ভারতে ভোটার জালিয়াতির আলোচনায় উঠে এসেছে ব্রাজিলের একজন মডেলের নাম। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানায় ১০টি ভোটকেন্দ্রে ভোটার পরিচয়পত্রে লরিসা নেরির ছবি বিভিন্ন হিন্দু নামে ২২ বার ব্যবহার করা হয়েছে। খবর দ্য টেলিগ্রাফের।    

ভারতের বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী দাবি করেন, গত বছরের নির্বাচনে জাল ভোট নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিজয়ে ভূমিকা রেখেছিল।

রাহুল গান্ধী বলেন, ‘তিনি (লরিসা নেরি) হরিয়ানায় ২২ বার ভোট দিয়েছেন এবং ১০টি ভিন্ন বুথে ভোট দিয়েছেন। তার একাধিক নাম রয়েছে—সীমা, সুইটি, সরস্বতী, রশ্মি, বিমলা। এটা কেন্দ্র থেকে করা একটি কাজ। কোনো একজন কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকেই এই নারীকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন, বুথ পর্যায়ে নয়।’

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই নারী কে? তার বয়স কত? সে কোন রাজ্য থেকে এসেছে? আমাকে কিছু ধারণা দিন।’

রাহুল গান্ধী বলেন, ‘তিনি ব্রাজিল থেকে এসেছেন। তিনি একজন ব্রাজিলীয় মডেল। এটা একটা স্টক ছবি আর হরিয়ানায় এ ধরনের ২৫ লাখ রেকর্ডের মধ্যে তিনি একজন। হরিয়ানার ভোটার তালিকায় ব্রাজিলের একজন নারী কী করছেন?’

মডেল নেরির কাছেও এর কোনো উত্তর নেই। অনলাইনে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘বন্ধুরা, ওরা আমার একটা পুরোনো ছবি ব্যবহার করেছে।’

লরিসা নেরি বলেন, ‘এটি একটি পুরোনো ছবি। আমার বয়স তখন ১৮ কি ২০ বছর। আমি জানি না, এটা নির্বাচন নাকি ভোটদানের কিছু! ... আর ভারতে, আহ! ওরা আমাকে ভারতীয় হিসেবে উপস্থাপন করেছে মানুষকে ঠকানোর জন্য। এটি কী ধরনের পাগলামি! কী পাগলামি এটা? আমরা কোন জগতে বাস করছি?’

রাহুল গান্ধী দাবি করেন, হরিয়ানার দুই কোটি নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে প্রতি আটজনে একজন ভুয়া। তিনি জানান, এক পর্যালোচনায় ভোটার তালিকায় বিভিন্নভাবে অবৈধ অন্তর্ভুক্তি শনাক্ত করা গেছে, যার মধ্যে রয়েছে একই ছবি বারবার, একই ঠিকানায় অনেকের নিবন্ধন এবং একই ব্যক্তি একাধিক রাজ্যের ভোটার তালিকায়।

২০২৪ সালের হরিয়ানার নির্বাচনে রাহুল গান্ধীর দল কংগ্রেস জয়লাভ করবে বলে আশা করা হয়েছিল, কিন্তু ফলাফল ঘোষণার সময় তারা খুব কম ভোটের ব্যবধানে হেরে যায়। মাত্র ১১ হাজার ২০০ ভোটের ব্যবধানে বিজেপি জিতে যায়।

রাহুল গান্ধী বলেন, ‘আমি নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছি, ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছি।’ 

কংগ্রেসের এই নেতা আরেকজন নারীর ছবি দেখান, যেটি দুটি ভোটকেন্দ্রে ২২৩ জন ভোটারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যাদের সবার নাম, বয়স ও ঠিকানা আলাদা।

‘যখন আমি প্রথম এই বিষয়টি জানতে পারলাম, তখন আমি যা দেখেছি তা বিশ্বাস করতে পারিনি’, বলেন রাহুল গান্ধী। তিনি অভিযোগ করেন, ভারতের নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছ না। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ভোটার তালিকায় জালিয়াতি রেখে বিজেপিকে সাহায্য করছে।

নির্বাচন কমিশন অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ভোটার তালিকা নির্বাচনের অনেক আগেই সব রাজনৈতিক দলকে দেখানো হয়েছিল এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো দল আপত্তি করেনি।