গ্রেপ্তার সেই ‘ভয়ংকর প্রতারক’ ফারুক শেখ
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা ফারুক শেখ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় গতকাল শুক্রবার মামলা হওয়ার পরই অভিযান চালিয়ে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাইকেরডাঙ্গা গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ফারুককে আজ লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম। পাটগ্রাম থানার একটি টিম ফারুককে নিয়ে যেতে গোপালগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে—লোভনীয় বেতনে ওমান পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে লালমনিরহাটের ২৪ জনের কাছ থেকে ৩৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ফারুক শেখ। টাকা হাতানোর পর থেকেই তিনি গা ঢাকা দেন। তাঁর ফোন বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকতো। আবার কখনও কখনও ফোন খোলা থাকলেও ভুক্তভোগীরা ফোন দিলে ফারুক বিভিন্নভাবে তাঁদের হুমকি-ধামকি দেন।
এ ঘটনায় প্রতারণার শিকার হয়েছেন এমন দাবি করে কয়েকজন গোপালগঞ্জ সদর থানায় গিয়ে ফারুকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর আগেও প্রতারণায় দায়ে ফারুকের বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা হয়েছে।
ফারুক গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সুকতাইল ইউনিয়নের পাইকেরডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার হাসান আলী, আরিফুজ্জামান ও মেহেদী মিয়ার অভিযোগ, ‘প্রতারক ফারুক শেখ প্রতারণার ফাঁদ পেতে গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে পাটগ্রামের জোংড়া ইউনিয়নে আসেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুনের মাধ্যমে তাঁর সহযোগী মুকুল মিয়াকে নিয়ে প্রতারণার কাজ শুরু করেন তিনি। তখন তিনি নিজেকে ওমান প্রবাসী পরিচয় দেন। কয়েকটি ভিসা দেখিয়ে ওমানে কম টাকায় কয়েকজন লোক পাঠাবেন বলে প্রস্তাব দেন। বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য ফারুক তাঁর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে আসার জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানান। তাঁর আমন্ত্রণে আমরা অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে তাঁর বাড়িতে বেড়াতে যাই। তাঁর বাড়িতে সুরম্য অট্টালিকা দেখতে পাই। তাঁর বাসায় প্রধানমন্ত্রী, পুলিশের আইজি, ডিআইজি, র্যাবের মহাপরিচালক ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপির সঙ্গে ফারুকের ছবি দেখে আমাদের মন গলে যায়। তাই সরল বিশ্বাসে তাঁর কাছে আমাদের ২৪টি পাসপোর্ট জমা দিই। এর কিছু দিন পর তিনি আমাদের বলেন, তোমাদের ফ্লাইটের তারিখ পড়েছে, টাকা দাও। পরে আমরা কেউ জমি, গরু, গাছ বিক্রি করে, কেউ টাকা সুদে এনে জন প্রতি দেড় লাখ টাকা করে মোট ৩৬ লাখ টাকা তাঁর হাতে তুলে দিই। পরে তিনি আমাদের জাল ভিসা ও ফ্লাইটের ভুয়া টিকেট দেন। আমরা তাঁকে ফোন করলে তিনি আজ-কাল-পরশু করতে থাকেন। তিনি ফোন বন্ধ করে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। কখনও কখনও ফোন খোলা পেলে ফোন দিলেই আমাদের হুমকি-ধামকি দেন। আমরা আমাদের টাকা ও পাসপোর্ট ফেরত পেতে বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জ সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাইকেরডাঙ্গা গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘১৯৮২ সাল থেকে ফারুক বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণার কাজ করে আসছেন। তিনি নিজেই ঘরে বসে ভুয়া ভিসা, মেডিকেল, ইমিগ্রেশন, বিমান টিকেট তৈরি করেন। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর এগুলো দিয়ে তিনি প্রতারণা করেন। আগে তিনি কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইলের মীর্জাপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া করোনার মধ্যে তিনি খুলনার রূপসা উপজেলার কাঁচদিয়া বাজারে আলবণি নামের একটি এনজিও খুলে প্রতারণার মাধ্যমে অন্তত ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এ ছাড়া চলতি ইউপি নির্বাচনে লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন জেলার ইউপি চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নৌকা প্রতীকের ভুয়া মনোনয়নপত্র দিয়েও ফারুক কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিভিন্ন সময় তিনি র্যাব-পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। তখন তিনি নিজেকে কিডনি, হার্টের রোগীসহ জটিল রোগে আক্রান্ত বলে পরিচয় দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে সহানুভূতি পেয়েছেন। এ ছাড়া এ সংক্রান্ত মামলায় কোর্টে বিশ্বের নামকরা হাসপাতালের কাগজপত্র দাখিল করেছেন। সেখানে তিনি নিজেকে জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী দাবি করে জামিন নিয়েছেন। তিনি কখনও ওইসব হাসপাতালে চিকিৎসা নেননি। চিকিৎসার কাগজগুলোও তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজন করেছেন। প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত আয় দিয়ে তিনি সুরম্য ভবন, জমিসহ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। এলাকায় তিনি ভয়ংকর প্রতারক হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।’