ঋত্বিক ঘটকের নাট্যচর্চা
চলচ্চিত্রকার হিসেবে বিশ্বনন্দিত হলেও ঋত্বিক কুমার ঘটকের (১৯২৫-৭৬) সৃজনকর্মের উন্মেষ মূলত নাট্যকর্মী হিসেবে। নিজে নাটক লিখেছেন, পরিচালনা করেছেন, এমনকি অভিনয়ও করেছেন। আত্মপ্রকাশ তথা বেশি মানুষের পৌঁছাবার সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম হিসেবেই তিনি সিনেমা জগতে এসেছিলেন। এর চেয়ে জোরালো মাধ্যম পেলে তাকেই তিনি মান্য করতেন, এমন দৃপ্ত ঘোষণা তিনি করেছেন তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায়, ‘আমরা যখন মাঠে ময়দানে নাটক করতাম, তখন চার-পাঁচ হাজার লোক জমা হতো, নাটক করে তাঁদের একসঙ্গে rouse করা যেত। তখন মনে হলো সিনেমার কথা, সিনেমা লাখ লাখ লোককে একসঙ্গে একেবারে মোচড় দিতে পারে। এই ভাবেই আমি সিনেমাতে এসেছি, সিনেমা করব বলে আসিনি।’ ভবিষ্যতে সিনেমার চেয়ে শ্রেয়তর কোনো মাধ্যমের সন্ধান পেলে সিনেমাকে তিনি লাথি মেরে চলে যাবেন—এমন মন্তব্য তিনি করেছেন তাঁর লেখায়।
তাঁর সাহিত্যচর্চার শুরু হয়েছিল অবশ্য গল্পকার হিসেবে। তখনকার অনেক বিখ্যাত সাময়িকপত্রে লেখার সুযোগ পেলেও তিনি মনে করতেন, গল্পের আবেদন পাঠকের কাছে পৌঁছাতে বেশি দেরি হয়; কিন্তু নাট্যাভিনয়ের আবেদন তাৎক্ষণিক, একসঙ্গে বহু মানুষের কাছে তার আবেদন। তাই যৌবনের শুরুতেই তিনি প্রবলভাবে প্রগতিশীল নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, নাট্য-রচনা, নাট্য অনুবাদ তথা পরিচালনা ও অভিনয়ে প্রবলভাবে ব্যস্ত থেকেছেন। অবশ্য সিনেমার দিকে ঝোঁকার কারণে নাট্যকর্মে তেমনভাবে মনোনিবেশ করতে পারেননি, কিন্তু জীবনের সায়াহ্নকাল অবধি নাট্যকর্মে নিয়োজিত হয়েছেন সুযোগ পেলেই।
ঋত্বিক ঘটকের পারিবারিক পরিমণ্ডল তাঁকে নানান সৃজনকর্মে উৎসাহিত করেছে। বালক বয়সেই তাঁর মধ্যে যে প্রতিভার স্ফুরণ ঘটেছিল, সেই প্রসঙ্গে বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে পড়ার সময়কার স্মৃতি উদ্ধার করে তপতী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ও সেইসব নাটকে অংশ নিত অতি আগ্রহে। প্রকৃতপক্ষে এসব দিক দিয়ে ও ছিল আমার ডান হাত। তখন থেকেই নিজস্ব ধারায় ও কবিতা লিখত, অভিনয় করত। চন্দ্রগুপ্ত নাটকে (নিজেদের মতো করে লিখে নিতাম) ও সাজত চাণক্য। এ ছাড়া কোনো নাটকে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজা। তলোয়ার খেলার দৃশ্য ও খুব ভালোবাসত। আর টিনের তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ আমাদের একটা অবশ্য অঙ্গ ছিল সব নাটকে। বাড়িতে ছাদে টেন্ট খাটিয়ে বা পাড়ার কারো বাগানে নাটক আমাদের চলতই।’
