখত, সুর করত, আমিও তাই। শুরুটা হয়েছিল চারুকলা থেকে।
প্রশ্ন : তখন আপনারা চারুকলার ছাত্র?
মেজবাউর রহমান সুমন : না, তখন আমরা ছাত্র না। আমরা তিনজনই তখন চারুকলার জন্য কোচিং করি।
প্রশ্ন : কোচিং থেকেই আপনাদের পরিচয়, বন্ধুত্ব?
মেজবাউর রহমান সুমন : (হেসে) হ্যাঁ, কোচিং থেকেই আমাদের পরিচয়। এটাও একটা গল্প, এই তিনজনের এক হওয়া। অনেকটা ‘গুপী গাইন, বাঘা বাইন’-এর মতো (হাসি)। আমরা আমাদের খুঁজে নিলাম এত মানুষের মধ্যে। চারুকলার কোচিংয়ে এত স্টুডেন্ট তার মধ্যে আমরা তিনজন গান গাই, গিটার বাজাই এবং তিনজনই নতুন লিরিক্স খুঁজছি, আমরা তিনজনই একই রকম ভাবছি। তিনজনই ঘোরাঘুরি পছন্দ করি, পিংক ফ্লয়েড শুনতাম, সুমন চট্টোপাধ্যায় আমাদের ভয়ংকর ইন্সপায়রেশন ছিল, লালন আমাদের খুব পছন্দের। ২০০২ সালে আমার ব্যান্ড ফর্ম করি, ‘মেঘদল’ নামে। এর মধ্যে কিন্তু কয়েক বছর ধরে আমরা স্টেজে গাই। কার্জন হলের কোনো অনুষ্ঠান হলে আমরা যাই, টিএসসিতে ছাত্র ইউনিয়নের প্রোগ্রামে গান করি।
রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আসলে আমাদের গান গাওয়া শুরু হয়েছিল। আমরা বামপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শ বিশ্বাস করতাম, যদিও আমরা কেউ সরাসরি রাজনীতিতে ছিলাম না। আমাদের গানগুলো একটু প্রতিবাদী ধরনের ছিল, ওরাই ডাকত, তো আমরা বন্ধুবান্ধবরা গিটার নিয়ে চলে যেতাম, গান গাইতাম।
প্রশ্ন : আপনারা কি ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ দ্বারা প্রভাবিত?
মেজবাউর রহমান সুমন : হ্যাঁ। ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ তো আমরা প্রচুর শুনি, শুনতাম। গৌতম আমাদের মগজে, মাথায় নানাভাবে আছে। অথচ আমরা লালন, সুমন বা মহীনের ঘোড়াগুলির কোনো গান কখনো কাভার করি নাই। আমরা নিজেদের গানটাই গেয়েছি সবসময়। সুমনের শুধু একটা গান করেছিলাম আমরা একবার, ‘নষ্ট করো না যৌবন এইভাবে... সহজে স্বস্তি মেলে না’ গানটা। চারুকলায় করেছিলাম এটা।
আমরা যখন ব্যান্ড করলাম, তখন আমাদের আলোচনার শুরুতেই যেটা ছিল, আমরা যে টাইপের গান করি বা আমরা যে টাইপের মানুষ, স্টেজে লাফালাফি করতে পারি না, দর্শকের সঙ্গে কমিউনিকেট করতে পারি না, আমরা খুবই মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে গান গাই (হাসি)। এটা আসলে স্টেজ পারফর্মার হিসেবে খুব ভালো কথা না। এটা একটা কারণ, আরেকটা কারণ হচ্ছে আমরা যে কথা বলতে চাই, যেই প্রেমের কথা বলতে চাই, যেই রাষ্ট্রচিন্তার কথা বলি কিংবা যেই শহরের গল্প আমরা বলতে চাই, আমাদের কাছে মনে হয়েছে সেই গানগুলো আসলে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রোতারা শুনবে। তার মানে আমরা খুব একটা জনপ্রিয় হব না। আমাদের এমন কোনো প্রেমের গান নাই যেটা কেউ একজন ক্যাসেটে বা গাড়ির সিডি প্লেয়ারে ছেড়ে বারবার শুনবে অথবা পার্টিতে বাজাবে। এ ধরনের গান না থাকার কারণে আমরা শুরু থেকেই ধরে নিয়েছি আমরা একটা ‘অজনপ্রিয়’ ব্যান্ড হব (হাসি)।
