আ.লীগের জাতীয় সম্মেলন : আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু সাধারণ সম্পাদক পদ
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন আগামী শনিবার। দলটির বিভিন্ন পদে কাদের দেখা যাবে, তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। যদিও সভাপতি পদে কোনো পরিবর্তন ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই থাকছেন বলে জানা গেছে। তবে, বরাবরের মতো এবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু সাধারণ সম্পাদক পদ ঘিরে। সেই পদে বর্তমানে আছেন ওবায়দুল কাদের। সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের এবার হ্যাটট্রিক করবেন না কি নতুন কেউ আসছেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
আগামী শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য নেওয়া হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। আর বিকেলে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে (ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে হবে) নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। অবশ্য বরাবরই আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নির্বাচন হয় আলোচনা-সমঝোতার মাধ্যমে। ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের উদাহরণ খুব কম। এবারও আলোচনার মাধ্যমেই নেতৃত্ব নির্বাচন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির স্তর তিনটি। প্রথমত সভাপতিমণ্ডলী, দ্বিতীয়ত সম্পাদকমণ্ডলী, তৃতীয়ত নির্বাহী সদস্যরা। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য ৮১। এর মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সভাপতিমণ্ডলী ১৯ সদস্যের। সভাপতিমণ্ডলীর জ্যেষ্ঠ চারজন সদস্য মারা গেছেন। তাঁদের শূন্য স্থানে নতুনদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলে আগামী সম্মেলনে দু-একটা সংযোজন-বিয়োজন আসতে পারে।
সম্পাদকমণ্ডলীর প্রধান হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক। তাঁকে ঘিরেই মূলত দলের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সভাপতির পর সাধারণ সম্পাদকই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এরপর দলের নেতাদের আকর্ষণ যুগ্ম সম্পাদকের চারটি এবং আটটি সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ নিয়ে।
আওয়ামী লীগের একাধিকসূত্র ও বিভিন্ন সভা-সেমিনারে নেতৃবৃন্দকে বলতে শোনা গেছে, দলে কিংবা দলের বাইরে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। সে হিসেবে ধরেই নেওয়া যায় দলের সভাপতি হচ্ছেন তিনিই। তবে, অন্যপদ বা পদবিতে রয়েছে তদবির। রাজনৈতিক মাঠে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে বিভিন্ন সংকটে সরব উপস্থিতিও দেখা গেছে নেতৃবৃন্দের। তারা এখন দলীয় প্রধানের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছেন। যদিও এখনও কেউ প্রকাশ্যে এ পদ দাবি করেননি।
এদিকে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নতুন করে এই পদে নির্বাচিত হলে তা হবে একই পদে তাঁর হ্যাটট্রিক। টানা দুই মেয়াদে দলটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। আবারও তিনি থাকতে পারবেন, না কি পদটিতে পরিবর্তন আসছে—এ আলোচনা এখন আওয়ামী লীগের ভেতরে। তবে আওয়ামী লীগে টানা তিন মেয়াদে কারও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের রেকর্ড নেই।
এর বাইরে সাধারণ সম্পাদকের পদের দাবিদার হিসেবে আরও বেশ কয়েকজন নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ও জাহাঙ্গীর কবির নানকের নাম বেশি আলোচিত হচ্ছে। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফর উল্যাহও সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহী, এমন কথা শোনা গেছে। আবদুর রহমানকেও কেউ কেউ এই পদের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী মনে করছেন।
অন্যদিকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের প্রায় সবাই সাধারণ সম্পাদকের দাবিদার। এর মধ্যে মাহবুব উল আলম হানিফ ২০০৮ সাল থেকে দলের ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাঁকে সাধারণ সম্পাদক করা হতে পারে—এই জন্যই দীর্ঘদিন একই পদে রেখে দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর অনুসারী–শুভাকাঙ্ক্ষীরা মনে করেন।
এদিকে, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির নামও আলোচনায় আছে। তিনি দলের সভাপতিমণ্ডলীতে যুক্ত হতে পারেন, এমন কথাও বলছেন কেউ কেউ। এ ছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও সাধারণ সম্পাদক পদের দাবিদার।
আগামী শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে কাউন্সিলর ও প্রতিনিধি হিসেবে সারা দেশ থেকে ২১ হাজার নেতা যোগ দেবেন। সম্মেলনস্থলের বাইরে হাজারও উৎসুক নেতাকর্মীর উপস্থিতি তো থাকবেই। সব মিলিয়ে সম্মেলনের জন্য ৫০ হাজার মানুষের দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।