অসময়ে ভাঙছে যমুনা, প্রতিশ্রুতিতে আটকা বাঁধ নির্মাণ
অসময়ে ভাঙছে যমুনা নদী। এতে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন রোধে স্থানীয়রা চাঁদা তুলে নদীতে বাঁশের ছটকা নির্মাণ করেছে।
জেলার এনায়েতপুরে আরকান্দি থেকে শুরু করে পাকুরতলা আবাসন পর্যন্ত ছয় স্থানে বাঁশের ছটনা দেওয়া হয়েছে। অসময়ে যমুনা নদীতে ভাঙন শুরু হওয়ায় এলাকার মানুষ বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। এদিকে, প্রতিশ্রুতিতে আটকে আছে বাঁধ নির্মাণ কাজ।
এলাকাবাসী জানায়, গত কয়েক বছর ধরে জেলার এনায়েতপুর থানার দক্ষিণে ব্যাপক নদীভাঙন চলছে। ভাঙনের কবলে পড়ে বর্তমানের নদীর পশ্চিম তীর ঘাটাবাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার আগে ছিল উথুলি গ্রাম। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ভাঙনে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বাঁধ নির্মাণের জন্য একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিলে এখন পর্যন্ত বাঁধের কাজ শুরু হয়নি।
নদীভাঙনে এরই মধ্যে ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, ঘাটাবাড়ি, পাকুড়তলা, কুঠিপাড়া, ভেকা ও পাচিল গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার বসত ভিটা ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া যমুনার পশ্চিম তীরে অবস্থিত চৌহালী উপজেলার হাটবয়ড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বসন্তপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত আটটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১৪টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, ঈদগাহ মাঠ, তাঁত কারখানাসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এরই মধ্যে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মণ্ডল, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, সচিব কবির বিন আনোয়ার। তারা ভাঙন রোধে প্রকল্প গ্রহণের কথা বলেছেন। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। তবে অসময়ে যমুনা নদী ভাঙনের কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। তারা দ্রুত বাঁধ নির্মানের দাবি জানিয়েছে।
স্থানীয় সমাজসেবক কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণের দাবিতে এলাকাবাসী একাধিবকার মানববন্ধন, সভা, সেমিনার, অনশন পালন করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বার বার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। শুষ্ক মৌসুম শেষ হয়ে বর্ষা মৌসুম শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্তু এখন বাঁধ নির্মাণের কোনো ব্যবস্থা নেই। এই অসময়ে নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা এলাকাবাসী বিভিন্ন স্থানে বাঁশের ছটনা দিয়ে ভাঙন থেকে বাঁচার চেষ্টা করছি।’
জালালপুর গ্রামের হাজী আজমত আলী মুন্সি, মহির উদ্দিন, দানেজ ব্যাপারী বলেন, সরকারের কাছে একটাই চাওয়া যেন খুব দ্রুত ভাঙন রোধে এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়। যমুনা তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প একনেকে পাস হতে দেরি হওয়ায় গ্রামের মানুষদের একত্রিত করে বাঁশের ছটকা দিয়ে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এনায়েতপুরে ভাঙন রোধে দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসের এটি পাস হওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে হয়তো আটকে গেছে। যেকোনো সময় প্রকল্পটি পাস হবে। জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ করার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।’