এতে তখনই আমাদের কোনো কষ্ট ছিল না। তখন আমরা এটা নিয়েই প্রাউড ফিল করতাম। আমরা শিওর ছিলাম, আমাদের গান কেউ কেউ মনে রাখবে। ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র গানও কিন্তু মানুষ অনেক দিন শোনেনি। যখন এই ব্যান্ডটা ভেঙে গেছে, ওরা থাকে নাই গানের জায়গায়, তখনই কিন্তু ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ গানের জায়গায় ইমপর্টেন্ট হয়ে গেছে। তখন আমরা আবার গৌতমদের খুঁজে বের করেছি। ওই সময় যে আন্দোলন, নকশালবাড়ী আন্দোলন, সেই আন্দোলনের সময় কিন্তু গৌতম পালিয়েছিল কলকাতা ছেড়ে। পালিয়েছিল মানে সে থাকতে পারে নাই সেখানে। তার পর সে ফিরে এসেছে অনেক বছর পর। তার আগেই কিন্তু তার বেশির ভাগ গান। কলকাতায় ফিরে আসার পর তার খুব একটা গান নাই। সেই এত বছরের পুরোনো গানগুলো আমরা খুঁজে বের করছি। ওই গানগুলো এখনো আমাদের কাছে নতুন চকচকে লাগছে। তার মানে হচ্ছে, ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ সময়ের থেকে আগানো ছিল। না হলে এত বছরের পুরোনো গান এখনো আমাদের কাছে আধুনিক কেন লাগছে? আমাদেরও এমন একটা ধারণা ছিল। যে মানুষ আমাদের গান শুনবে, হয়তো সময় লাগবে। আমরা যখন জাহাঙ্গীরনগরে (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) যাই, তখন দেখি আমাদের গান সবাই মুখস্থ গাইতে পারে।
প্রশ্ন : ‘শিরোনামহীন’ আর ‘মেঘদল’ একই সময়ের ব্যান্ড। এরা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। একই সময়ের ব্যান্ড, একই পরিস্থিতির ব্যান্ড; কিন্তু এদের লিরিক আলাদা, গায়কী আলাদা। আপনাদের গান যদি কেউ পরপর শোনে মনে হবে আলাদা, আবার মনে হবে না, একই কথাই তো বলতে চাইছে।
মেজবাউর রহমান সুমন : হ্যাঁ, এটা সত্যি। ‘শিরোনামহীন’ আমাদের বন্ধু ব্যান্ড। তুহিন ভাই, জিয়া ভাইসহ আরো যাঁরা আছেন। শিরোনামহীনের সঙ্গে আমাদের দারুণ সম্পর্ক, এখনো যখনই দেখা হয় প্রথমেই দুইটা গালি দিবে (হাসি), তারপর বলবে, ‘তোরা খুব ক্ষতি করলি। তোরা এই সিনেমা-টিনেমা বানাতে গিয়ে খুব ক্ষতি করলি গানের। আমাদের সঙ্গে একটা ব্যান্ড দরকার ছিল, তোরা ছিলি। আমরা দুইটা ব্যান্ড যদি থাকতে পারতাম, তাহলে আমরা আরো বড় শ্রোতা তৈরি করতে পারতাম।’ এটা আমারও মনে হয়। প্রথমত, আমরা পারি নাই, আমরা ফেইল করছি। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, আমরা খুব এস্টাবলিশড ব্যান্ড হতে চাইও নাই।
যেমন, আমরা প্রথমেই ধরে নিয়েছি যে আমরা জনপ্রিয় হব না। যে ছেলেটা ক্লাসে পরীক্ষা দেওয়ার পরেই জানে যে ফেইল করবে ও কিন্তু আর রেজাল্টের খাতা দেখতে যায় না। আমরাও সে রকম আমাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে যাই নাই। কিন্তু আমাদের গানও যে কিছু মানুষ না, বরং অনেক মানুষ শোনে, সেটা আমি গত দুই-তিন বছরে বুঝতে পারছি। আমি প্রথম টের পাই যখন ফেসবুকে একটা ক্লোজড গ্রুপ খুঁজে পাই আজ থেকে প্রায় দুই/তিন বছর আগে। ‘মেঘদলের ফ্যাসিস্ট ফ্যানের আঁটি’ নামে।
আমাদের ব্যান্ডের শোয়েব প্রথমে আমাকে এই গ্রুপটার কথা বলে। সেই গ্রুপে ঢুকে পোস্ট দেখে মনে হচ্ছিল, আমরা বুঝি মায়েস্ত্রো টাইপ কিছু হয়ে গেছি (হাসি)। আমাদের গান নিয়ে এত লেখা, এত মানুষ শোনে আমাদের গান, এত এত লেখা। এবং গ্রুপে যারা আছে, তারা খুবই শিক্ষিত, লেখাপড়া জানা। জীবনানন্দ দাশ পড়েছে, জিম মরিসন শোনা আছে। একট সলিড ব্যাকগ্রাউন্ড আছে, এমন না যে পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বখাটে ছেলেপেলে। শিক্ষিত, অন্য ঘরানার ছেলেপেলে আছে সবাই। এবং আমাদের গান নিয়ে যেভাবে তারা তাদের ফিলসফিক্যাল ফিডব্যাক দিচ্ছে, এই ডিকনস্ট্রাকশন দেখে আমি একটু থতোমতো খেয়ে গেছি। আমরা এই গানগুলো করার সময় এত কিছু ভাবি নাই। আমরা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি, আমাদের দেখা প্রেম, শহরের কথা বলতে চেয়েছি। কিন্তু ওরা এর মধ্যে অনেক কিছু খুঁজে পেয়েছে। এটা দেখে আমি প্রথম মুগ্ধ হলাম, যে আমরা তাহলে ব্যর্থ না, আমরা শ্রোতা তৈরি করতে পেরেছি।
