গফরগাঁওয়ের তিনজনের আমৃত্যু, পাঁচজনের ২০ বছর সাজা
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের তিনজনের আমৃত্যু, পাঁচজনের ২০ বছর করে কারাদণ্ড ও একজনকে খালাস দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া তিন আসামি হলেন ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানাধীন নিগুয়ারী ইউনিয়নের সাধুয়া গ্রামের মো. সামসুজ্জামান ওরফে আবুল কালাম (৬৫), এএফএম ফায়জুল্লাহ ও মো. আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল। এর মধ্যে এএফএম ফায়জুল্লাহ ও আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল পলাতক আছেন।
২০ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া পাঁচ আসামি হলেন সাধুয়া গ্রামের মো. খলিলুর রহমান মীর (৬২), মো. আব্দুল্লাহ (৬২), মো. রইছ উদ্দিন আজাদী ওরফে আক্কেল আলী (৭৪), সিরাজুল ইসলাম ও মো. আলীম উদ্দিন খান। এর মধ্যে সিরাজুল ইসলাম ও মো. আলীম উদ্দিন খান পলাতক আছেন।
খালাস পাওয়া আসামি হলেন আব্দুল লতিফ। তিনি আজ স্বেচ্ছায় ট্রাইব্যুনালে হাজির হন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আমীর হোসেন ও আবু আহমেদ জমাদার।
এর আগে রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ও শুনানি শেষে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়েছিল।
এ মামলায় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন, সাহিদুর রহমান, জাহিদ ইমাম, তাপস কান্তি বল ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিপক্ষে ছিলেন আব্দুস শুকুর খান ও আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
এ বিষয়ে প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন সাংবাদিকদের বলেন, এ মামলায় ১১ জন আসামি ছিলেন। বিচার চলাকালীন দুজন মারা যান। ২০১৮ সালের ৪ মার্চ অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় জড়িত থাকার চারটি অভিযোগে ময়মনসিংহের ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে ছিলেন—ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানাধীন নিগুয়ারী ইউনিয়নের সাধুয়া গ্রামের মো. খলিলুর রহমান মীর (৬২), মো. সামসুজ্জামান ওরফে আবুল কালাম (৬৫), একই গ্রামের মো. আব্দুল্লাহ (৬২) ও মো. রইছ উদ্দিন আজাদী ওরফে আক্কেল আলী (৭৪)।
গ্রেপ্তারের পর বিচারচলাকালীন মো. আব্দুল মালেক আকন্দ ওরফে আবুল হোসেন ওরফে আবুল মেম্বার (৬৮) মারা যান। আর পলাতক অবস্থায় মারা যান নুরুল আমীন শাজাহান।
আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ চারটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে রয়েছে চারজনকে হত্যা, নয়জনকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গফরগাঁওয়ের নিগুয়ারী ইউনিয়নের সাধুয়া গ্রাম ও টাঙ্গাব ইউনিয়নের রৌহা গ্রাম এলাকায় আসামিরা অপরাধ করেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে তদন্ত শুরু হয়।
তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের মত অপরাধের তিনটি অভিযোগ এনে ২০১৮ সালের ৪ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
অভিযোগ গঠনের পর ওই বছরের ১০ মে থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শুরু হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) মোট ১৮ জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দি পেশ করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক শুরু হয়ে শেষ হয় ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি।