বাংলা একাডেমিতে ভাস্কর নভেরাকে স্মরণ

Looks like you've blocked notifications!

বাংলা একাডেমিতে গতকাল ১৩ই মে ২০১৫ বুধবার বিকেল ৫ টায় একাডেমির নবনির্মিত ড. মুহম্মদ এনামুল হক ভবনে বাংলাদেশে আধুনিক ভাস্কর্যের পথিকৃৎ এবং কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের অন্যতম নকশার নভেরা আহমেদের প্রয়াণে নাগরিক স্মরণসভা এবং ভাস্কর নভেরা প্রদর্শনী কক্ষ-এর শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। 

স্মরণসভার শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাস্কর নভেরা প্রদর্শনী কক্ষের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। এ সময় নভেরা আহমেদ স্মরণসভার আলোচকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৩ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত নভেরার ভাস্কর্য প্রদর্শনীর একটি ভিডিও ডকুমেন্টেশন, ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে নভেরার পরিবার স্থাপত্যকর্মটি প্রতিস্থাপন অনুষ্ঠানের ভিডিও ডকুমেন্টেশন এবং নভেরা বিষয়ে বিশিষ্টজনদের সাক্ষাৎকার এবং তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সংবলিত শিবু কুমার শীলের প্রামাণ্যচিত্রের অংশবিশেষ প্রদর্শিত হয়। স্মরণসভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। নভেরা আহমেদ: ফিরে দেখা শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক রেজাউল করিম সুমন। স্মৃতিচারণ ও মূল্যায়নমূলক আলোচনায় অংশ নেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন, অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন, স্থপতি শামসুল ওয়ারেস, শিবু কুমার শীল। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর, বাংলা একাডেমির সচিব মোঃ আলতাফ হোসেন, অধ্যাপক নিসার হোসেন, অধ্যাপক মামুন কায়সার, শিল্পী রশীদ আমিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির ফেলো শিল্পী হাশেম খান।  

সূচনা বক্তব্যে শামসুজামান খান বলেন, নভেরা আহমেদের প্রতি আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ অনেক আগ থেকেই। ঢাকায় তাঁকে আমরা ভাস্কর্য-কর্মরত অবস্থায় দেখেছি, অনুভব করেছি তাঁর আধুনিক মনন। সে আগ্রহ থেকেই পরবর্তীকালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক থাকাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য স্থান থেকে শিল্পীর বিপুল সংখ্যক ভাস্কর্যকর্ম সংগ্রহ করে জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলাম। তিনি বলেন, বাংলা একাডেমির নবনির্মিত ড. মুহাম্মদ এনামুল হক ভবনে এই নভেরা প্রদর্শনী কক্ষ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে উপমহাদেশের বিশিষ্ট এই ভাস্করের প্রতি আমাদের বিনীত শ্রদ্ধা নিবেদন করতে চেয়েছি। 

উপস্থাপিত গবেষণাপত্রে রেজাউল করিম সুমন বলেন, নভেরা সম্পর্কে অনেক ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। তবে তাঁর দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বিপুল এবং বিচিত্র সৃষ্টিকর্ম নভেরার সদাসক্রিয় শিল্পীসত্ত্বারই পরিচয়বহ। নভেরা-জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণায় এ সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য আবি®কৃত হচ্ছে যা নভেরাকে আমাদের কাছে খণ্ডিতভাবে নয় বরং তাঁর সামগ্র্যে তুলে ধরবে। 

স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, নভেরা আহমেদ ছিলেন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের অন্যতম নকশাকার। গোটা উপমহাদেশেই তিনি ছিলেন পথিকৃৎপ্রতিম ভাস্কর। ভাস্কর্য-জগতে নারীর অবস্থানকে শাণিতভাবে যুক্ত করেছেন তিনি। তাঁর ভাস্কর্যকর্মে নিপুণ শিল্পক্ষমতায় ঐতিহ্য ও সাম্প্রতিকতার মেলবন্ধন ঘটেছে। তিনি মানুষের বর্হিবাস্তব ও অন্তর্জগত উভয়েরই সফল শৈল্পিক রূপায়ক। তারা বলেন, নভেরা সারা জীবন উপেক্ষা এবং ভুল ব্যাখ্যার স্বীকার হয়েছেন। তাঁকে নিয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নানা রহস্যের আবরণ তৈরি করেছে, যেন তাঁকে অবমূল্যায়ন করার জন্যেই। তবে শিল্পের সদা প্রজ্জ্বলিত অগ্নিতেই নভেরা আমাদের মানসপটে চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। 

সভাপতির বক্তব্যে শিল্পী হাশেম খান বলেন, নভেরা আহমেদ ছিলেন একজন গুণী ভাস্কর। তাঁর অন্তর জুড়ে ছিল দেশ, মাটি, মানুষ, বিশ্ববোধ ও নিসর্গ। বাংলা একাডেমি তাঁর স্মরণে প্রদর্শনী কক্ষ স্থাপন এবং স্মরণসভার আয়োজন করে সকল শিল্পানুরাগী মানুষের ধন্যবাদার্হ হয়েছেন। 

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু।