ছেলেকে আইসিইউ বেডে দিয়ে মারা গেলেন মা
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে মা-ছেলে দুজনই করোনায় আক্রান্ত ছিল। দুজনের কারও অবস্থা ভালো নয়। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। দুজনেরই আইসিইউ প্রয়োজন। মায়ের শারীরিক অবস্থা আগে থেকে শোচনীয়। বৃদ্ধ মা আইসিইউতেই ছিলেন। এদিকে ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে তারও আইসিইউর সেবা প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালে আর আইসিইউ বেড খালি নেই। এমন পরিস্থিতিতেও বৃদ্ধ মা ছেলের জন্য আইসিইউ ছেড়ে দিলেন। ডাক্তারদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মায়ের আকুতির কারণে ডাক্তাররা মাকে সরিয়ে ছেলেকে আইসিইউতে প্রবেশ করান। কিন্তু বের করার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই শ্বাসকষ্টে মা মারা গেলেন। বর্তমানে ছেলেটি মায়ের ছেড়ে দেওয়া সেই আইসিইউ বেডে চিকিৎসাধীন। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ছেলের অবস্থাও সংকটাপন্ন।
গত মঙ্গলবার বিকেলের দিকে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এরপর গতকাল বুধবার রাতে হাসপাতালের আইসিইউ বেডের ইনচার্জ ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাস গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।
চিকিৎসক জানান, সপ্তাহখানেক আগে নগরের দিদার মার্কেট সিঅ্যান্ডবি কলোনি এলাকার বাসিন্দা কাননপ্রভা পাল নামে ৬৭ বছর বয়সী এক নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। কয়েক দিন পর তাঁর ছেলে শিমুল পালও (৪২) করোনায় আক্রান্ত হয়ে একই হাসপাতালে ভর্তি হন।
এরই মধ্যে মা কাননপ্রভাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছিল। মঙ্গলবার শিমুলের শারীরিক অবস্থারও অবনতি হয়। তাঁরও আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। কিন্তু কোথাও আইসিইউ বেড পাওয়া যাচ্ছিল না।
ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাস বলেন, ‘হাসপাতালের আইসিইউ বেডে শুয়ে এমন খবর শুনে তাঁর মা ইশারা করেন, তাঁকে বাদ দিয়ে যেন ছেলে শিমুলকে আইসিইউ সাপোর্ট দেওয়া হয়। শেষে পরিবারের সবার সম্মতিতে চিকিৎসকরা মাকে বাদ দিয়ে ছেলে শিমুল পালকে আইসিইউ বেডে শিফট করান এবং মাকে আইসোলেশন বেডে নিয়ে যান। এ ঘটনার ঘণ্টাখানেক পরই বৃদ্ধ মা কাননপ্রভার মৃত্যু হয়।’
চিকিৎসক আরও বলেন, ‘সবকিছু জেনেও কিছুই করার নেই। মায়ের অবস্থাও খারাপ ছিল। তার পরও ছেলেকে যদি অন্য কোথাও আইসিইউ সাপোর্ট দেওয়া যেত, তাহলে মাকে আইসোলেশন বেডে নেওয়া লাগত না। বর্তমানে ছেলের অবস্থাও বেশি ভালো না।’
এ সময় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধও জানান চিকিৎসক।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিট প্রধান ডা. আব্দুর রব জানান, গতকাল বুধবার এই হাসপাতালে আরেকটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে বাবা ও ছেলে মারা গেছেন।