শিল্পকলায় পঞ্চদশ জাতীয় শিশু-কিশোর ও যুবনাট্যোৎসব শুরু
প্রতিদিন ১০ হাজার শিশুর মিলনমেলায় বৈচিত্র্যময় পরিবেশনার শুভ সূচনার মাধ্যমে পর্দা উঠলো ‘পঞ্চদশ জাতীয় শিশু-কিশোর ও যুবনাট্যোৎসব ২০২৪’এর। আজ শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও পিপলস থিয়েটার এসোসিয়েশন যৌথভাবে এই আয়োজন করে।
শিশু-কিশোর ও যুবকদের ১০০টি নাট্য প্রযোজনা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার সমন্বয়ে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে শিশু-কিশোর ও যুবদের অংশগ্রহণে আয়োজিত বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ এবং বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব মঞ্চসারথি আতাউর রহমান। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘পড়াশোনা শিক্ষার মাধ্যমে নতুন বিশ্বে, প্রযুক্তি-বিজ্ঞানের এই যুগে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে, উদ্ভাবক হতে হবে, সেই সাথে নানারকম সৃজনশীল কাজে নিয়োজিত হতে হবে। আমরা একই সাথে মানবিক ও সৃজনশীল মানুষ হবো। আমরা সুনাগরিক হবো ও তার মধ্য দিয়েই বিশ্ব নাগরিক হবো। একেবারে কায়মনে বাঙালি হবার চেষ্টা করবো। সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে আমরা সৃজনশীলতাকে যুক্ত করবো।’
দীপু মনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ গঠনে, এই সংস্কৃতি চর্চা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে লিয়াকত আলী লাকী কাজ করছেন। সাংস্কৃতিক জগতে শিশু-কিশোরদের সম্পৃক্ত করে দেশকে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।’
সভাপতির বক্তব্যে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন- ‘যার জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না, তাকে কত নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্বের অনেক ষড়যন্ত্রকারীরা এতে জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা তাদের সহ্য হয় নাই। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ছিল, আমি সব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব, কেউ আমাদের দাবাতে পারবে না, থামাতে পারবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্ন সংগ্রাম করছেন তার সঙ্গে সর্বপ্রথম যারা থাকবে তারা শিল্পী, কবি, সাহিত্যিকরা, সর্বপ্রথম থাকবে শিশু কিশোর যুবরা। তারাই এই বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।’
পরে শিশুবন্ধু ঋত্বিক নাট্যপ্রাণ লিয়াকত আলী লাকীর সাথে প্রাণবন্ত সংগীত পরিবেশন করে শিশুরা। এরপর শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আজ বিকেল ৫টায় সৌরভ শাখাওয়াতের রচনায়, শামীম আহমেদ নির্দেশনায় এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি চট্টগ্রাম পরিবেশনায় নাটক ‘অদ্ভুদ ভুত’নাটক মঞ্চন্থ হয় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে। স্টুডিও থিয়েটার হলে সুকুমার রায়ের রচনা, অনিমেশ সাহা লিটুর নির্দেশনায় এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি, বরিশাল এর পরিবেশনায় ‘ঝালাপালা’নাটক মঞ্চস্থ হয়। সংগীত ও নৃত্যকলা হলে সুমিত মহন্তর নাট্যরূপ ও নির্দেশনায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি, রংপুর পরিবেশন করে ‘আরেক হীরক রাজ্য’।
সন্ধ্যা ৬টায় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে ভবতোষ রায় বর্মণের রচনায় ও নির্দেশনায় এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি সিলেটের পরিবেশনায় ‘বাঘের শিন্নি’নাটক মঞ্চস্থ হয়। স্টুডিও থিয়েটার হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা, শরণ রায়ের নির্দেশনা এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি, শেরপুর এর পরিবেশনায় ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’ নাটক মঞ্চস্থ হয়। সংগীত ও নৃত্যকলা হলে আনোয়ারুল ইসলাম বকুল এর রচনা, আসাদ সরকার এর নির্দেশনায় এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি, রাজশাহী পরিবেশনায় ‘একজন পিতার প্রস্থান’ নাটক মঞ্চস্থ হয়।
সন্ধ্যায় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে কাজী নজরুল ইসলামের রচনায়, শামীম আহমেদ টফি এর নির্দেশনায় এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি ঝিনাইদহ এর পরিবেশনায় ‘পুতুলের বিয়ে’নাটক মঞ্চস্থ হয়। স্টুডিও থিয়েটার হলে বিপ্লব কুমার সরকার এর রচনা ও নির্দেশনা এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি, খুলনা এর পরিবেশনায় ‘রিণু’নাটক প্রদর্শিত হয়। সংগীত ও নৃত্যকলা হলে মো. আরিফের মূলভাবনা, জহির বাচ্চুর রচনা ও নির্দেশনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি, বাগেরহাট এর পরিবেশনায় ‘ছন্দহীন গল্প’নাটক মঞ্চস্থ হয়।
রাত ৮টায় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে শুরু হয় পারভীন হক এর গল্প, অজয় দাস তালুকদারের নাট্যরূপ ও নির্দেশনায় এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি রাজবাড়ী পরিবেশনায় নাটক ‘গুজব’। স্টুডিও থিয়েটার হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা, সিদ্দিকী হারুন নাট্যরূপ, ইয়াসিন খান নির্দেশনায় এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি, হবিগঞ্জ এর পরিবেশনায় ‘বলাই’ নাটক মঞ্চস্থ হয়। সংগীত ও নৃত্যকলা হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা মো. মিনারুল ইসলাম জুয়েল এর নির্দেশনায় এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি, মাগুরা পরিবেশনায় ‘জুতা আবিষ্কার’নাটক মঞ্চস্থ হয়।
এই উৎসবে জেলা শিল্পকলা একাডেমির ৬৪টি ও পিপলস থিয়েটার এসোসিয়েশনের সদস্য সংগঠনের ৩৬টি প্রযোজনা মঞ্চস্থ হবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চার মিলনায়তনে প্রদর্শিত ১০০ শিশুতোষ নাটক সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।