ওই বছরই আমরা সিলেটে শাহজালাল ইউনিভার্সিটিতে (শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) শো করতে গেলাম। সেটা ছিল ঢাকার বাইরে আমাদের প্রথম শো। আমাদের আগে ছিল ‘নেমেসিস’। ওরা স্টেজে উঠে মাত করে দিয়ে এলো। আর ব্যাকস্টেজে আমরা তখন ভয়ে আছি। ওই দিন আবার আমাদের ড্রামার নাই। ও অসুস্থ। আমি শোয়েবকে বললাম, ‘শোয়েব ইলেকট্রিক গিটারটা ওঠানোরই দরকার নাই। আমরা একটা কাজ করি। অ্যাকুস্টিক গিটার নিয়ে উঠি এবং আমরা আমাদের সবচেয়ে সফট গানগুলো দিয়ে শুরু করব।’ শিবু-শোয়েব সবাই বলল, এটা ভালো ডিসিশন। কিন্তু স্টেজে ওঠার পর আমাদের আর কোনো প্রিপারেশনেরই প্রয়োজন পড়ল না। মেঘদলের গান সবার মুখস্থ। আমাদের সঙ্গে সবাই গাইছে। আমরা টানা দুই ঘণ্টা শো করলাম। আমাদের রিলিজড, আনরিলিজড গান গেলাম। আমরা সাধারণত আধা ঘণ্টা স্টেজে গান গাই, সেখানে দুই ঘণ্টার শো করতে গিয়ে আমাদের হাত-পা ব্যথা হয়ে যাচ্ছে। এর পরে জাহাঙ্গীরনগরে (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) আরেকটা শো করলাম। সেটাতেও খুব ভালো রেসপন্স ছিল। তো, আমরা বুঝলাম যে আমাদের এক ধরনের শ্রোতা তৈরি হয়েছে।
কিন্তু আমরা সেভাবে ডাক পাই না কেন? আসলে আমাদের গান যেই ছেলেটা শোনে ও ইউনিভার্সিটি বা কলেজের ভিপি না (হাসি)। ও আসলে একটু শিক্ষিত, পড়াশোনা করা ছেলেটা, ওর আসলে ক্ষমতা নাই মেঘদলকে জাহাঙ্গীরনগরে বা শাহজালালে নিয়ে যাওয়ার। মেঘদলের ভক্ত যে ছেলেটা, সে আসলে সবচেয়ে নম্র ছেলে (হাসি), তাই ওর দাবিটা ধোপে টিকবে না। সে কারণে আমরা খুব কনসার্ট পাই না। তবে আমরা হ্যাপি।
প্রশ্ন : নতুন অ্যালবাম কবে আসবে?
মেজবাউর রহমান সুমন : অ্যালবামের কথা যদি বলি, কাজ চালু আছে। মেঘদলের শ্রোতার হয়তো মনে করেন আমরা কিছু করছি না, আমরা অনেক দিন ইনঅ্যাকটিভ। মেঘদলে আমরা যারা আছি, সবাই হয়তো বুঝে ফেলেছে মেঘদল দিয়ে আমাদের কোনো অর্থনেতিক ঘটনা ঘটবে না, আমাদের এখানে কোনো স্বার্থ নেই। এখানে স্বার্থ শুধু গান। শুধু গান যেখানে স্বার্থ, সেখানে একটা সুবিধা আছে। সুমন চট্টোপাধ্যায়ের বাবা তাঁকে বলেছিলেন, ‘গানটা বেচো না’।
আমরাও আসলে গানটা বেচতে পারব না। গান বেচার যোগ্যতাই আমাদের নাই (হাসি)। গান বেচার যোগ্যতা যেহেতু নাই, তাই শেষ পর্যন্ত আমরা গান করে যেতে পারব। মেঘদলের শ্রোতাদের জন্য এটাই সবচেয়ে ভালো খবর। দুঃখজনক সংবাদ হচ্ছে, আমরা অনেক দিন পর পর হাজির হব। আমাদের লাস্ট অ্যালবাম ছিল ২০০৯-এ ‘শহরবন্দী’। এখন ২০১৬, প্রায় সাত বছর। আমাদের নয়টা গান তৈরি করা আছে। আরো দুই-তিনটা গান তৈরি করব নেক্সট অ্যালবামের জন্য। নেক্সট অ্যালবামের নাম হচ্ছে ‘অ্যালুমিনিয়ামের ডানা’, যেটা আমরা এ বছরই রিলিজ করতে চেয়েছিলাম; কিন্তু পারব না। ২০১৭-এর শুরুতে রিলিজ করব, এটা শিওর।
প্রশ্ন : যাক, মেঘদল ‘চালু’ আছে, এটা শ্রোতাদের জন্য সুখবর।
মেজবাউর রহমান সুমন : হ্যাঁ, মেঘদল চালু আছে, চালু থাকবে। কারণ ব্যান্ড ভাঙার মূল কারণ হচ্ছে কে নেতৃত্ব দেবে, স্টারডম এসব। কিন্তু আমাদের মধ্যে সেটা নেই। মানে আমরা নিজেদের কাজের জায়গায় হয়তো জনপ্রিয়তা পেয়েছি, কিন্তু ‘মেঘদলের সুমন’ বা ‘মেঘদলের শিবু’ বলে কোনো শব্দ প্রচলিত নেই। একটা কনসার্ট করে দুই লাখ টাকা পাওয়া যায়, এটা আমাদের ক্ষেত্রে এখনো ঘটে নাই। আমরা আসলে এখনো ফাও গান করি। আমাদের যারা গান গাওয়ার জন্য ডাকে, তারা খুবই গরিব অর্গানাইজার