এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ চার ভাই ৭ দিনের রিমান্ডে
পিরোজপুরে এহসান গ্রুপের বিরুদ্ধে করা প্রায় এক কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের মামলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মুফতি রাগীব আহসানসহ চার ভাইয়ের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহি উদ্দিন আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে এ আদেশ দেন।
সরকারি কৌঁসুলি খান মো. আলাউদ্দিন ও বাদী সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসান পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে ইয়াইয়া হাওলাদার নামের এক পাওনাদারকে ফোন করে অফিসে ডেকে আনেন। পরে তাঁকে অফিসে নিয়ে মারধর করা হয়। এরপর ওই ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন বুধবার অন্য পাওনাদার ও ইয়াহিয়ার সহকর্মীরা পিরোজপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। এ ছাড়া মো. হারুনর রশিদ নামের আরেক পাওনাদার বাদী হয়ে পিরোজপুর সদর থানায় ৯১ লাখ ১৫ হাজার ৯৩৩ টাকা আত্মসাতের একটি মামলা করেন।
এদিকে, মামলা ও সংবাদ সম্মেলনের পরই প্রশাসন নড়ে বসে। পরে বৃহস্পতিবার রাগীবের দুই ভাই খাইরুল ইসলাম ও মাহমুদুল হাসানকে পৌর এলাকার খলিশাখালীর গ্রামের বাড়ি থেকে আটক করে পিরোজপুর পুলিশ। অন্যদিকে, র্যাব রাগীব ও তাঁর আরেক ভাই আবুল বাসারকে ঢাকা থেকে আটক করলেও শামীম আহসানকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
আজ সোমবার তাঁদের পিরোজপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি-১ আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আসামি পক্ষে জামিন আবেদন করা হলে তা নাকচ করা হয়। অপর দিকে, তদন্তকারী কর্মকর্তা পিরোজপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুল ইসলাম চার আসামির সাত দিনের রিমান্ড চাইলে বিচারক মহি উদ্দিন তা মঞ্জুর করেন।
এর আগে র্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছিলেন, গ্রেপ্তারকৃত রাগীব আহসান র্যাবকে জানান, তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির অপব্যবহার করে সবাইকে শরিয়াহসম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগের জন্য আকৃষ্ট করেন। প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার আত্মসাতের ব্যাপারে অভিযোগ এসেছে। কিন্তু উনি জিজ্ঞাসাবাদের বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে ১১০ কোটি টাকা নেওয়ার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। এবং এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
জানা যায়, দুই ভাই মিলে রিয়েল এস্টেট কোম্পানি খুলে গ্রাহকদের কাছ থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। সেই টাকা দিয়ে কোম্পানির নামে জমি না কিনে নিজেদের ও আত্মীয়-স্বজনের নামে জমি নিবন্ধন করেন। সেসব জমির ৯০ শতাংশ গোপনে বিক্রি করে টাকা আত্মসাত করে প্রতারকেরা। লক্ষাধিক গ্রাহক প্রতারণার শিকার হওয়ার পর তারা প্রতিকারের আশায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে।
র্যাব জানায়, রাগীব আহসান ১৯৮৬ সালে পিরোজপুরের একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস এবং ১৯৯৯-২০০০ পর্যন্ত খুলনার একটি মাদ্রাসা থেকে মুফতি সম্পন্ন করে পিরোজপুরে একটি মাদ্রাসায় চাকরি নেন।
২০০৬-২০০৭ সালে রাগীব আহসান ইমামতির পাশাপাশি ‘এহসান এস মাল্টিপারপাস’ নামের একটি এমএলএম কোম্পানিতে ৯০০ টাকা বেতনের চাকরি করতেন। এই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সময় তিনি এমএলএম কোম্পানির আদ্যোপান্ত রপ্ত করেন। পরবর্তী সময়ে নিজে ২০০৮ সালে ‘এহসান রিয়েল এস্টেট’ নামে একটি এমএলএম কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।
এখন এহসান গ্রুপের অধীনে ১৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলো হলো—এহসান এহসান গ্রুপ বাংলাদেশ, এহসান পিরোজপুর বাংলাদেশ (পাবলিক) লিমিটেড, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড, নুর-ই মদিনা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট একাডেমি, জামিয়া আরাবিয়া নুরজাহান মহিলা মাদ্রাসা, হোটেল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল (আবাসিক), আল্লাহর দান বস্ত্রালয়, পিরোজপুর বস্ত্রালয়-১ ও ২, এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, মেসার্স মক্কা এন্টারপ্রাইজ, এহসান মাইক অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম, এহসান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, ইসলাম নিবাস প্রজেক্ট, এহসান পিরোজপুর হাসপাতাল, এহসান পিরোজপুর গবেষণাগার এবং এহসান পিরোজপুর বৃদ্ধাশ্রম।