শিল্পাচার্যকে নিয়ে প্রকাশিত হলো ‘জয়নুল : জীবন ও কর্ম’
বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রশিল্পের পুরোধা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে নিয়ে প্রকাশিত হলো গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘জয়নুল : জীবন ও কর্ম’।
বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের শিল্পচর্চাকে তাঁর সৃজিত শিল্পকর্ম দিয়ে তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি দেশের জন্য অনেক জাতীয় দায়িত্ব পালন করে গেছেন। শিল্পাচার্যের কর্মময় জীবন খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন শিল্প গবেষক ও জাতীয় জাদুঘরের সাবেক কিপার জাহাঙ্গীর হোসেন। জয়নুলের আঁকা দুর্লভ চিত্রকর্ম ও নানা দলিলের দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহ রয়েছে তাঁর কাছে। এরই ওপর ভিত্তি করে তিনি লিখেছেন এই গবেষণামূলক গ্রন্থটি।
এ উপলক্ষে গতকাল বুধবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো বইটির মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা উৎসব।
বরেণ্য শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অতিথিদের নিয়ে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী হাশেম খান ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘বইটিতে জয়নুল আবেদিনের সহধর্মিণীর সাক্ষাৎকার ও জয়নুলের হাতে লেখা বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য দলিল পুনঃমুদ্রিত হয়েছে। এটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।’
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শিল্পাচার্যের সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘১৯৬০-৬৩ সালের দিকে জয়নুলকে খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। শিল্পাচার্যের সঙ্গে আবার আমার দেখা হয়েছিল স্বাধীনতার পরে, তখন আমরা সংবিধান রচনা করছি। তার কাঁথা কালেকশন সংবলিত হয়েছিল আমাদের সংবিধানে। সেই কাঁথা কালেকশনের একটি অংশ তিনি আমাকে স্বাক্ষর করে উপহার দিয়েছিলেন। আমি সযত্নে রেখেছি সেটি। শিল্পাচার্যের অনেক ছবি এখনো অরক্ষিত রয়েছে এমন মন্তব্য করে শিল্পবোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দুর্লভ স্মৃতি ও ছবি বিভিন্নজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম প্রকাশ করা যেতে পারে।’
চিত্রশিল্পী হাশেম খান বলেন, ‘আমি দুজনকে মহামানব বলে জানি, তাদের একজন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর অপর জন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। বঙ্গবন্ধুর মতো করে শিল্পাচার্যও স্বপ্ন দেখতেন, এ দেশ একটি সমৃদ্ধশালী সাংস্কৃতিক দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।’
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কষ্ট করে হলেও লেখক বইটি লিখেছেন, এ জন্য তাকে ধন্যবাদ। তবে এতে যে ছবিগুলো সাজানো হয়েছে, এগুলো বিষয় অনুযায়ী হওয়া উচিত ছিল। যা হোক আমি মনে করি লেখক এ বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে পরবর্তী সংস্করণে ঠিক করে দিবেন।’
লেখক জাহাঙ্গীর হোসেন তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘বইটিতে শিল্পাচার্যের বেড়ে ওঠার সময়, ভারতীয় চিত্রকলা, তাঁর বাল্যজীবন, শিক্ষা, কর্মময় জীবন, কাজের ধরন, আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন ইত্যাদি বিষয় আলোকপাত করেছি। এ ছাড়া রয়েছে শিল্পাচার্যের সহধর্মিণী জাহানারা আবেদিনের সাক্ষাৎকার। আছে জাদুঘরের ৮০৭টি শিল্পকর্ম থেকে বাছাই করা ১০০টি শিল্পকর্মের আলোকচিত্র।’
বইটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা ‘মাওলা ব্রাদার্স’ এবং বইটির মূল্য রাখা হয়েছে এক হাজার টাকা।