সুদবিহীন বিনিয়োগের লোভ দেখিয়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা লোপাট
এমএলএম কোম্পানি খুলে অতি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জড়িত এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান মুফতি রাগীব হাসান ও তার ভাই আবুল বাশারকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পিরোজপুর সদর উপজেলা খলিশাখালী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাদের ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। রাগীব ও বাশারের প্রতারণার কৌশল ও গ্রাহকদের নিঃস্ব করে দেওয়ার বিষয় জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব।
র্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তারকৃত রাগিব আহসান র্যাবকে জানায় তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির অপব্যবহার করে সবাইকে শরিয়াহসম্মত সুদবিহীন বিনিয়গের জন্য আকৃষ্ট করেন। প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার আত্মসাতের ব্যাপার অভিযোগ এসেছে। কিন্তু উনি জিজ্ঞাসাবাদের বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে ১১০ কোটি টাকা নেওয়ার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। এবং এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
জানা যায়, দুই ভাই মিলে রিয়েল এস্টেট কোম্পানি খুলে গ্রাহকদের কাছ থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। সেই টাকা দিয়ে কোম্পানির নামে জমি না কিনে নিজেদের ও আত্মীয়-স্বজনের নামে জমি নিবন্ধন করেন। সেসব জমির ৯০ শতাংশ গোপনে বিক্রি করে টাকা আত্মসাত করে প্রতারকরা। লক্ষাধিক গ্রাহক প্রতারণার শিকার হওয়ার পর তারা প্রতিকারের আশায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে।
র্যাব জানায়, রাগীব আহসান ১৯৮৬ সালে পিরোজপুরের একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস এবং ১৯৯৯-২০০০ পর্যন্ত খুলনার একটি মাদ্রাসা থেকে মুফতি সম্পন্ন করে পিরোজপুরে একটি মাদ্রাসায় চাকরি নেন।
২০০৬-২০০৭ সালে রাগীব আহসান ইমামতির পাশাপাশি ‘এহসান এস মাল্টিপারপাস’ নামে একটি এমএলএম কোম্পানিতে ৯০০ টাকা বেতনের চাকরি করতেন। এই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সময় তিনি এমএলএম কোম্পানির আদ্যোপান্ত রপ্ত করেন। পরবর্তী সময়ে নিজে ২০০৮ সালে ‘এহসান রিয়েল এস্টেট’ নামে একটি এমএলএম কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।
এখন এহসান গ্রুপের অধীনে ১৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলো হলো এহসান এহসান গ্রুপ বাংলাদেশ, এহসান পিরোজপুর বাংলাদেশ (পাবলিক) লিমিটেড, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড, নুর-ই মদিনা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট একাডেমি, জামিয়া আরাবিয়া নুরজাহান মহিলা মাদ্রাসা, হোটেল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল (আবাসিক), আল্লাহর দান বস্ত্রালয়, পিরোজপুর বস্ত্রালয়-১ ও ২, এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, মেসার্স মক্কা এন্টারপ্রাইজ, এহসান মাইক অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম, এহসান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, ইসলাম নিবাস প্রজেক্ট, এহসান পিরোজপুর হাসপাতাল, এহসান পিরোজপুর গবেষণাগার এবং এহসান পিরোজপুর বৃদ্ধাশ্রম।