কৃষিতে ড্রাম সিডার পদ্ধতি টানছে কৃষকদের
কৃষি যান্ত্রিকীকরণে আধুনিক বীজ বপন পদ্ধতির নাম ড্রাম সিডার। বীজতলার পরিবর্তে ড্রাম সিডারের মাধ্যমে সরাসরি ক্ষেতে ধান বপনে লাভবান হয়েছেন জেলার অনেক কৃষক। তাই জেলার অন্যান্য কৃষকদের মধ্যেও ড্রাম সিডার পদ্ধতিতে ধান চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
ড্রাম সিডারের দুইপাশে প্লাস্টিকের দুটি চাকার ভেতর একটি লোহার দণ্ডের মধ্যে সারিবদ্ধভাবে নির্দিষ্ট দূরত্বে ছোট আকৃতির ছয়টি প্লাস্টিকের ড্রাম থাকে। প্রতিটি ড্রামে থাকে নির্দিষ্ট মাপের নির্দিষ্ট সংখ্যক ছিদ্র। প্লাস্টিকের চাকার সঙ্গে লাগানো থাকে একটি হাতল, যা ধরে একজন কৃষক সহজেই যন্ত্রটি টানতে পারেন।
তিন থেকে চার হাজার টাকা হলেই এই যন্ত্রটি স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহারে বানানো যায়। এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করতে হয় না তাই সময়, শ্রম, ব্যয় সব কম লাগে। সনাতন পদ্ধতির চেয়ে বেশি ফসল পাওয়ায় কুমিল্লার কৃষকদের মধ্যে ড্রাম সিডার পদ্ধতিতে ধান চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
কৃষক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ড্রাম সিডারের মাধ্যমে একজন কৃষক দিনে দুই একর জমিতে ধান চাষ করতে পারেন। কিন্তু সনাতন পদ্ধতিতে এই ধানের চারা রোপণ করতে অন্তত ২০ জন শ্রমিকের প্রয়োজন। ড্রাম সিডারে ধান চাষ করায় উৎপাদন খরচ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কম লাগছে। তাই ধান চাষে ড্রাম সিডার ব্যবহার লাভজনক দেখে কৃষকেরা এর প্রতি ঝুঁকছেন। যেকোনো ধান চাষে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ ড্রাম সিডারের ব্যবহার।’
কৃষক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বীজতলায় চারা উৎপাদন করে, পরে ধান ক্ষেতে রোপণের চেয়ে ড্রাম সিডারের মাধ্যমে সরাসরি ধান ক্ষেতে বীজ বপন করায় শ্রমিক, সময় ও উৎপাদন ব্যয় বহুলাংশে কম লাগে, পক্ষান্তরে ফলন ভালো পাওয়া যায়। এ প্রযুক্তিতে ধান ক্ষেতের যত্ন করা সহজ হয়, ফলে আগের চেয়ে ফলন ভালো পাওয়া যায়। খরচও কয়েক গুণ কম লাগে। তবে, কয়েক বার সেচ দিতে হয়। তা ছাড়া জমি ও পরিবেশ ভেদে আউশ, আমন ও বোরো তিন মৌসুমেই এ প্রযুক্তিতে ধান চাষ করা যায়। তবে, আউশ ও বোরো ধান চাষে এটি বেশি উপযোগী।’
কামরুল আরও বলেন, ‘সনাতন পদ্ধতিতে ধান রোপণের জন্য জমি যেভাবে তৈরি করতে হয়, সেভাবেই জমি তৈরি করে ড্রাম সিডার দিয়ে ধান বপণ করতে হয়। তবে, জমিতে যেন পানি না জমে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘তারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে ড্রাম সিডারের মাধ্যমে ধান চাষে কৃষককে পরামর্শ দিয়েছেন। ড্রাম সিডারে সারি ধরে গাছ হওয়ায় আগাছা দমন সহজ হয়। আগাছানাশক ব্যবহার করলে চার থেকে পাঁচ দিন ক্ষেতে ছিপছিপে পানি থাকতে হবে। এলসিসি ভিত্তিক ইউরিয়া প্রয়োগ করতে পারলে এই পদ্ধতিতে ধান চাষে সুফল বেশি পাওয়া যায়। ধানগাছ একটু বড় হলে রোপা পদ্ধতির মতোই পানি সেচ দিতে হয়। সঠিক পরিচর্যায় ড্রাম সিডারে বোনা ধানের ফলন রোপা ধানের তুলনায় শতকরা ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেশি হতে পারে। এ পদ্ধতিতে চাষ করলে রোপা পদ্ধতির চেয়ে ১২ থেকে ১৫ দিন আগে ধান ঘরে তোলা যায়। এ ছাড়া ড্রাম সিডার যন্ত্রটি হালকা হওয়ায় সহজে বহণ করা যায়। ফলে সবাই এটি ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।’