কবিতা

নন্দিনী ও অন্যান্য

Looks like you've blocked notifications!

নন্দিনী : শরীরীকলায়

কলাবিদ্যায় ঝুলে আছে নন্দিনীর কাটা স্তনের পাশে

বাইজানটাইন সভ্যতার ঘুমন্ত ফড়িং

 

নন্দিনীর শরীরীকলায় ধৃষ্টতার দাঁতগুলো

সাদাকালোয় রাঙিয়ে দিয়েছে ক্ষণিক পৃথিবী

মথ এসে খেয়ে গেছে প্রাতঃকিরণের রক্তলালপ্রীতি

 

নন্দিনী তার শরীর ছেঁকে টেনে টেনে

লোকালয়ে ছুড়ে দিচ্ছে সভ্যতার ভেজা বস্ত্রগুলি

 

তা থেকে ফিনকি দিয়ে ছুটে আসছে কারো বা মাথা

কারো বা হাত-পায়ের দৈর্ঘ্য প্রস্থ নাভি

 

নন্দিনীর কাটা মস্তকের ঢালে আজ আবার মেঘ করে

শীত ঋতু ভিজিয়ে দিতে ঝুঁকে এসেছিল বর্ষণের দ্বিধা

 

হস্তরেখা ফাঁকি দিয়ে গুণী-ঋষি জেনেছিল

কলাবিদ্যা ভেসে যাবে এমন প্লাবন যদি দীর্ঘায়িত হয়

কবন্ধ শরীর ফুঁড়ে আবার নন্দিনী উঠে

                      অবিকল ডুবে গেছে শরীরীকলায়

 

পঞ্চানন ঘোষ : ঘোল বিক্রেতা

 

ভোর হতে না হতেই কুমার নদের কম্পমান সাঁকো পাড়ি দিয়ে

পঞ্চানন ঘোষ ঘোল নিয়ে আসেন ‘ঘোল, হেই ঘোল’ বলে—

কিংবা আমিই ছুটে যাই দুরু দুরু বুকে বাঁশের সাঁকো হেঁটে

 

আমি যখন গ্লাস ভরে ঘোল দিতে বলি, ভেসে ওঠা ছানার দিকে

চলে যায় চোখ, আর পঞ্চানন যখন একবার আমার দিকে একবার

ঘোলের দিকে তাকিয়ে ঘোল দিতে যায়

ঘোলের পাত্রের নিচে অথৈ জলে বন্যা বয়ে যায়...

 

আমি তাকে বলি, এত জল কোথা থেকে আসে?

পঞ্চানন বলে, ছোট্টবেলায় সাঁতার কাটতাম আরো গভীর জলে

 

আমি পঞ্চাননের মুখের দিকে বিস্ময়ভরে তাকাতেই

তার চোখের মণিতে দু’তিনজন শিশুসন্তানের মুখ

ভেসে উঠতে দেখি। দেখি তারা সাঁতার কাটছে

আরো অথৈ জলে

আমি পঞ্চাননকে বলি, তোমার পাত্র থেকে জল ছেঁকে

আরেক গ্লাস ঘোল দাও তো দেখি

পঞ্চানন ঘোলের ভেতর হাত ঢুকিয়ে আমার দিকে

জলবিহীন ঘোল তুলে দেয়

আমি কী মজা কী মজা বলে চুকচুক করে ঘোল চেটে খাই আর

 

পঞ্চাননের চোখ থেকে শিশুগুলো

ঝুরঝুর করে মাটিতে পড়ে যায়

 

কমান্ডার মিয়াজী

শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রার নিচে বসবাস করেন কমান্ডার মিয়াজী

ইচ্ছে হলে কালেভদ্রে সময় করে রৌদ্রে ভেসে ওঠেন

 

চিড়িয়াখানার কেয়ারটেকারের চাকরি ছেড়ে ইদানীং তিনি

হাঁসমুরগির খামার গড়ে, তাতে নিজের হাতে নামের পূর্বে

কমান্ডার বোঝাতে একটা কিছু এঁকে, স্পষ্টাক্ষরে

                              কমান্ডার শব্দটি লাগিয়ে দিয়েছেন

 

কিন্তু আজকাল তাকে খুঁজতে গেলে শূন্য ডিগ্রির অন্তরাল ব্যতীত

কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। এদিকে তার কমান্ড ব্যতীত হাঁসমুরগিরা

না খেতে খেতে শূন্য থেকে মাত্র এক ডিগ্রি ওপর দিয়ে প্রবাহিত

জলের পিঠে ভাসছে। এবং পৃথিবী থেকে বিদায়ের অন্তিম কান্নায়

                                     সারা গ্রাম পাথর করে দিয়েছে

 

কমান্ডার মিয়াজী এবার এক ডিগ্রি ওপরে উঠে দেখেন

আজো পৃথিবীতে তার কমান্ড ব্যতীত হাঁসমুরগিও অনাহারে

অন্তিম যাত্রায় ডানা মেলে দিতে প্রস্তুত রয়েছে—

 

এবং ভাবতে ভাবতে হাঁসমুরগির খামার থেকে ভেসে আসা দীর্ঘ

শূন্যতার গগনবিদীর্ণ কমান্ডে মিয়াজীর হিতাহিত হারিয়ে যায়

 

এই প্রথম মিয়াজী আরো গভীর শূন্যতায় ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে

বুঝতে পেল পৃথিবীতে শূন্যতার চেয়ে বড় কমান্ডার কখনো ছিল না, এবং

 

যেকোনো কমান্ডের বিপরীতে শূন্যতা গভীর থেকে গভীরে বেঁচে থাকে