বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস রাঙাচ্ছে পঞ্চগড়ের লাখো টিউলিপ
আজ পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দিনটিকে রাঙাতে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় প্রায় এক লাখ গাছে দুলছে বাহারি রঙের ১০ প্রজাতির রাজসিক টিউলিপ। টিউলিপ ফুলের মনোমুগ্ধকর বাগানে ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ করেছে পর্যটকদের।
দর্জিপাড়া গ্রামের প্রায় দুই একর জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা টিউলিপ ফুলের এই উদ্যান যেন একখণ্ড নেদারল্যান্ডস। এ ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেড়েছে পর্যটক সমাগম। এ ছাড়াও আগামীতে ২১ ফেব্রুয়ারি মহান মাতৃভাষা দিবস ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে এই ফুলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
সমতলের চা ও কঞ্চনজঙ্গার সৌন্দর্যের পর উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় এখন মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শীত প্রধান দেশের নজরকাড়া ফুল টিউলিপ। টিউলিপের সৌন্দর্যে মুখরিত হয়ে উঠেছে তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়া। এখানে টিউলিপ ফুল চাষ হয়েছে ২০ জন উদ্যোক্তার সমন্বয়ে। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এবং ইন্টারন্যাশন্যাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট (ইফদার) সহযোগিতায় দেশের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) মাধ্যমে পাইলট প্রকল্পে চাষ করা হচ্ছে বিদেশি ফুল টিউলিপ। বাহারি রঙের ১০ প্রজাতির রাজসিক টিউলিপ যেমন সৌন্দর্য বর্ধন করছে, তেমনি ছড়াচ্ছে মুগ্ধতাও। এখানে রয়েছে ইকো ট্যুরিজমের মাধ্যমে থাকা খাওয়ার হোটেল ব্যবস্থা।
ইএসডিওর পরিচালক প্রশাসন ড.সেলিমা আখতার জানান, ভৌগলিক আবস্থানগত দিক থেকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া পর্যটনে অপার সম্ভাবনা এলাকা। তেঁতুলিয়ায় ইকো ট্যুরিজম গড়ে তুলতে ভিনদেশি টিউলিপ ফুলের চাষ পাইলট প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছি। টিউলিপ নেদারল্যান্ডসের উচ্চ মূল্যের দামি ফুল। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা এসে টিউলিপ ফুল দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন।
ড. সেলিমা বলেন, ‘টিউলিপ চাষে এবার ব্যয় হয়েছে ৮০ লাখ টাকা। বাল্ব বা চারার দাম, শেড নেট, ফেন্সিংনেট, রাসায়নিক সার, জৈবসার, কীটনাশক ও শ্রমের মূল্য ধরেই এই ব্যয় হয়েছে। গত ১০ জানুয়ারি এক লাখ টিউলিপ ফুলের বীজ রোপণ করা হয়। রোপনের ১৫-১৬ দিনেই চারা গজিয়ে কলি ফোটে।’
সেলিমা জানান, টিউলিপ ফুল উৎপাদন করে ফুলের জগতে অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে উৎপাদিত প্রতিটি ফুল বাগান থেকে ৫০ টাকা দরে স্থানীয়ভাবে বিক্রি শুরু করা হয়েছে।
মনোয়ারা খাতুন, সুমি আক্তার, আয়েশাসহ কয়েকজন উদ্যোক্তা বলেন, প্রথমবারের মতো গত বছর আমরা প্রান্তিক আট নারী এ অঞ্চলে নেদারল্যান্ডসের রাজকীয় টিউলিপ ফুটিয়েছিলাম। টিউলিপ চাষ করে আমরা যেমন সফল হয়েছিলাম, তেমনি আর্থিকভাবে লাভবান হই। টিউলিপ দেখতে এ অঞ্চলে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটে। আশা করছি, এবারও টিউলিপের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য ও হাসি তাদের মুগ্ধ করবে।
জানা গেছে, টিউলিপ ফুল চাষ করতে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকা প্রয়োজন। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সেই উপাদান বিদ্যমান।
১০ প্রজাতের টিউলিপ হচ্ছে, অ্যান্টার্কটিকা হোয়াইট (সাদা) ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল) ডাচ সানরাইচ (হলুদ) স্টংগোল্ড (হলুদ), জানটপিঙ্ক (গোলাপি), হোয়াইট মার্ভেল (সাদা), মিষ্টিকভ্যান ইজক (গোলাপি), হ্যাপি জেনারেশন (সাদা লাল ছায়া) এবং গোল্ডেন টিকিট (হলুদ)।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তেঁতুলিয়ার মাটিতে ভিনদেশি ফুল, সবজি ও ফল চাষ হচ্ছে। বিদেশি ফুল টিউলিপ চাষে এ অঞ্চলে পর্যটনে নতুনমাত্রা তৈরি করেছে। সেই সঙ্গে টিউলিপ চাষে ২০ জন নারী চাষিদের অর্থনীতি সমৃদ্ধি ঘটছে। কৃষি অফিস সব সময় পাশে আছে। আগামীতে টিউলিপ চাষ আরও বড় আকারে সম্প্রসারিত করা হলে অর্থনীতি ও আর্থ-সামাজিক এবং পর্যটনে সমৃদ্ধি ঘটবে বলে আশা করছি।’