থাকে। বিভিন্ন ফোরাম আমাদের ডাকে আসলে। শাহজালাল ইউনিভার্সিটির ফিল্ম সোসাইটি ডাকে কিংবা জাহাঙ্গীরনগরের কোনো একটা সাংস্কৃতিক দল আমাকে ডাকে। এটা ডাকলে সুবিধা হচ্ছে তাদের কাছে টাকা থাকে না আর আমরাও টাকা চাইতে পারি না (হাসি)। যেহেতু টাকার প্রশ্ন থাকছে না, স্টারডমটাও নাই এ দুইয়ে মিলে আমাদের ব্যান্ড ভাঙার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমাদের ব্যান্ড থেকে যাবে। এটা শিং মাছের মতো বেঁচে থাকবে (হাসি)। অল্প পানিতে, ঘোলা পানিতে বেঁচে থাকার শক্তি আছে।
প্রশ্ন : মেঘদলের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ মনে হয় এর গানের কথা। সেই সময়ে আমাদের নতুন লিরিকের দরকার ছিল। ‘কিছু বিষাদ হোক পাখি’, ‘হেঁটে যেতে যেতে ভুল পথে তুমি থেমো না’, ‘আমার শহর খুব সহজে একলা পাখির মতো ভিজতে থাকে’—এই কথাগুলো একটা প্রজন্ম লুফে নিয়েছে। ওদের কাছে মনে হয়েছে, ওরা এভাবেই বলতে চায়। মেঘদলের লিরিক কীভাবে লেখা হয়, কারা লেখে বা এ ধরনের লিরিক নিয়ে আপনারা কেন এলেন?
মেজবাউর রহমান সুমন : চারুকলার কোচিংয়ের সময় যখন শিবু আর উজ্জ্বলের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়, তখন আমি নিজের লেখা গান আমি গাইতাম। কিছু গান তৈরি করেছিলাম। কিন্তু ওরা অন্যদের গান গাইত। অথচ শিবু, উজ্জ্বল দুজনেই লেখালেখি করে। তবে গান লেখে নাই তখনো। আমার গান শোনার পর শিবু আর উজ্জ্বল বলল যে ওরাও তো লিখতে পারে। ওরাও লেখা শুরু করল। এটা যে খুব পরিকল্পিতভাবে হলো, তা না। আমাদের তিনজনেরই কিছু বলার ছিল নিজের মতো করে। আমি যেমন কাক নিয়ে একটা গান লিখছি, এই শহরের সঙ্গে কাকের তুলনা করছি, ‘আমার শহর খুব সহজে একলা পাখির মতো ভিজতে থাকে’। এই যে একলা পাখির মতো ভিজতে থাকা একটা কাক, যে শহরের কোনো একটা ইলেকট্রিক তারের ওপর বসে থাকে, বৃষ্টির সময় পুরো শহরের মানুষ তার বাসস্থানে ঢুকে পড়ে, তারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায় শুধু ওই পাখিটা নিরুপায় হয়ে, কী জন্য যেন দাঁড়িয়ে থাকে। ওর কোনো আশ্রয় থাকতেই পারত। ও একটা সানসেটের নিচে দাঁড়াতে পারত, কিন্তু ও দাঁড়ায় না। ও দাঁড়ায় না কারণ ও একটা বিপ্লব খুঁজতে চায়।
আমরা যখন ঢাকা ভার্সিটিতে পড়তাম, তখন অনেক রকমের আন্দোলন হতো। সেখানে আমি, শিবু, উজ্জ্বল সব সময় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতাম। আমরা রাজনীতি না করলেও মিছিলের প্রথম সারিতে যে মুখগুলো দেখা যেত, সেগুলো ছিলাম আমরা। আমাদের আশাভঙ্গ হতো যখন দেখতাম তিন/চার দিন পরে ওই আন্দোলন আর থাকত না। দেখতাম মানুষ কমে যাচ্ছে। পাঁচ দিন পরে ডেকে আনতে হতো। ও বলত ‘কাজ আছে’, আরেকজন বলত ‘টিউশনি আছে’। ছয় দিনের মাথায় আন্দোলনটা ভণ্ডুল হয়ে যেত। তার পর দেখতাম আমার আশপাশে আটজন, দশজন মানুষ। মিছিলটা পাঁচ সারি থেকে কমে এক সারিতে চলে এসেছে। এই যে বিপ্লব ভেঙে যাওয়া, এটা প্রথম টের পেয়েছিলাম ইউনিভার্সিটিতে ওঠার পর। আমার কাছে মনে হয়েছিল, এই যে একলা পাখিটা ও আসলে বিপ্লবের সেই একলা ছেলেটা। যে অপেক্ষা করছে বিপ্লবের জন্য। ওই সময়টা আমি ওভাবে পার করছিলাম। এরপর আমি আর কখনো এ রকম গান লিখি নাই। আমি সরাসরি বিপ্লবের কথা না বলে একটা প্রতীকী রূপ দাঁড় করিয়েছিলাম।
প্রশ্ন : নির্দিষ্ট সময়ের প্রতিচ্ছবি গানে উঠে এসেছে এবং সেটা গানের মাধ্যমে স্থায়ী হয়ে গেছে। ওই সময়টা যারা পার করেছে, তাদের জন্য সেটা তাদের সময়ের গান হয়ে উঠেছে...
