জালিয়াতির মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ায় গ্রেপ্তার ১০
ভেরিফিকেশনসহ বিভিন্ন জালিয়াতির মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার রমরমা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত দালালচক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গত সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দিবাগত রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
হাফিজ আক্তারের দাবি, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা নিজেদের বাংলাদেশ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। এ পরিচয়ে তারা বিভিন্ন মানুষকে টাকার বিনিময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করতেন।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন লিটন পাইক, সুজন পাইক, হাসান শেখ ওরফে আকচান, মোহাম্মদ আলী ওরফে মিস্টার, আব্দুল খালেক, আব্দুল্লাহ রনি, সোহেল রানা, মো. সোহাগ, মো. নুরনবী ও মো. হুমায়ুন কবির। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইল, শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফরম, ডোপ টেস্ট ফাইল, দুটি মনিটর, দুটি সিপিইউ, দুটি কিবোর্ড ও একটি কালার প্রিন্টারসহ অন্যান্য সামগ্রী জব্দ করা হয়।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বেশ কয়েকটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। যেখানে বেরিয়ে আসে চালকদের অদক্ষতা, অসাধু উপায়ে খুব সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার মতো বিষয়গুলো। এরপর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীতে বাংলাদেশ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ভুয়া অফিস পরিচালনাকারী একটি চক্রের সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে দারুসসালাম থানার মিরপুর মাজার রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে লিটন পাইক, সুজন পাইক ও হাসান শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গোয়েন্দা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে জব্দকৃত ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইল ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রতিবেদন পরীক্ষা করে দেখে। পুলিশ ভেরিফিকেশন বিপি (বাংলাদেশ পুলিশ) নম্বর দেখে গোয়েন্দা পুলিশ বুঝতে পারে বাংলাদেশ পুলিশের বিপি নম্বরের সাথে এর কোন মিল নেই। তখন বিষয়টি গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করলে তারা বিষয়টি স্বীকার করে জানান, তাদের অন্যান্য সহযোগীদের মাধ্যমে বিআরটিএর কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে আবেদন ফাইলগুলো অফিসের বাইরে নিয়ে আসা হয়। এরপর তারা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া সিলমোহর ও স্বাক্ষরিত পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট তৈরি করে গ্রাহকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে দেয়।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য মতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে দিয়াবাড়ী বিআরটিএ অফিস ও এর আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই জালিয়াতচক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। নিয়মকে অনিয়মে পরিণত করে এই দালাল চক্র। বিআরটিএ অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজসে কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই অদক্ষ ড্রাইভারদের ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে দিতেন তারা। ফলে, লাইসেন্স পাচ্ছেন অদক্ষ ড্রাইভার, দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা।’