আইনের অপব্যাখ্যায় খালেদা জিয়া অধিকার থেকে বঞ্চিত : ড্যাব
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/11/30/khaleda-zia.jpg)
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) শীর্ষনেতারা বলেছেন, বিএনপি এবং এর বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিদেশে পাঠানোর দাবি জানালেও ফ্যাসিবাদী সরকার কোনো কর্ণপাত করেনি। পরিবারের লিখিত আবেদনেরও কোনো গুরুত্ব দেয়নি। হিংসার বশবর্তী হয়ে আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে বারবার তাঁকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। গত তিন বছরে সরকারের নিষ্ঠুরতায় বয়স্কা এই নারী বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে।’
‘এ অবস্থায় চিকিৎসক হিসেবে আমরা জরুরি ভিত্তিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক বিদেশে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। আশা করি, মানবিক বিবেচনায় স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বর্তমান সরকার তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেবেন’, যোগ করেন ড্যাবের নেতারা।
আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ড্যাবের শীর্ষ নেতারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ড্যাবের দপ্তর সম্পাদক ডা. ফখরুজ্জামান ফখরুল।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ সেলিম, ডা. মো. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, ডা. শহীদ হাসান, ডা. এরফানুল হক সিদ্দিকী, অধ্যাপক ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. মো. মেহেদী হাসান, ডা. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, ডা. শেখ ফরহাদ, ডা. খালেকুজ্জামান দীপু, ডা. নিলোফা ইয়াসমিন প্রমুখ।
ড্যাবের নেতারা বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তিনি লিভারের মারাত্মক জটিলতাসহ কয়েকটি জটিল রোগে ভুগছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় তাঁর রক্তের হিমোগ্লোবিন কমেছে। বাংলাদেশের যত চিকিৎসা প্রযুক্তি আছে তাঁর জন্য সবগুলো প্রয়োগ করা হয়েছে। এখন তাঁকে পূর্ণ সুস্থ করতে হলে অবিলম্বে বিদেশের উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো জরুরি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘সাবেক তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী ও গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া করোনাপরবর্তী জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রিউমোটয়েড আর্থ্রাইটিস, লিভার, কিডনি ও হার্টের বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে গত ১৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। গত ২৮ নভেম্বর খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা জানিয়েছেন এবং তাঁর পরবর্তী চিকিৎসার জন্য কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করেছেন।’
ডা. সালাম বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের বক্তব্যের পর চিকিৎসক সমাজসহ বাংলাদেশের মানুষ খুবই উদ্বিগ্ন। মেডিকেল বোর্ডের ভাষ্য অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার পরবর্তীতে চিকিৎসা আর বাংলাদেশে সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় তাঁর বিদেশে সুচিকিৎসা ও স্থায়ী মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’
‘মেডিকেল বোর্ডের অন্যতম চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেছেন, খালেদা জিয়া বহুদিন ধরে নানা রোগে আক্রান্ত। তার লিভারের সমস্যার কথা বিবেচনা নিয়েই ১৩ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করনো হয়। ওইদিন রাতে খুবই রক্তবমি হয়। তাঁর খাদ্যনালীতে ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাঁকে জীবনরক্ষার উদ্দেশ্যে দ্রুত রক্ত ও প্লাজমা ফ্লুইড দেওয়া হয়। একপর্যায়ে বিষয়টি খুবই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দ্রুত এন্ডোস্কপির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু হয় এবং ছয়টি জায়গায় ব্যান্ড লাইগেশনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক রক্তক্ষরণ বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সেই মুহূর্তে তিনি শক-এ চলে গিয়েছিলেন এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে সেই যাত্রায় জীবন রক্ষা পায়। খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস ও হার্ট ফেইলিউরের রোগী। উনার হার্ট ফেইলিউর এমন পর্যায়ে থাকে যেকোনো ডিকম্পেসেশন হলে হার্ট ফেইলিউর হয়। তবুও দীর্ঘ সময় প্রচেষ্টার ফলে পরিপাকতন্ত্রের রক্তক্ষরণ বন্ধ করা সম্ভব হয়।’
ড্যাবের মহাসচিব বলেন, ‘তবে এসব রোগীর পুনরায় রক্তক্ষরণ খুবই স্বাভাবিক (প্রথম সপ্তাহে শতকরা ৫০ ভাগ এবং ছয় সপ্তাহের মধ্যে যা শতকরা ৭০ ভাগ)। পরবর্তীতে ফের রক্তক্ষরণে খালেদা জিয়ার মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। কারণ রক্তক্ষরণ বন্ধের জন্য আমাদের দেশে যে প্রযুক্তি আছে তা এরই মধ্যে খালেদা জিয়ার ব্যাপারে প্রয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া যেসব আধুনিক পদ্ধতি যেমন TIPS প্রযুক্তি আমাদের দেশে নেই, এমনকি উপমহাদেশের বা এশিয়ার অন্য কোনো দেশেও নেই৷ এই প্রযুক্তিটি শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির সুনির্দিষ্ট কয়েকটি হাসপাতালে রয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে উল্লিখিত দেশের উন্নত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে নতুবা পরবর্তীতে স্থানান্তর করাও মুশকিল হয়ে যাবে।’
ডা. সালাম আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক বিরোধী দলীয় নেত্রী ও সাবেক সেনাপ্রধান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তম-এর স্ত্রী। গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনে দীর্ঘ নয় বছর স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার পুনঃপ্রবর্তন করেন। তাঁর পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখে। অথচ আমরা বেদনাহত হৃদয়ে লক্ষ্য করছি, একজন নাগরিকের পছন্দমতো চিকিৎসা নেওয়ার মৌলিক অধিকার থেকে তিনি ক্রমাগতভাবে বঞ্চিত। মিথ্যা সাজানো মামলায় রায়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই চিকিৎসা বঞ্চিত হওয়ায় আজ ভয়াবহ শারীরিক জটিলতায় উপনীত।’
‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশেই সম্ভব’- বিএমএ নেতাদের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ড্যাবের সভাপতি ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সমাজকে বিভক্ত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ এবং বিপক্ষ। খালেদা জিয়া তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। আজ তিনি গুরুতর অসুস্থ। তাঁর মেডিকেল বোর্ড বলেছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশে তো নয় বরং উপমহাদেশেও সম্ভব না। সুতরাং বিএমএর নেতারা যা বলেছেন তা সরকারেরই বক্তব্য। তারা সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।’
ড্যাবের সভাপতি আরও বলেন, ‘আশা ছিল, খালেদা জিয়ার এই দুঃসময়ে তারা সঠিক কথা বলবেন এবং মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করবেন।’
এ সময় বিদেশে থেকে চিকিৎসক আনার প্রসঙ্গে ডা. হারুন বলেন, ‘বাংলাদেশে হৃদরোগের সব চিকিৎসা হয়। তারপরও আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হলে তাঁকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করানো হয়েছে। বিদেশ থেকে একজন চিকিৎসক আনলেই হবে না। এটা টিমওয়ার্ক। সুতরাং এই কথার মানে হচ্ছে সময়ক্ষেপণ করা।’