মেজবাউর রহমান সুমন : হ্যাঁ। শিবুর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই। কারণ ও তখন শহরজুড়ে এত কালো ধোঁয়া কেন দেখল? ‘কালো ধোঁয়ার ধোঁয়াটে এই শহরে...’। কারণ তখন ও পুরান ঢাকা থেকে বাসে করে ক্যাম্পাসে আসত। দুবার বাস চেঞ্জ করতে হতো। আমি শিওর গানের কথাগুলো ওর লাইফের রিফ্লেকশন। শিবু কিন্তু এই কথাটা আর বলে নাই, এখন আর বলে না। এখন শিবু যে কথা বলে সেটা আলাদা। পরের অ্যালবামে আমরা একটা গান করেছি ‘গোলাপের নামে নাম’। এটা আমার খুব প্রিয় একটা গান। আমি দেখলাম এই লিরিকটা কিন্তু সেই লিরিকটা না। এটাও আমার ভালো লাগছে। এই লিরিকের মধ্যে অনেক ‘এখন’ আছে। প্রেম নেই, কিন্তু প্রেম হারিয়ে যাওয়া আছে। আমরা বদলে যাচ্ছি আর আমাদের গানের কথাও বদলে যাচ্ছে।
আমি শিওর আজকে যেই ছেলেটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, আবার বিপ্লব আসবে বলে বিশ্বাস করে ওর আমার ‘একলা পাখির মতো ভিজতে থাকে’ গানটা ভালো লাগবে। এই গানের গল্পটা ওর জানা না থাকলেও ও সেটা রিলেট করতে পারবে। কারণ সে তো ওই সময়টার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে। আমরা কালো ধোঁয়ার মধ্যে প্রেম খুঁজে পেয়েছি, হাঁটতে হাঁটতে প্রেম খুঁজে পেয়েছি, আমরা নগরের কোনো একটা জানালার মধ্যে দিয়ে আকাশ দেখতে পেয়েছি। কারণ আমার আকাশটা বিশাল কখনোই হয়নি, আমার আকাশটা সব সময় ছোটই ছিল। আমি আমার রুম থেকেই আকাশ দেখেছি। আমি গ্রামে বড় হয়নি। এই যে আমার বেড়ে ওঠা, আমার সিটি লাইফের যে রিফ্লেকশন ওটাই আমাদের গানে এসেছে।
প্রশ্ন : শিরোনামহীনের গানেও কিন্তু শহর এসেছে, পাখি এসেছে, ‘একা পাখি বসে আছে শহুরে দেয়ালে’। আপনি লিখেছেন, ‘আমার শহর খুব সহজে একলা পাখির মতো ভিজতে থাকে’। একই সময়ের গান সেটা কিন্তু বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি দুই রকম।
মেজবাউর রহমান সুমন : হ্যাঁ, দুজন প্রায় একই বিষয় নিয়ে লিখেছে। ওদের গানের মধ্যেও কিন্তু ওই বিপ্লবটা আছে।
প্রশ্ন : সেটাই। লাইন দুটো পাশাপাশি রাখলে কিন্তু আলাদা করা যাবে। একই রকম কিন্তু আবার আলাদা, একটার সঙ্গে আরেকটাকে মেশানো যাচ্ছে না। কিন্তু একই বিষয়, একই শহর, একই সময়ের কথা বলতে চাইছে। এটা খুবই ইন্টারেস্টিং।
মেজবাউর রহমান সুমন : আমাদের একসঙ্গে একটা অ্যালবাম করার কথা ছিল ‘শিরোনামহীন মেঘদল’ নামে। এটা নিয়ে অনেকদূরে এগিয়েছিলাম। অনেক আগে, আজ থেকে প্রায় ৭/৮ বছর আগে। তখন অনেক মিটিংও করছিলাম। ওটা হলে মনে হয় খুব ভালো হতো। আমরা চাইছিলাম যে, ছয়টা ছয়টা ১২টা গান থাকবে দুই ব্যান্ডের। কিন্তু এটা হলো না। আমাদের ব্যস্ততা। আমরা আসলে খুব ব্যস্ত হয়ে গেছি, তাই আর হয় নাই।
প্রশ্ন : আপনাদের গানগুলো তো টিকে গেছে। এত দিন আপনাদের নতুন অ্যালবাম নেই, আপনিও নতুন কোনো টিভি নাটক করেন না কিন্তু দর্শক-শ্রোতারা বারবার জানতে চায় আবার কবে করবেন, কবে আসবে? সেটা কাজগুলো টিকে গেছে বলেই কিন্তু মানুষের আগ্রহ রয়েছে।