পরবর্তীকালে রাজশাহীর ছাত্রজীবনে ঋত্বিকের বাঁশি বাজানো, ছবি আঁকা, গল্প লেখা আর অভিনয়ের কথা নানাজনের স্মৃতিকথায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সেই ১৯৪২-৪৩ সালে রাজশাহীর পাবলিক লাইব্রেরিতে তাঁর অভিনয়দীপ্ত অচলায়তন, ডাকঘর, পরিত্রাণ, ফাল্গুনী, বিসর্জন আর রাজা নাটকের কথা জানা যায়। রবীন্দ্রনাটকের মঞ্চায়নে সেই বয়সেই ঋত্বিক তাঁর দক্ষতার যে ছাপ রেখেছিলেন, তা জানা যায় বন্ধু কুমার রায়ের স্মৃতিকথায়, ‘রাজশাহীর দিনগুলো সেই সূচনাপর্বে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়—আমাদের কাছে। রবীন্দ্রনাথের রাজা, পরিত্রাণ দুটি নাটক আমরা করেছি সেখানে। সেই পদ্মা নদী, নদীর বাঁধ, মাছ, নৌকো, সাধারণ মানুষ, আমাদের কলেজের বিশাল মাঠ, মাঠ ঘিরে আলাদা আলাদা বিভাগের কারুকার্য করা লাল রঙের ইমারত এসবই আমাদের সংবেদনশীল মনে এই দেশভাগ, পদ্মা নদী চিরকালের একটা ছাপ ফেলে গেল। এসবের মধ্যে ওর মনটা থিতু হতে পারল না। এই অ-স্থিত মনটাই যেন তার সকল কাজে প্রতীয়মান ছিল।’ সেই সময়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের ওপর ঋত্বিক একটি আলেখ্য প্রস্তুত করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গে কুমার রায় লিখেছেন, নেতাজির বার্মা আসা পর্যন্ত ছিল স্ক্রিপ্টটিতে। লেখাটির মধ্যে নেতাজি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিলেন। অভিনয় সংগীত ধারাভাষ্যপর্ব উল্লেখযোগ্য ছিল।’ সেই আলেখ্যটি শেষ পর্যন্ত মঞ্চস্থ হয়নি নানা কারণে।
১৯৪৮ সালে কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর কলকাতায় এমএ পড়তে এসে ঋত্বিক ঘটক গণনাট্য সংঘে যোগ দেন। সে সময় নাট্যনির্মাণ ও অভিনয়ে তিনি রীতিমতো ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সে সময়ে বীরু মুখোপাধ্যায়ের ঢেউ, পানুপালের ভাঙাবন্দর, ভোটের ভেট, রবীন্দ্রনাথের বিসর্জন, প্রমথনাথ বিশীর ইন্সপেক্টার জেনারেল অবলম্বনে (মূল রচনা গোগোল) অফিসার নাটকে তাঁর অভিনয় স্মরণীয় হয়ে আছে। অফিসার নাটকটি নতুন করে লিখেছিলেন। এমনকি কালী বন্দ্যোপাধ্যায় বিবাহের কারণে অনুপস্থিত থাকবেন বলে মাত্র দুদিনের মহড়ায় মূল চরিত্রে তিনি একবার অভিনয়ও করেছিলেন। প্রবল জনপ্রিয়তার কারণে নাটকটি এক মাসে বাহান্নবার অভিনীত হয়েছিল। তবে বিসর্জন নাটকে তাঁর ‘রঘুপতি’ চরিত্রে অভিনয়ের কথা সর্বজনবিদিত। তিনি শেকসপিয়রের জন্মোৎসবে শ্রীরঙ্গম মঞ্চে উৎপল দত্তের পরিচালনায় ম্যাকবেথ নাটকে অভিনয় করেছিলেন। নাট্যচক্রের নীলদর্পণ ও শম্ভু মিত্রের পরিচালনায় নবান্ন নাটকেও (তখনও দলের নাম বহুরূপী হয়নি) অভিনয় করেছিলেন। ঋত্বিক ঘটকের হাত ধরেই কুমার রায় ‘বহুরূপী’ নাট্যদলে যোগ দেন।
মাত্র পাঁচটি মৌলিক নাটক লিখেছিলেন ঋত্বিক ঘটক। জ্বালা, দলিল, সাঁকো, জ্বলন্ত এবং সেই মেয়ে। এ ছাড়া ব্রেশটের খড়ির গণ্ডী ও গ্যালিলেও অনুবাদ করেছিলেন। নাটকের সংখ্যা বেশি না হলেও সমকালীন সমাজ ও সময়ের ছবি ফুটে উঠেছে তাঁর নাটকে। নাটকগুলো পর্যায়ক্রমে আলোচনা করলেই সমাজমনস্ক ঋত্বিকের একটি উজ্জ্বল ছবি পাওয়া যাবে।
জ্বালা ঋত্বিক ঘটকের লেখা প্রথম নাটক। যদিও তিনি দলিল নাটকটি প্রথম লিখতে শুরু করেন। এই নাটকের পশ্চাৎ কাহিনী ঋত্বিক নিজেই এইভাবে বিধৃত করেছেন, “পি.সি. কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি, সে আমাকে বলল, ‘ইউ টেক ওভার দি চার্জ অফ বেঙ্গল’। করেসপন্ডেন্ট আর কী! সে সময় আমি একতিরিশটা সুইসাইড... মানে, অ্যাজ এ করেসপন্ডেন্ট, অ্যাজ এ জার্নালিস্ট, আমাকে এই সমস্তগুলো কভার করতে হলো। তো একতিরিশটা সুইসাইড দেখে—তার ওপরে আমি ‘সুইসাইড ওয়েভ ইন ক্যালকাটা’ বলে লিখে পাঠালাম। সেটা বেরোল এবং খুব নামটাম হলো। তা আমি ভাবলাম কী, এতে তো জমবে না মাল। আরো রাগ প্রকাশ করার একটা ব্যাপার আছে। তখন আমি ফিল্মে এনক্লোজ করিনি অ্যাট অল। এই জ্বালা নাটক থেকে সিলেক্ট করা ছটা চরিত্র—ইচ ওয়ান ইজ এ ট্রু ক্যারেকটার। জ্বালা ইজ এ ডকুমেন্টারি। এই নাটক লিখলাম এবং অ্যাক্টিং করলাম। ছেলেমেয়েদের নিয়ে কাজ করলাম।”
এই নাটকের একটি দুঃখময় পটভূমি আছে। ওই সময় কলকাতা শহরে এক মাসের মধ্যে বহু মানুষ আত্মহত্যা করেছিল। সেই রকম কয়েকটি চরিত্র সন্নিবেশ করে এই নাটক লেখা। একমাত্র উন্মাদ চরিত্র ছাড়া সবগুলোই জীবন্ত, বাস্তব। জ্বালা নাটকটি কলকাতা বেতারে অভিনীত হয়ে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। বাংলা ছাড়াও হিন্দিতে অনূদিত হয়ে পাটনা ও দিল্লি রেডিওতে সম্প্রচারিত হয়েছিল। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভেদের জালে জড়িয়ে পড়া যন্ত্রণাক্লিষ্ট মানুষের সম্মেলক আর্তনাদ ফুটে উঠেছে নাটকের মূল বক্তব্যে। মৃত্যুর অবিরল পদধ্বনির মধ্যে জীবনের অসামান্য জয়গান এই নাটকে প্রতীয়মান হয় শেষ পর্যন্ত।
এর পরের নাটক দলিল। গণনাট্য সংঘের সেন্ট্রাল স্কোয়াডের এই প্রযোজনা প্রথম অভিনীত হয় ২০৬ লোয়ার সার্কুলার রোড়ে ভূপতি নন্দীর বাড়ির ছাদে। তৃপ্তি মিত্র পদ্মার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। দর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং শম্ভুমিত্র। এই নাটকই ১৯৫৩ সালে মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পায়।
এই নাটকটি যখন ছাপা হয়, তার ভূমিকায় ঋত্বিক ঘটক লিখেছেন, ‘সম্পূর্ণাঙ্গ নাটক বলতে যা বোঝায়, দলিল একেবারেই তা নয়। পদ্মার স্রোতের মতোই বাস্তুচ্যুত বাঙালির ধারা চলেছে এগিয়ে এক অলঙ্ঘ্য পরিণতির দিকে। একদিকে রয়েছে চরম প্রতিকূল অবস্থা, আর একদিকে বলিষ্ঠ দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি, এ দুইয়ে মিলিয়ে আজকের বাস্তবকে সৃষ্টি করেছে। তারই ঘাত-প্রতিঘাত চলছে ঘটনা থেকে ঘটনায়। স্রোতের ঢেউয়ের মতো ছাপিয়ে ছাপিয়ে। তিনটি প্রবাহে সেই মূল সুরটিকে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।’
