পদ্মার জেগে ওঠা চরে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা
রাজশাহী নগরীর অদূরে পদ্মা নদীর পাড় ঘেঁষা প্রায় ২৫০ বিঘা চরের জমি কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। কাশিয়াডাঙ্গা থানার নবগঙ্গা এলাকার এই জেগে ওঠা চরে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ, শসা ও সাম্মাম চাষ শুরু হয়েছে। রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য বাবর আলী এই ব্যাপক চাষাবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তরমুজের পাশাপাশি জমির বাকি অংশে পেঁয়াজসহ আরও কয়েকটি কৃষিপণ্য আবাদ করার পরিকল্পনা করেছেন তিনি।
আজ শনিবার (২২ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নবগঙ্গা এলাকার নদীর ওপারে বিশাল এই চরে প্রায় ২৫০ বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন বাবর আলী। প্রজেক্টের অংশ হিসেবে মাটি প্রস্তুতের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। খুলনা থেকে আসা অভিজ্ঞ কৃষকদের একটি দল নির্দিষ্ট দূরত্বে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপণ করছেন। কেউ দিচ্ছেন পানি, আর কেউ দিচ্ছেন গোবর সার।
কৃষি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তরমুজ চাষের উপযুক্ত সময় জানুয়ারি থেকে এপ্রিল। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিককে সবচেয়ে উপযোগী ধরা হয়। কিন্তু বাবর আলী এবার আগাম জাতের তরমুজ চাষ শুরু করেছেন। তার লক্ষ্য- আসন্ন রমজানে রাজশাহীর মানুষকে কম দামে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রসালো তরমুজ সরবরাহ করা। এই চাষের জন্য বীজ আনা হয়েছে ভারত থেকে।
বাবর আলী বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে তরমুজ চাষের এই উদ্যোগটি কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার সূচনা করবে। ভালো ফলন হলে অনেক কৃষক এতে উদ্বুদ্ধ হবেন। এতে রাজশাহীর অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমরা চাই স্থানীয় মানুষ যেন দক্ষিণাঞ্চল থেকে উচ্চমূল্যে তরমুজ আমদানি না করে এখানকার উৎপাদিত তরমুজই পায়।
তিনি আরও বলেন, আমার প্রোজেক্টটা অনেক বড়। স্থানীয়দের সহায়তা নিয়ে জমি লিজ নিয়েছি। পুরো ২৫০ বিঘার মধ্যে ২০০ বিঘায় তরমুজ চাষ হবে। বাকি অংশে শসা, পেঁয়াজ এবং মরুভূমির ফল সাম্মাম চাষ করা হবে। তবে উপজেলা কৃষি বিভাগ এখনও কোনো সহযোগিতা করেনি। সহযোগিতা পেলে আরও ভালোভাবে কাজ করা যেত। ফলন ভালো হলে আগামী বছর কয়েক হাজার বিঘায় তরমুজ চাষের পরিকল্পনা আছে।
বাবর আলী জানান, তার এই প্রোজেক্টে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বর্তমানে খুলনা থেকে আসা প্রায় ৫০ জন শ্রমিক মাঠে কাজ করছেন। ভবিষ্যতে স্থানীয় শ্রমিকদেরও কাজে যুক্ত করা হবে। এখন বীজ বপণ চলছে, এরপর শুরু হবে পরিচর্যা। তিনি আশা প্রকাশ করেন, শীতের মধ্যেই তরমুজ বাজারে পাওয়া যাবে।
দক্ষিণাঞ্চলের ভোলা, বরিশাল ও পটুয়াখালী তরমুজ উৎপাদনে অগ্রণী হলেও উত্তরাঞ্চলে এ চাষ তুলনামূলক কম। তবে রাজশাহীর পদ্মার চরে এ ধরনের উদ্যোগ কৃষিতে নতুন দিগন্ত তৈরি করবে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
পবা উপজেলার সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, সাধারণ হিসাবে এক বিঘায় ৫০ থেকে ৬০ মণ তরমুজ উৎপাদন সম্ভব। সে হিসেবে ২৫০ বিঘায় সাড়ে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার মণ তরমুজ উৎপাদন হতে পারে। ফলন নির্ভর করে জাত, মাটির উর্বরতা ও সঠিক পরিচর্যার ওপর। মাটির পিএইচ মান ৬.০ থেকে ৭.৫ হলে তরমুজ ভালো জন্মায়, বিশেষ করে ৭ হলে সবচেয়ে উপযোগী।

আবু সাঈদ রনি, রাজশাহী (সদর-গোদাগাড়ী-পবা)