মেজবাউর রহমান সুমন : আমার কেন যেন বিশ্বাস হয়, মেঘদল আরো দুই/তিনটা অ্যালবাম দেবে। আমার মনে হয়, মেঘদল যদি তার জীবদ্দশায় চার থেকে পাঁচটা অ্যালবাম করে যেতে পারে, তাহলে বাংলা গানের কোনো একটা কোনায় আমরা থাকব। যারা এক ধরনের লিরিক বলতে চেয়েছে, যারা এক ধরনের প্রেম বলতে চেয়েছে, এক ধরনের শহর বলতে চেয়েছে, সেটা খুব অমূলক না, সেটা প্রয়োজনীয়। একটা সময় তারা ধরতে চেয়েছিল। আমার মনে হয়, একটা ব্যান্ডের ৫০টা গান লাগে আসলে, ভালোভাবে টিকে থাকার জন্য। আমাদের এখন ২৫/২৬টা গানের মতো আছে। আরো কিছু গান আমাদের করতে হবে।
প্রশ্ন : অনেক বিস্তারিত আলোচনা হলো। এখন খুব ছোট ছোট কিছু প্রশ্ন, আপনার পছন্দের পাঁচজন ডিরেক্টর আর তাঁদের কাজ, বাংলাদেশের।
মেজবাউর রহমান সুমন : বাংলাদেশের? আমার পছন্দের কাজ বাংলাদেশে বলতে গেলে বেশিরভাগই টিভি ফিকশনের কথাই চলে আসবে। আমার খুবই পছন্দের কাজের কথা যদি বলি, আতিক ভাইয়ের (নুরুল আলম আতিক) ‘বিকল পাখির গান’, গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘চোরের বউ’। অনিমেষদার (অনিমেষ আইচ) ‘গরম ভাত অথবা নিছক ভূতের গল্প’, ফারুকী ভাইয়ের (মোস্তফা সরয়ার ফারুকী) 'চড়ুইভাতি’।
প্রশ্ন: আরেকটা? চারটা হয়েছে।
মেজবাউর রহমান সুমন : আরেকটা? আরেকটা অমিতাভ ভাইয়ের (অমিতাভ রেজা) ‘একটা ফোন করা যাবে প্লিজ’।
প্রশ্ন : আর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে?
মেজবাউর রহমান সুমন : ঋত্বিক ঘটক, ‘অযান্ত্রিক’ আর ‘মেঘে ঢাকা তারা’। সত্যজিৎ (সত্যজিৎ রায়) আমার অনেক প্রিয়। সত্যজিতের অনেক ছবি আমার প্রিয় আসলে, অনেক। ইনারিতুর (আলেহান্দ্রো গনজালেস ইনারিতু) ‘আমরোস পারোস’। আরো ছবি আছে ইনারিতুর, কিন্তু এই ছবিটাই আমি প্রথম দেখি, এটাই বেশি ভালো লাগে। কিম কি দুকের ‘স্প্রিং, সামার, ফল, উইন্টার...অ্যান্ড স্প্রিং’ কিংবা ‘বো’, আরো আছে। তারান্তিনো....
প্রশ্ন : পাল্প ফিকশন?
মেজবাউর রহমান সুমন : পাল্প ফিকশন! হ্যাঁ। পাল্প ফিকশন তো অবশ্যই। ওর ছবির স্টাইল আমার কাছে ভালো লাগে। স্পেসিফিক একটা নাম বলাটা কঠিন। ‘পাল্প ফিকশন’ অবশ্যই সবারই অনেক প্রিয় কাজ।
প্রশ্ন : আপনার ছোটবেলা, বেড়ে ওঠা কি ঢাকাতেই?
মেজবাউর রহমান সুমন : আমার বড় হওয়া ঢাকাতেই। খুব ছোটবেলায় ফরিদপুরে কিছুদিন ছিলাম। আমার বাবা সরকারি চাকরি করতেন। আমার পুরোটা পড়াশোনা, স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি সবই ঢাকাতে। মগবাজারে আমার শৈশব কেটেছে, তারপর মিরপুর শেওড়াপাড়ায় শৈশবের আরেকটা বড় অংশ কাটে। আমার কলেজ লাইফ, এমনকি ইউনিভার্সিটি লাইফও সেখানে।
প্রশ্ন : টিভি নাটকের সংক্ষিপ্ত তালিকা যদি জানতে চাই, প্রথম কাজ ‘অরুপার কাছে যাচ্ছি’, কবে অনএয়ার হয়?
