কাজী আলিম-উজ-জামানের পাঁচ কবিতা

Looks like you've blocked notifications!

১.

তেরোটি বছর

 

ক.

এই তো তুমি, কত দিন পর!

কেমন আছ, কেমন ছিলে?

এই তো তোমার হাত, মোটা মোটা আঙুল

ফোলা ফোলা মুখ, আগের মতোই আছ।

মনেই হয় না তেরোটি বছর

বাড়িতে কী এখনো নেটওয়ার্কের সমস্যা?

মনে আছে, বলো! হাসি পায়!

যাই বলো না কেন, তুমি কিন্তু শুকিয়ে গেছ

তোমার বউ কি ভাত রাঁধে না

ফোন নম্বরটা দাও তো, বকে দিই

আমিষ প্রোটিন সব বাদ, 

এখনই ভেজিটেরিয়ান? তা হয় না

তুমি কিন্তু অনেক পরে যাবে

আজ আর ছাড়ছি না।

 

খ.

এই তো ভালো আছি, তুমি?

তোমাকে এ রকম একবারই দেখেছিলাম

কার জন্মদিনে, বলো তো!

রুচি-পছন্দ কিছু বদলায়নি দেখি

ঘাস রং কানের দুল, মেঘ রং টিপ

ঠোঁটে বৃষ্টি রঙের প্রলেপ

এই ঝরঝরে রইলে কী করে!

জিমটিম করো নাকি

শুনেছি আজকাল ঢাকার মেয়েরা বেশ জিম করে

চলো কোথাও বসি

ফিরে দেখি সুসময়।

 

২.

ঝামেলা

 

ঝামেলা হিম হয়ে জমে থাকে রেফ্রিজারেটরের ভেতর

দরজা খুলতেই বারবার দেখা দেয়, 

থরে থরে সাজানো প্যাকেট

আমি ওদের দাম দিয়ে কিনিনি।

 

কখনো একাকী, কখনো সঙ্গী জুটিয়ে আসে নিঃশব্দে

কেউ একটু দূরে দূরে আছে

আভাস দিচ্ছে কাছে আসার

একটু কি বেশি হয়ে গেল না!

 

কেউ আমাকে একটা বিরতিহীন ট্রেনের টিকিট দিতে পারেন?

আমার প্রিয় ঝামেলাকে উপহার দিতাম।

 

৩. 

ভুল বোঝ আমায়

 

আমাকে ভুল বোঝার জন্য সবাইকে আহ্বান করি

বলা, না বলার ভুল কেবল আমারই

ফুটতে না পারার ভুল তো আমারই

বাবলাতলা বিলীন হওয়ার দায়ও আমারই।

 

এই যে সড়কটি চলে গেছে ঢাকার পথে

এখানকার সড়ক পথে যত দুর্ঘটনা ঘটে

বাসে-লঞ্চে পাশাপাশি বসে যত প্রেম হয়

সবকিছুর দায় আমাকে দিয়ে দাও।

 

ভুল বোঝাবুঝির পর যতটুকু থাকে ভালোবাসা

এসো বন্ধু, তা নিয়েই বেঁচে-বর্তে থাকি।

 

৪. 

নন ফিকশন জগৎ 

 

আমার নন ফিকশন জগতে ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের আসর বসে না

রাত জেগে কৌশিকী চক্রবর্তী নেই

আছে কেবল বসন্ত ভোরে ক্লিশে কোকিলের ডাক

ছাদের রোদ-বারান্দায় সস্তা নোনতা বিস্কুট খেতে খেতে 

একটা-দুটো কাকের ফুরুত ফুরুত আসা-যাওয়া। 

 

যদি আমার সে জগৎ হতো বিচিত্রতার খামারবাড়ি

দেখতে বন্ধুরা, গাড়ি চালিয়ে আয়োজন করে বেড়াতে যেতাম

আর নিজে ট্রাক্টর চালিয়ে কত কিছুই না ফলাতাম

গমের পর ডাল, শিমের বিচি, মটরশুঁটি, কচি লাউ

চাদর গায়ে কফি পেয়ালা হাতে মসুর খেতে বসতাম।

 

এঁকে দেখাতাম কত কিছু

ভ্যান গগ লিখতেন জবরদস্ত আলোচনা

সে সবের কিছুই যখন হলো না

তাই ভাবছি কী লিখব নিজের কথা

কেমনে মিলবে ফর্মার হিসাব-নিকাশ।

 

৫.

কিছু মেলে, কিছু মেলে না

 

আমি তোমার একটি ছবি এঁকেছিলাম

ধূসর স্মৃতির রং পেনসিল দিয়ে

তারপর অনেক দিন পর যখন তুমি সামনে এলে

আমি মিলিয়ে দেখলাম, 

আমার আঁকায় অনেক ভুল আছে

কত দিন স্কুলে যাই না

আমার বইপত্র কিছুই নেই 

আমার তো ভুল হবেই।

 

মুখের চোরাবালি নদীটি ঠিকঠাক হয়নি

গভীর ডুব দিয়েও পাইনি তলের মাটি

আর আমার আলোর রংটি ঢাকা পড়ে গেছে ছায়ায়

বরং ছায়ার রঙে এসেছে কিছুটা আলো।

 

আমার বইপত্র কিছুই নেই 

আমার তো ভুল হবেই।