দেশভাগ এবং সাম্প্রদায়িক হানাহানি। বাঙালি জীবনে যে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছিল, তারই ফলশ্রুতি ঋত্বিকের পরের নাটক সাঁকো। মনে রাখা দরকার, দেশভাগকে ঋত্বিক কোনো দিনও মেনে নিতে পারেননি। সারাজীবন তাঁকে এই কষ্ট তাড়া করে ফিরেছে। তাঁর তৈরি ছবিতেও এই প্রসঙ্গটি ফিরে ফিরে এসেছে। সাঁকো নাটকটি শুরু হচ্ছে হিন্দু-মুসলমানের রক্তক্ষয়ী দাঙ্গার এক রাত্রির ঘটনা দিয়ে। মানুষ মারছে মানুষকে। হিন্দু মুসলমানকে, মুসলমান হিন্দুকে মারছে—এ নির্মম ঘটনা ছাপিয়ে ফুটে উঠেছে বাঙালি মারছে বাঙালিকে। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে যার সূচনা, অনুশোচনা ও আত্মদহনের মধ্যেই এর অবসান। মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা আর নিবিড় মমতা দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ও ঐক্যের কথাই শেষ পর্যন্ত উচ্চারিত হয়েছে।
সাঁকো নাটকের পরে পরবর্তী তেরো বছর ঋত্বিক ঘটক নাট্যজগৎ থেকে কেবল বিচ্ছিন্ন ছিলেন না, এরই মধ্যে তাঁর জীবনেও ঘটে গেছে নানা পরিবর্তন। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান ঘটনা ১৯৫৫ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি তথা গণনাট্য সংঘের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এদিকে একটু একটু করে সিনেমা জগতের সঙ্গে তিনি জড়িয়ে পড়তে থাকেন। প্রথম ছবি নাগরিক নির্মিত হয়েও মুক্তি পায় না। কত অজানারে ছবিটির ৭৫ অংশ নির্মাণ করেও শেষ করতে পারেননি। তবু দমে যাননি তিনি। অযান্ত্রিক মুক্তি পাওয়ার পর চলচ্চিত্রকার হিসেবে তাঁর দক্ষতা সর্বজনবিদিত হয়। ক্রমে বাড়ি থেকে পালিয়ে, কোমল গান্ধার, মেঘে ঢাকা তারা, সুবর্ণরেখা তৈরি করে তিনি রীতিমতো সাড়া ফেলে দেন। তবুও তিনি নাটক নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে থাকেন। ষাট দশকের শেষদিকে তিনি অভিনয় দর্পণ পত্রিকা সম্পাদনার কাজে যোগ দেন। সেই পত্রিকার প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যাতেই প্রকাশিত হয় তাঁর সাঁকো নাটকটি। তাঁর সম্পাদনায় ওই পত্রিকার ওই সময়কার সংখ্যাগুলো দেখলেই বোঝা যাবে, ঋত্বিকের কী পরিমাণ উৎসাহ ও আগ্রহ ছিল নাট্যশিল্পে। সাঁকোর পরের নাটক জ্বলন্ত। এই নাটক লেখার ইতিহাসটি বেশ কৌতূহলোদ্দীপক।
১৯৭৪-এ যুক্তি তক্কে গপ্পো ছবির পরে তিনি সেই বিষ্ণুপ্রিয়া নামে একটি ছবি তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন। এনএফডিসিতে প্রস্তাবিত ছবিটির সংক্ষিপ্তসার জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ছবিটি শেষ পর্যন্ত হয়নি। ওই চিত্রকাহিনী অবলম্বনে রচিত হয়েছিল জ্বলন্ত নাটকটি। চারটি দৃশ্যে বিভক্ত জ্বলন্ত নাটকটি সেই বিষ্ণুপ্রিয়া চিত্রকাহিনীর অনুরূপ। সেই সময় যে মাস্তানরাজ তৈরি হয়েছিল, তাদের বীভৎস কর্মকাণ্ডের শিকার হয়ে কীভাবে একটি নিষ্পাপ মেয়ের জীবন শেষ হয়ে গেল অগ্নিকাণ্ডে, তারই এক নির্মম আলেখ্য জ্বলন্ত নাটকটি। ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট প্রাচীতীর্থর প্রযোজনায় নাটকটি কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টসে প্রথম মঞ্চস্থ হয়। নাট্যরচনা, সংগীত, মঞ্চনির্মাণ, আলো এবং পরিচালনার দয়িত্বে ছিলেন স্বয়ং ঋত্বিক।
ঋত্বিক ঘটকের শেষতম মৌলিক নাটকের নাম সেই মেয়ে। ১৯৬৯-এ ১০ থেকে ১৪ জুলাই—এই ক’দিনের মধ্যে নাটকটি তিনি লেখেন মানসিক হাসপাতালে বসে। ওই সময় তিনি কিছুদিন সাময়িকভাবে মানসিক অসুস্থতার কারণে ওখানে ভর্তি হয়েছিলেন। সুস্থ হওয়ার পর ওখানেই নাটকটি রচনা করেন, অনুবাদ করেন কুমারসম্ভবের অষ্টম সর্গ। কলকাতার গোবরা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের দিয়ে নাটকটি অভিনয়ও করান। অভিনয় দর্পণ পত্রিকার দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যায় (জুলাই-আগস্ট ১৯৬৯) নাটকটি মুদ্রিত হয়। নাটকটিতে সংযোজিত একটি গানের কথা ও সুর সংযোজনা করেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর। একটি মানসিক চিকিৎসালয়ে সন্তানহারা শান্তি নামের এক গৃহবধূর জীবনের কথা ব্যক্ত হয়েছে নাটকটিতে। এই নাটকের একটি চরিত্র ডাক্তারের। তাঁর একটি সংলাপ এই রকম, ‘মানুষ ব্যথা পায়, কষ্ট পায়, তরঙ্গে তরঙ্গে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে ভাবে মৃত্যু এলো বুঝি। কিন্তু মৃত্যুর ছদ্মবেশ ছেড়ে বেরিয়ে আসে নবজীবন... সব জন্মই তো তাই।’ ডাক্তার জানান, আসল চিকিৎসা ভালোবাসা। আর ভালোবাসা, মানুষকে ভালোবাসাই ঋত্বিক দর্শনের মূল কথা—কি থিয়েটারে, কি সিনেমায়।
আগেই জানিয়েছি, ঋত্বিক ঘটকের নাটকের সংখ্যা বেশি নয়। মৌলিক নাটক মাত্র পাঁচটি আর ব্রেশটের খড়ির গণ্ডি আর গ্যালিলেও অনুবাদ করেছিলেন। তাঁর অস্থির স্বভাব কোনো কিছুতেই তাঁকে বেশিদিন নিমগ্ন থাকতে দেয়নি। মৃত্যুর চারটি দশক অতিক্রম করার পরও তাঁর নাটক আজও প্রাসঙ্গিক।
‘মানুষ, তোমাকে ভালোবাসি’ এই গভীর জীবনদর্শন নিয়ে তিনি নাট্যসৃজনে ব্রতী হয়েছিলেন। অভিনয় দর্পণ পত্রিকার প্রথম বর্ষ চতুর্থ সংখ্যায় সম্পাদকীয়তে তিনি লিখেছিলেন, ‘সব শিল্পের শেষ কথা মানুষকে ভালোবাসা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ম্যাক্সরাইন হার্ডও করিয়াছিলেন, তাহারও ইতিহাস লিখিত আছে। ‘আঁদ্রে আতোয়া’ হইতে আরম্ভ করিয়া কনস্টানটাইন স্তানিশ্লাভস্কির মধ্য দিয়া অটো ব্রাহামের ইতিহাসও আমরা ভুলি নাই। কিন্তু সর্বস্তরেই, এক জায়গায় পৌঁছানো গিয়াছে, সেটা মানুষকে ভালোবাসা।’ জ্বালা থেকে সেই মেয়ে—এই দীর্ঘকালীন নাট্যপ্রবাহে এই ভালোবাসাকেই তিনি নাটকের প্রাণশক্তি হিসেবে অনুভব করেছেন। শুধু নাটকে নয়, তাঁর তৈরি সিনেমাতেও ছিল সেই ভালোবাসারই জয়ধ্বনি।
ঋত্বিক ঘটকের নাট্যচর্চা
(কালানুক্রমিক তথ্যপঞ্জি)
১৯৩৬ চন্দ্রগুপ্ত : কালকাতা (রিচি রোড/ম্যাডাক্স স্কোয়ার) চাণক্য : ঋত্বিক কুমার ঘটক (বয়স ১১ বছর)। শিশুদের উপযোগী করে পুনর্লিখন এবং নির্দেশনা—ড. তপতী মুখোপাধ্যায় (ঋত্বিকের পুসিদি)
১৯৪৮ নটীর পূজা : সদ্যপ্রয়াত কবির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য। ঋত্বিক এঁকেছিলেন রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি, যা মঞ্চসজ্জায় ব্যবহৃত হয়। মেজদি সম্প্রীতি দেবী থাকতেন মধ্যপ্রদেশে। জামাই বাবু ক্ষিতিশ রায় কোলিয়ারি ইঞ্জিনিয়ার। ওঁদের উদ্যোগে এই আয়োজন।
১৯৪৩ অচলায়তন : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পাবলিক লাইব্রেরি, রাজশাহী, নির্দেশনা, দৃশ্যপট নির্মাণ ও অভিনয়—ঋত্বিক ঘটক।
১৯৪৩ ডাকঘর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাজশাহী। নির্দেশনা অভিনয়, আলো, মঞ্চ ও আবহ—ঋত্বিক ঘটক।
১৯৪৩ পরিত্রাণ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজশাহী পাবলিক লাইব্রেরির মাঠের অস্থায়ী মঞ্চে অভিনয়। নির্দেশনা এবং ধনঞ্জয় বৈরাগীর ভূমিকায় ঋত্বিক ঘটক। প্রতাপ-কুমার রায়। প্রযোজনা-ঘোড়ামারা নাট্য সমাজ।
১৯৪৩ ফাল্গুনী : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : রাজশাহী কলেজের ছাত্রছাত্রী কর্তৃক অভিনীত। অভিনয়ে-কুমার রায়, সুশীল সিদ্ধান্ত ইত্যাদি। নির্দেশনা এবং অভিনয়-ঋত্বিক ঘটক।
১৯৪৩ বিসর্জন : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজশাহী। নির্দেশনা ও রঘুপতির চরিত্রে অভিনয়-ঋত্বিক ঘটক। এই নাটকে দ্বিতীয় অভিনয় হয়েছিল (২.১০.১৯৫১) মিনার্ভা থিয়েটারে উৎপল দত্তের নির্দেশনায়। পোশাক পরিকল্পনা ও রঘুপতির ভূমিকায়-ঋত্বিক ঘটক। প্রযোজনা-ভারতীয় গণনাট্য সংঘ, মধ্য কলকাতা শাখা।
১৯৪৩ রাজা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজশাহী। নির্দেশনা ও ঠাকুরদার ভূমিকায় ঋত্বিক ঘটক। অন্যান্য ভূমিকায় কুমার রায়, সুশীল সিদ্ধান্ত প্রমুখ।
১৯৪৭ জাগরণ : অতীন্দ্র মজুমদার, বহরমপুর। নৃত্যগীত ভাষ্য এবং অভিনয় সমৃদ্ধ এই আলেখ্যর সুর সংযোজনা ও নির্দেশনা অতীন্দ্র মজুমদার। অভিনয়ে ঋত্বিক ঘটক (জিন্নাহ) এবং শৈলেশ্বর ভট্টাচার্য (নেহরু) প্রমুখ।
১৯৪৭ কালো সায়র : ঋত্বিক কুমার ঘটক, বহরমপুর। রচনা নির্দেশনা ও অভিনয়ে ঋত্বিক ঘটক। অপ্রকাশিত এই নাটকের পাণ্ডুলিপি আবিষ্কৃত হয়েছে অনেক বছর পরে।
১৯৪৮ নবান্ন : বিজন ভট্টাচার্য, নির্দেশনা-শম্ভুমিত্র, প্রযোজনা-অশোক মজুমদার ও সম্প্রদায় (পরে এই দলই বহুরূপী নামে পরিচিত)। ১৩.৯.১৯৪৮ এ কলকাতার রংমহল মঞ্চে অভিনীত এই নাটকে ঋত্বিক ঘটক অভিনয় করেছিলেন রাজীব চরিত্রে। অন্যান্য ভূমিকায়-কলিম শরাফি, কালী সরকার, গঙ্গাপদ বসু, জলদ চট্টোপাধ্যায়, বিজন ভট্টাচার্য, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, তৃপ্তি মিত্র, মুক্তি গোস্বামী, ললিতা বিশ্বাস এবং শম্ভু মিত্র।
১৯৪৯ ঢেউ : বীরু মুখোপাধ্যায়, প্রথম অভিনয় যাদবপুর কলেজ হোস্টেলের ছাদে; দ্বিতীয় অভিনয়-ঐ দিনই সিটি কলেজে। নির্দেশনা ও বৃদ্ধ পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করেন ঋত্বিক ঘটক।
১৯৫০ জ্বালা : ঋত্বিক কুমার ঘটক। প্রথম মৌলিক নাটক রচনা। প্রথম অভিনয় হয়েছিল লেকভিউ রোডে গোপনে এক ভদ্রলোকের ফাঁকা জমিতে অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করে। নির্দেশনা ও পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করেন ঋত্বিক ঘটক। আলো-তাপস সেন, প্রম্পটার-মৃণাল সেন। অভিনয়ে ছিলেন আলম কর, গীতা সোম, পানু পাল, বারীন বসু প্রমুখ। বেতার সম্প্রচারে নাট্যকারের ছদ্মনাম-ভবেশ বাগচি। ১৯৬৭’র এই অভিনয়ের নির্দেশক ছিলেন ঋত্বিক ঘটক।
১৯৫০ নীলদর্পণ : দীনবন্ধু মিত্র-ই. বি. আর ম্যানশন (বর্তমানে নেতাজি ইনস্টিটিউট, শিয়ালদহ) কৃষকের ভূমিকায়-ঋত্বিক ঘটক। নির্দেশনা-বিজন ভট্টাচার্য, প্রযোজনা-নাট্যচক্র, আলো-তাপস সেন, প্রম্পটার- মৃণাল সেন।
১৯৫১ কলঙ্ক : বিজন ভট্টাচার্য। একাঙ্ক। প্রযোজনা : ক্যালকাটা থিয়েটার। নির্দেশনা এবং বৃদ্ধ সর্দার চরিত্রে নাট্যকার স্বয়ং। অভিনয়ে- ঋত্বিক ঘটক (টাউট-১) উৎপল দত্ত (টাউট-২) গীতা সেন, প্রভাদেবী ও শোভা সেন প্রমুখ।
১৯৫১ ভাঙাবন্দর : পানু পাল। প্রথম অভিনয়-১৭.০৪.১৯৫১। প্রযোজনা-ভারতীয় গণনাট্য সংঘ (মধ্য কলকাতা শাখা) নির্দেশনা- উৎপল দত্ত। অভিনয়ে-ঋত্বিক ঘটক, উৎপল দত্ত প্রমুখ। নির্বাচনী প্রচার নাটক।
১৯৫২ ভোটের ভেট : পানু পাল। প্রযোজনা-ভারতীয় গণনাট্য সংঘ (মধ্য কলকাতা শাখা)। নির্দেশনা-উৎপল দত্ত। অভিনয়ে-ঋত্বিক ঘটক, মমতাজ আমেদ খান প্রমুখ।
১৯৫২ কত ধানে কত চাল : ঋত্বিক কুমার ঘটক। স্বাধীন ভারতের প্রথম নির্বাচন উপলক্ষে পোস্টার নাটক। বিষয় : খাদ্য সংকট।
১৯৫২ ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে : ঋত্বিক কুমার ঘটক। সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে পোস্টার নাটক। সিনেমার স্টুডিওতে বসে লেখা তাৎক্ষণিক নাটক। বিষয়-খাদ্য আন্দোলন।
১৯৫২ দলিল ঋত্বিক ঋত্বিক কুমার ঘটক। নির্দেশনা ও ক্ষেতুঘোষের ভূমিকায় নাট্যকার শ্রীঘটক। প্রযোজনা ভারতীয় গণনাট্য সংঘ (সেন্ট্রাল)। নাটকটি ১৯৫৪ সালের কয়েকটি রবিবার সকালে রক্সি প্রেক্ষাগৃহে অভিনীত হয়েছিল।
১৯৫২ ম্যাকবেথ : উইলিয়াম শেকসপিয়র। অনুবাদ : নীরেন রায়। প্রথম অভিনয় ২৩.০৪.১৯৫২। শ্রীরঙ্গম, কলকাতা। প্রযোজনা : ভারতীয় গণনাট্য সংঘ, উত্তর কলকাতা শাখা। নির্দেশনা-উৎপল দত্ত। অভিনয়ে ঋত্বিক ঘটক, শোভা সেন, উৎপল দত্ত প্রমুখ।
১৯৫৩ অফিসার : নিকোশাই গোগোল। অনুবাদ-প্রমথনাথ বিশী। নাট্যরূপ ও নামভূমিকায়-ঋত্বিক ঘটক। নির্দেশনা-উৎপল দত্ত। প্রযোজনা-ভারতীয় গণনাট্য সংঘ (মধ্য কলকাতা শাখা) সেন্ট্রাল স্কোয়াড) নির্বাচনী প্রচারে এক মাসে ৫২ বার অভিনীত।
১৯৫৪ ইস্পাত : ঋত্বিক কুমার ঘটক। অন্য নাট্যকার রচিত নাটকের তিনটি দৃশ্যের পুনর্লিখন-ঋত্বিক ঘটক। ভারতীয় গণনাট্য সংঘের (মধ্য কলকাতা শাখা) মহড়া হলেও অভিনয় হয়নি।
১৯৫৪ নীচেল মহল : ম্যাক্সিম গোর্কি। অনুবাদ-উমানাথ ভট্টাচার্য। ঋত্বিক ঘটকের উদ্যোগে দীর্ঘদিন মহড়া চললেও অভিনয় হয়নি। কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়, নিবেদিত দাস, সাধনা চৌধুরী, সুরমা ভট্টাচার্য প্রমুখ অভিনয়ে ছিলেন।
১৯৫৫ সাঁকো : ঋত্বিক কুমার ঘটক। প্রথম অভিনয় হয়েছিল কলকাতার রংমহল রঙ্গালয়ে। নির্দেশনা ও তসলিম মিঞার চরিত্রে ঋত্বিক ঘটক। আলো-তাপস সেন।
১৯৫৫ হ য ব র ল : সুকুমার রায়। নাট্যরূপ ও নির্দেশনা-ঋত্বিক ঘটক। মহলা হলেও অভিনয় হয়নি। অনেক পরে ১৯৬৩ সালে একাডেমি অব ফাইন আর্টস মঞ্চে অভিনয়ের উদ্যোগ নেওয়া হলেও মঞ্চস্থ হয়নি।
১৯৫৬ মুসাফিরে কে লিয়ে (হিন্দি) : ম্যাক্সিম গোর্কি। প্রথম অভিনয় ১৮.১২.১৯৫৬, ভারতীয় বিদ্যাভবন, বম্বে। প্রযোজনা-আই, পি, টি, এ। নাট্যরূপ গোবিন্দ মালি, সংগীত-সলিল চৌধুরী, আলো-তাপস সেন, মঞ্চ-সুধেন্দু রায়। পরিচালনা-ঋত্বিক ঘটক। অভিনয় করেছিলেন-এ কে, হাঙ্গল, গোবিন্দ মালি, বলরাজ সাহনি, বিমল দলভি প্রমুখ।
১৯৫৭ স্ত্রীর পত্র : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রযোজনা-গ্রুপ থিয়েটার। নির্দেশনা ঋত্বিক ঘটক। নাট্যরূপ-গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৬৩ বিদ্যাসাগর : বনফুল। প্রযোজনা-ভারতীয় গণনাট্য সংঘ, প্রান্তিক শাখা। নির্দেশনা ও নাম ভূমিকায় জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায় থাকলেও এই নাটকের প্রাণকেন্দ্র অদৃশ্যভাগে ছিলেন ঋত্বিক ঘটক, অকপটে এই ঋণস্বীকার করেছেন পরিচালক স্বয়ং।
১৯৬৪ গ্যালিলেও চরিত : বের্টোল্ট ব্রেশট। প্রথম বঙ্গানুবাদ-ঋত্বিক ঘটক। প্রথম প্রকাশ ১৯৬৪, উত্তরকাল শারদ সংখ্যা। গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৩৭২ বঙ্গাব্দের ১লা বৈশাখ, জাতীয় সাহিত্য পরিষদ, পৃষ্ঠা সংখ্যা ১০৪। প্রথম অভিনয় ৪.২.১৯৬৪, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন মঞ্চ, প্রযোজনা-বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক সংঘ। পরিচালনা-সুশীল সিদ্ধান্ত ও সিদ্ধেশ্বর চট্টোপাধ্যায়। গ্যালিলেও জন্মের চতুর্শতবার্ষিকী স্মরণে অভিনয়। পরবর্তীকালে এই নাটকের অনুবাদ করেছেন আরো অনেকেই।
১৯৬৬ খড়ির গণ্ডী : বের্টোল্ট ব্রেশট। প্রথম বঙ্গানুবাদ-ঋত্বিক ঘটক। প্রকাশ গন্ধর্ব পত্রিকার ২৭-২৯ সংখ্যা, ১৯৬৬। পরবর্তীকালে আরো অনেকেই এই নাটকের অনুবাদ/রূপান্তর করেছেন।
১৯৬৯ সেই মেয়ে : ঋত্বিক কুমার ঘটক। অভিনয়-গোবরা মানসিক হাসপাতাল। নির্দেশনায় শ্রী ঘটক। অভিনয়ে ছিলেন হাসপাতালের নার্স, রোগী ও ডাক্তার।