দুই আইনজীবীকে রিমান্ড : নথি তলবের আদেশ স্থগিত
রাজধানীর জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলার মামলায় দুই আইনজীবীকে রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনায় মামলার নথি তলব করে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। একইসঙ্গে আগামীকাল এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির আদেশ দেন আদালত।
আজ রোববার হাইকোর্টে শুনানির জন্য দিন ধার্য থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বারে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার আদালতকে জানান, চেম্বারকোর্ট স্থগিত করে আপিল বিভাগে পাঠিয়েছেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুই আইনজীবীকে রিমান্ড বাতিল করতে রুল জারি করেন আদালত।
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আজ রোববারের মধ্যে নথি আদালতে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। ওইদিন পরবর্তী শুনানি হবে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার অনিক আর হক। রিটের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী, অ্যাডভোকেট আজহার উল্লাহ ভুঁইয়া, অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হকসহ শতাধিক আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী, শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ প্রমুখ।
এর আগে রাজধানীর জুরাইনে ঘটনায় দুই আইনজীবীকে রিমান্ডে নেওয়ায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ ফজলে ইলাহী।
গতকাল রাজধানীর জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় দুই আইনজীবীসহ পাঁচজনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত এ রিমান্ড আদেশ দেন। রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন শিক্ষানবিশ আইনজীবী সোহাবুল ইসলাম রনি ও তার শ্যালক আইনজীবী ইয়াসিন আরাফাত, স্থানীয় বাসিন্দা মো. শরীফ, মো. নাহিদ ও মো. রাসেল।
এদিকে, মামলার একমাত্র নারী আসামি আইনজীবী ইয়াসিন জাহান ভুইয়া নিশানের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে রিমান্ড আপাতত স্থগিত রয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার সময় জুরাইন রেলগেট এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) বিপ্লব ভৌমিক জানান, ৭ জুন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাস্তায় অনেক যানজট থাকা সত্ত্বেও উলটো পথে মোটরসাইকেলযোগে আসছিলেন রনি ও নিশান। এ সময় সার্জেন্ট মো. আলী তাদের গতিরোধ করে কাগজপত্র চাইলে তাঁর ওপর চড়াও হয় মোটরসাইকেল আরোহীরা। এ সময় তাঁরা আশপাশের লোকজনকে ডাকাডাকি করে পুলিশের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। পরবর্তীতে নিশান তাঁর ছোটভাই ইয়াসিনকে ফোন করে লোকজনসহ আসতে বলেন।
এদিকে, খবর পেয়ে ইয়াসিন সাড়ে ৩৫০ থেকে ৪৫০ জন লোক নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে সার্জেন্ট মোহাম্মদ আলীর ওপর এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে রক্তাক্ত ও জখম করে। পাশাপাশি হামলাকারীরা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর শুরু করে।
ঘটনাস্থলে আসা কদমতলী থানার এসআই উৎপল দত্ত অপু মারধরের শিকার হন। বর্তমানে সার্জেন্ট মো. আলী রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতাল চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর এসআই উৎপল দত্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ওই ঘটনায় ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. আলী হোসেন বাদী হয়ে সাড়ে ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।