আটঘরিয়ায় ব্র্যাকের ধান বীজে আশানুরূপ ফলন মেলেনি, দিশেহারা কৃষকেরা
ব্র্যাকের উচ্চ ফলনশীল ধান বীজ কিনে তাতে আশানুরূপ ফলন না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার শতাধিক কৃষক। নিম্নমানের বীজের কারণে বিঘাপ্রতি ফলন হচ্ছে মাত্র চার থেকে পাঁচ মণ। এ অবস্থায় উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা।
গত মঙ্গলবার ব্র্যাকের স্থানীয় কার্যালয় ঘেরাও করেন ভুক্তভোগী কৃষকেরা। তবে, ব্র্যাকের স্থানীয় কার্যালয়ের কর্মকতারা এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
অন্যদিকে, কৃষি বিভাগ বলছে—চাষিদের লোকসান পুষিয়ে নিতে কাজ করা হচ্ছে।
আটঘরিয়ার সঞ্জয়পুর গ্রামের কৃষক জমসেদ আলী বলেন, ‘ব্র্যাকের উচ্চ ফলনশীল জাতের হাইব্রিড-১০ ধানের বীজ কিনে এক বিঘা জমিতে চাষ করেছিলাম। কিন্তু, ধানের ফলন হয়েছে বিঘাপ্রতি পাঁচ মণ। ব্র্যাক থেকে দুই কেজি ধান বীজ কিনে তাদের কথায় চাষ করেছিলাম। খরচ গেছে ১০ হাজার টাকা। পাঁচ হাজার টাকা সারের দোকানে বাকি আছে। ধান হয়েছে পাঁচ মণ। এখন আমি খাব নাকি দোকানের বাকি শোধ করব।’
সঞ্জয়পুর ক্লাব পাড়ার দিলবার হোসেন বলেন, ‘ব্র্যাক থেকে বলেছিল—প্রতি বিঘায় ২৫ থেকে ৩০ মণ ধান হবে। এক কেজি ধান বীজ কিনে রোপণ করেছি, ধান হয়েছে বিঘায় তিন থেকে চার মণ। এখন খাব, নাকি দোকানের বাকি দেব?’
আরেক কৃষক ইসমাঈল আজম বলেন, ‘আমাদের দেশি ধান থেকে ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ রোগবালাই বেশি এ বীজে। আর, আগাছার কারণে ধানে চিটা হয়ে গেছে। এখন আমরা কার কাছে যাব?’
আটঘরিয়ার সিফাতের ঢালু এলাকার রওশন আলী বলেন, ‘আমরা কৃষি কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছি, তাঁরাও কোনো কিছু বলেননি। এখন ব্র্যাক যা ক্ষতি করেছে, তার প্রতিকার চাই।’
এ ঘটনায় কৃষকেরা ব্র্যাক অফিস ঘিরে বিক্ষোভও করেছেন।
তবে, এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি ব্র্যাক আটঘরিয়া শাখার (খামার) ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ।
আটঘরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব আল মারুফ বলেন, ‘ব্র্যাক ধান চাষ করে কৃষকেরা আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। মাঠ পরিদর্শন করা হয়েছে। মাঠে গিয়ে দেখা যায়, জমিতে বিজাত ধান এবং ধানে ব্যাপক চিটা। চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তাদের উৎপাদন খরচই উঠবে না। তবে, ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে সময় চেয়েছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব আল মারুফ আরও বলেন, ‘কৃষকদের সঙ্গে আমরা সব সময়ই আছি। কীভাবে তাঁদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমি অবসরে যাচ্ছি, তাই কাগজপত্র তৈরিতে ব্যস্ত আছি।’
পাবনা জেলায় এবার ৫৫ হাজার ৯৮৮ হেক্টর জমিতে রোপা-আমন ধানের চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ২১৪ টন।