মেজবাউর রহমান সুমন : ২০০৫-এর শেষের দিকে করেছিলাম কাজটা, ২০০৬-এ অনএয়ার হয় চ্যানেল আইতে। তারপর ‘দখিনের জানালাটা খোলা আলো আসে আলো ফিরে যায়’ অনএয়ার হয় আরটিভিতে।
প্রশ্ন : এটা তো খুব আলোচিত কাজ...
মেজবাউর রহমান সুমন : এই কাজটা অনেক পুরস্কার পেয়েছিল। কিন্তু আমার খুব একটা প্রিয় কাজ না। তখন টেলিভিশনের জন্য একটা এক্সেপেরিমেন্টাল কাজ ছিল। আমার বন্ধুরা তখন অনেকে থিয়েটারে কাজ করত, আমি থিয়েটারের সঙ্গে একেবারেই যুক্ত ছিলাম না। শিবু ছিল প্রাচ্যনাটে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর, ওর রিহার্সেল চলত, আমরা আবার গান করতাম একসঙ্গে। চারুকলায় ক্লাস শেষ হতো দুপুর ২টায়, তারপর আজিজ মার্কেটে গানটান করতাম, আমাদের একটা বসার জায়গা ছিল সেখানে। সে কথা আমাদের অ্যালবামের মধ্যে লেখা আছে, পড়লে দেখতে পাবেন। ওখান দিয়ে ৭টার দিকে শিবু চলে যেত রিহার্সেল করতে। শিবু আমাকে নিয়ে যেত।
প্রাচ্যনাটে এমনিই আমার অনেক বড় ভাইরা ছিল রাহুলদা (রাহুল আনন্দ)। তারপর আরো অনেকেই ছিল, যারা আমার খুবই ক্লোজ, চারুকলার বড় ভাইবোন। রাহুলদা বাঁশি বাজাত, আমরা গিটার নিয়ে গান করতাম। ওই সময়ে আমরা অনেককে পেয়েছি। আজকে ‘জলের গান’-এ যারা যারা আছে, সবাই আমার ফ্রেন্ড কিংবা বড় ভাই। রাস্তায় বসে বসে আমরা জ্যামিং করতাম। ওই সময়টায় প্রাচ্যনাটে আমাদের খুবই কাছের লোকজনরা ছিল। প্রায় সবাই পরিচিত, সন্ধ্যার সময় যেতাম, ওরা প্র্যাকটিস করত, আমি বাইরে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতাম। কখনো কখনো ভেতরে বসে বসে দেখতাম। আমি তখন প্রচুর থিয়েটার দেখতাম। মহিলা সমিতিতে রেগুলার যেতাম। যেকোনো দলেরই হোক—সেটা নাগরিকের হোক, ঢাকা থিয়েটারের হোক, প্রাচ্যনাট হোক আমি গিয়ে দেখতাম, তখন একটা অভ্যাস ছিল।
ফিকশন বানানো শুরু করলে, প্রথম ফিকশন বানানোর পর শিবু যখন এই গল্পটা আমাকে বলে, তখন শিবুকে আমি বলি যে, আয় এটা দুইটা প্যাটার্নে আমরা করি। থিয়েটারের মতো করে একটা চরিত্র, কবি ক্যারেক্টারটা যে আসলে কাব্যিক। এই চরিত্রটা মহাজাগতিক করে তোলার জন্য থিয়েটারের প্যাটার্নটা খুব দরকার ছিল। তাই দুই ধরনের প্যাটার্ন ব্লেন্ড করা হলো। স্টোরিটাতেও অনেক বেশি কাব্যময়তা ছিল। ওই রকম একটা থিয়েট্রিক্যাল ছবি টেলিভিশনে দেখার জন্য সবাই আসলে প্রস্তুত ছিল না। আজকে ‘বার্ডম্যান’ দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে, এ ধরনের কাজ আমি ৮-১০ বছর আগেই ছোট আয়োজনের মধ্যে টেলিভিশনের জন্য করার চেষ্টা করেছি। তখনকার জন্য এই প্রেজেন্টেশনটা একটু নতুন ছিল। টেলিভিশনে কাজটা দিতে তখন খুব কষ্ট হয়েছিল। কেউ নিতে চাইছিল না তখন। ২০০৬ সালে কাজটা অনএয়ার হয়।
প্রশ্ন : প্রথম বছরেই দুইটা নাটক পরপর অনএয়ার হয়?
মেজবাউর রহমান সুমন : আমি প্রথম বছর আসলে অনেক ফিকশন বানিয়েছিলাম। তার পরে কাজ কমিয়ে দিলাম। আমার কিন্তু ফিকশনের পরিমাণ খুব কম। সবকিছু মিলিয়ে হয়তো ১৬/১৭টা প্রোডাকশন হবে। মানে সিরিয়ালসহ। ৭/৮ বছর ধরে কাজ করে প্রতিবছরে আমি দুইটার বেশি প্রোডাকশন বানাইনি। আমি আসলে খুব কম কাজ করেছি। প্রথম বছরে আমি তিন-চারটা বানিয়ে ফেলেছিলাম। ২০০৭ থেকে আমি দুইটা করে প্রোডাকশন বানিয়েছি। কোনো বছর হয়তো তিনটা বানিয়েছি।
প্রশ্ন : চার্লি চ্যাপলিনের ‘সিটি লাইটস’ এর অনুপ্রেরণায় ‘শহরতলীর আলো’ নামে একটা নাটক বানিয়েছিলেন। সেটা কবে? এটাই তো মনে হয় গায়ক পার্থ বড়ুয়ার প্রথম টিভি নাটক ছিল?
মেজবাউর রহমান সুমন : ‘শহরতলীর আলো’ ২০০৭ সালে অন এয়ার হয়। হ্যা, সেটাই পার্থদার প্রথম অভিনয়। আমি তখন কাস্টিং খুঁজছিলাম। হঠাৎ আমার মনে হলো যে পার্থদা হতে পারে। একটা করপোরেট লুক আছে, আবার একটু পাগলা লুক লাগবে, একটু রোমান্টিক লুক লাগবে। এই যে দুইটা মিলে আমাদের টিভি নাটকের কারো মধ্যে পাচ্ছিলাম না। তখন দেখলাম পার্থদা আছে, চুল বড় আছে আবার স্যুট-টাই পরালেও মানাবে। ওনার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। তখন পরিচয় ছিল না। আমার যে প্রডিউসার, তার সঙ্গে পরিচয় ছিল।
আমি দেখা করে বললাম, যে এভাবে করতে চাই। শুনে পার্থদা বললেন, ‘শোন, তুই আমাকে নিস না।’ আমি বললাম যে, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে আপনি করলে ভালো হবে।’ পার্থদা বলল যে, ‘আর পারফরমার কে?’ আমি বললাম, ‘জয়া আহসান।’ পার্থদা বলে, ‘ওরে বাবা। এটা হবেই না’ (হাসি)। এরপর বলে, ‘ওতো খুব ভালো অভিনয় করে, আর আমিতো এই প্রথম। এত বড় পারফরমারের সঙ্গে আমাকে দিবি? আমাকে একটা ছোটখাটো পারফরমারের সঙ্গে দিলে তা-ও আমি একটু সাহস পেতাম।’ আমি বললাম যে, ‘ঠিক আছে। পার্থদা স্ক্রিপ্টটা থাকল। কালকে আপনি পড়ে আমাকে জানান।’ ওই দিন রাতেই পার্থদা আমাকে ফোন দিলেন। ফোন দিয়ে বললেন যে, ‘সুমন, আমি স্ক্রিপ্টটা কেবল শেষ করলাম।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী অবস্থা?’ বলে, ‘এত সুন্দর স্ক্রিপ্ট, এটা তো না বলতে পারব না। তুই আমার কোমরটা ভেঙে দিলি।’ আমি বললাম, ‘কোমরটা যেহেতু ভেঙে দিয়েছি, তাহলে করেন।’ পার্থদা বলেন, ‘লোভ হচ্ছে। এটা আমার করতে ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু এটা করলে তোর ক্ষতি হবে। তুই কিন্তু বাজে নাটক বানাবি। আমাকে তুই বকা দিবি না যে আমি বাজে অভিনয় করেছি।’ তারপর উনি সেটা করলেন এবং আমার ধারণা অনেক ভালোই করেছিলেন।
প্রশ্ন : এরপর তো পার্থ বড়ুয়া বেশ অনেক কাজ করেছেন, এখনো নিয়মিত অভিনয় করছেন। আপনার সঙ্গে কি তাঁর আর কোন কাজ আছে?
মেজবাউর রহমান সুমন : না, পার্থদার সঙ্গে আমার আর কাজ করা হয়নি। এরকম আরো অনেকের ক্ষেত্রেই হয়েছে। কল্যানের (কল্যান কোরাইয়া, অভিনেতা) কথা বলতে পারি। ওর প্রথম কাজ আমার সাথে, ‘প্রেম ও পরাবাস্তবতা’। পার্থদার সঙ্গে এখনো দেখা হলে একথা বলেন। এই কিছুদিন আগেও দেখা হলো অমিতাভ ভাইয়ের (অমিতাভ রেজা) অফিসে। উনি ‘আয়নাবাজি’তে অভিনয় করেছেন। দেখা হওয়ার পর পার্থদা বলল, ‘তুই আমাকে আর নিলি না। তুই আমাকে আর্টিস্ট বানায় দিলি, গায়ক থেকে। কিন্তু আমাকে আর অ্যাক্টিংয়ে নিলি না। এই দুঃখটা গেল না।’ আমি শুধু হাসি।
ছবি : শিব্বির আহমেদ মান্না, ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
১৪.০৫.২০১৬
ফেইসকার্ড, নিকেতন, গুলশান।
সময় বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৭টা।