বসন্ত-ভালোবাসা দিবস রাঙাতে মেতেছেন তরুণ-তরুণী
ঋতুরাজ বসন্তের শুরু আজ। তার আগমনে খুলে গেছে দখিনা দুয়ার। প্রকৃতির রূপতরঙ্গ মেতে কবিগুরু লিখেছিলেন, ‘ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে।’ পহেলা ফাল্গুনের এই দিনটিতে যোগ হয়েছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দুই উৎসবকে ঘিরে তাই উৎসবের আমেজ। সেজেছে প্রকৃতি। ডালে ডালে ফুটে আছে রক্তিম শিমুল ফুল। সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন মেতেছে নতুন প্রাণের কলরবে। এক কথায়, ভালোবাসায় মাথামাখি এক বসন্ত।
বাংলা বর্ষপঞ্জিতে পরিবর্তন আনায় পহেলা ফাল্গুন ও ভালবাসা দিবস একদিনেই উদযাপন করছে উৎসবপ্রিয় বাঙালি। প্রিয়জনের স্পর্শ পাওয়ার আকুলতা বসন্তে যেন ধরা দেয় ভিন্ন রূপে। প্রকৃতির রং লাগে মানুষের মনেও। যদিও আজ মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকে প্রকৃতিতে শীতের আমেজ জড়িয়ে আছে বেশ। আর এতেই মানুষের মনে লেগেছে অন্য এক মাত্রা। ফাগুন বন্দনায় মুখর হয়ে উঠেছে প্রকৃতিপ্রেমীরা।
জানা গেছে, ১৫৮৫ সালে মোগল সম্রাট আকবর ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘বসন্ত উৎসব’। সেই উৎসবকে কেন্দ্র করে আজ সকাল ৭টায় জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে ঢাবির চারুকলার বকুলতলায় শুরু হয় নানা আয়োজন। এর উদ্বোধনী পর্বের শুভ সূচনা হয় সমবেত বাদ্যযন্ত্র ও রাগাশ্রয়ী সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।
বসন্তকে বরণ করে নিতে ভোর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ ও নানা বয়সী লোকজনের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে যেন এক মিলনমেলায় রূপ নেয় চারুকলা প্রাঙ্গণ। বাসন্তি রঙের শাড়ি, পাঞ্জাবি ও বাঙ্গালিয়ানায় সেজেছেন অনেকে। আবার ভালোবাসার লালে উচ্ছ্বসিত ছিলেন কেউ কেউ।
এদিন ভালোবাসার মানুষের খোঁপায় ফুল গুজে দিচ্ছিলেন কেউ কেউ। আবার সেলফিতে ধরে রাখছিলেন স্মৃতি।
যদিও বসন্তের এই ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাই নয়, বরং সার্বজনীন বলে দাবি করেছেন অনেকে। ঢাবির শিক্ষার্থী আবু বকর বলেন, ‘ভালোবাসা দিবস শুধু বিপরীত জেন্ডারের প্রতি আটকে থাকতে পারে না। বরং, এই ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে সব সম্পর্কে, সবখানে। তাই এককেন্দ্রিক চিন্তা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।’
আফরোজা আক্তার বলেন, ‘বসন্তের এই দিনে ভালোবাসা দিবস প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের মনও রাঙিয়ে দিয়েছে। এই ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্ব যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোতেও। তারা ভালোসার উপলব্ধি থেকে প্রাণনাশের বিধ্বংসী চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসুক, পৃথিবী শান্তিময় হোক—এটাই প্রত্যাশা করি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার আয়োজনে আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়, নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফাহিম হোসেন চৌধুরী, সালমা আকবর, লাইসা আহমেদ লিসা, প্রিয়াংকা গোপ, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস ও সুচি দেবনাথ।
দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন গীতাঞ্জলি, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, বহ্নিশিখা, ও বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (ওয়াইজঘাট)।
দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে—সুরঙ্গমা, নৃত্যপরিচালনায় পূজা সেন গুপ্ত, ধৃতি, নৃত্য পরিচালনায় ওয়ার্দা রিহাব, স্বপ্ন বিকাশ কলা কেন্দ্র, নৃত্য পরিচালনায় মৈত্রী সরকার, নৃত্যম।