গ্রামীণ টেলিকমের এমডিসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব
শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিং (অর্থপাচার) সংক্রান্ত অপরাধ অনুসন্ধানে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান টিমের প্রধান ও উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের সই করা তলবি নোটিশ সংশ্লিষ্টদের ঠিকানায় পাঠানো হয়। আগামী ২৫ আগস্ট তাদের দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে।
নোটিশে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল ইসলাম, আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী, আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ ও গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলামকে তলব করা হয়েছে।
নোটিশে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল ইসলাম, আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী, আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ ও গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলামকে তলব করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৬ আগস্ট অভিযোগ সংক্রান্ত ১১ ধরনের নথিপত্র দুদকে আসে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি অনুসন্ধানে নথিপত্র চাওয়া হয় গত ১ আগস্ট।
গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো নোটিশে গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির ১৯৯৭ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পরিচালনা পর্ষদের বিস্তারিত তথ্য, গ্রামীণ টেলিকম পরিচালনার আইন ও বিধিসমূহ, গ্রামীণ টেলিকমের লভ্যাংশ বিতরণের নীতিমালা সংক্রান্ত নথিপত্র তলব করা হয়।
পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্যের এ কোম্পানি থেকে ঋণ পাওয়ার বৈধ অধিকার রয়েছে কি না বা এখন পর্যন্ত পর্ষদের কোন কোন সদস্য কত টাকা ঋণ নিয়েছেন এবং ঋণের অর্থ কীভাবে উত্তোলন করেছেন— সে সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি; গ্রামীণফোন কোম্পানিতে গ্রামীণ টেলিকমের কত শেয়ার রয়েছে এবং কার নামে শেয়ার রয়েছে— এসব তথ্যও চাওয়া হয়।
এ ছাড়া শেয়ারের বিপরীতে ১৯৯৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি কত টাকা লভ্যাংশ পেয়েছে, উক্ত লভ্যাংশের অর্থ কোন কোন খাতে কীভাবে ব্যয় হয়েছে— এর বছরভিত্তিক তথ্যাদির ছকসহ রেকর্ডপত্র, ১৯৯৭-২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক কতগুলো বোর্ড সভা হয়েছে, বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতি সম্মানি কত, এতদসংক্রান্ত সমুদয় বোর্ড সভায় রেজ্যুলেশনের সত্যায়িত কপি, ২০০৬-২০১০ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পরিমাণ কত এবং উক্ত লভ্যাংশ হতে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য প্রযোজ্য শতাংশ কত— এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের ফটোকপি এবং অর্থ কাকে-কীভাবে, কোন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে— তার বিবরণ চাওয়া হয়।
অভিযোগগুলো হলো- অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ লোপাট, শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধকালে অবৈধভাবে অ্যাডভোকেট ফি ও অন্যান্য ফির নামে ৬ শতাংশ অর্থ কর্তন, শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দ করা সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ এবং কোম্পানি থেকে দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করে।
১৯৯৭-২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বাবদ শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনার পরিমাণ কত, তা থেকে কত প্রকার ফি কীভাবে কর্তন করা হয়েছে— সেই সংক্রান্ত তথ্যাদি বা রেকর্ডপত্রের ফটোকপি, ১৯৯৭-২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ কত, তা বিতরণ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের কপি বা তথ্যাদি, কোম্পানির কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দকৃত উক্ত অর্থ স্থানান্তর করা না হলে তা কোথায়, কীভাবে, কোন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে খরচ করা হয়েছে ইত্যাদির নথিপত্র, কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে কাউকে ঋণ ও অনুদান বা অন্য কোনোভাবে দেওয়া হয়েছে কি না, হলে তার বিস্তারিত তথ্য ছক; ১৯৯৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ থেকে দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা ড. ইউনূস ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর সংক্রান্ত নথিপত্র, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি থেকে উক্ত অর্থ কোথায়, কীভাবে, কোন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির হিসাবে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রয়েছে কি না— এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ও নথিপত্র তলব করা হয়।
পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে মো. মাহবুব হোসেন বলেন, অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগের পরে আপনারাই জানতে পারবেন এর সঙ্গে কে কে সম্পৃক্ত। এর আগে অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের টিম গঠন করে দুদক। টিমে দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। টিমের অপর সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তার ও নূরে আলম সিদ্দিকী।
গত ২৮ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করার কথা জানান সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে দুদক সচিব বলেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ-সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠান। ওই প্রতিবেদন কমিশন পর্যালোচনা করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।
অভিযোগগুলো হলো- অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ লোপাট, শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধকালে অবৈধভাবে অ্যাডভোকেট ফি ও অন্যান্য ফির নামে ৬ শতাংশ অর্থ কর্তন, শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দ করা সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ এবং কোম্পানি থেকে দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ।
অভিযোগ অনুসন্ধানকালে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা অবশ্যই গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবেন। অনুসন্ধানের সময় তিনি বিধিবিধান অনুসারে ব্যবস্থা নেবেন পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে মো. মাহবুব হোসেন বলেন, অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগের পরে আপনারাই জানতে পারবেন এর সঙ্গে কে কে সম্পৃক্ত।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, অভিযোগ অনুসন্ধানকালে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা অবশ্যই গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবেন। অনুসন্ধানের সময় তিনি বিধিবিধান অনুসারে ব্যবস্থা নেবেন।