নেত্রকোনার খেলার মাঠ কেন রক্ষা করা হবে না, হাইকোর্টের রুল
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল ঐতিহাসিক খেলার মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসাথে এ ঐতিহাসিক মাঠটিকে মাঠ হিসেবে সংরক্ষণ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
একইসাথে ঐতিহাসিক খেলার মাঠটিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজের ওপর তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সরকারের ১৪ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। এ বিষয়ে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করেছেন হাইকোর্ট।
আজ রোববার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ-এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত এক জনস্বার্থমূলক মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে এ রুল জারি করেন। বেলার পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন যে, সরকারের প্রস্তাবিত ৩৬টি ঘরের পরিবর্তে কেবল মাত্র ১২টি নির্মিতব্য ঘরই এ মাঠে থাকবে। এরপ্রেক্ষিতে আদালত বলেন নিম্ন আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন ক্ষমতার অপব্যবহার।
মামলার বিবাদীরা হলেন- ভূমি মন্ত্রণালয় সচিব, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক, নেত্রকোনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), নেত্রকোনার রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, নেত্রকোনার পুলিশ সুপারসহ ১৪ জনকে বিবাদী করা হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলাধীন বলাইশিমুল মৌজার “খেলার মাঠ” হিসেবে চিহ্নিত ১.৮০ একর ভূমি হতে ০.৪৬ একর ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে আশ্রয়ণ প্রকল্প করার উদ্যোগ নিলে স্থানীয় এলাকাবাসী খেলার মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন না করার দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেন। এলাকাবাসীর আবেদন উপেক্ষা করে খেলার মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন প্রক্রিয়া চলমান রাখলে এলাকাবাসী গত ৩০ মে কেন্দুয়া সহকারী জজ আদালতে উল্লিখিত ভূমিতে এলাকাবাসীর সর্বস্বত্ত্ব ঘোষণা ও খেলার মাঠ হিসেবে চিহ্নিত শ্রেণি পরিবর্তনে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দাবিতে একটি মামলা (নং ১০৯/২০২২) দায়ের করেন।
এ মামলায় গ্রামবাসীর নিষেধাজ্ঞার আবেদন বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালত নামঞ্জুর করেন। গত ৫ জুন আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসী মিস আপিল (নং ৩৬/২০২২) দায়ের করলে বিজ্ঞ জেলা জজ আদালত ১৮ জুলাই, ২০২২ তারিখে ৫ জুন ২০২২ তারিখের আদেশ বহাল রেখে রায় প্রদান করেন এই যুক্তিতে যে, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক খেলার মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন করেছেন। বেলার মামলার প্রাথমিক শুনানিকালে হাইকোর্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য তুলে ধরতে নির্দেশ দেন। এ প্রেক্ষিতে স্থানীয় এলাকাবাসী বেলার নিকট আইনি সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করলে জনস্বার্থে বেলা উল্লিখিত রিট পিটিশনটি দায়ের করেন।