বিশ্বের ৫১টি দেশে যাচ্ছে সুনামগঞ্জের মাছ
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কমবেশি মাছ থাকলেও হাওরের মৎস্য সম্পদের প্রাচুর্যের দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে সুনামগঞ্জ। এ জেলার প্রায় এক হাজার হাওর-বাওর, নদী-নালা, খাল-বিলের বিস্তৃর্ণ জলাশয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে দেশিয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। দেশের ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে শুধু সুনামগঞ্জের হাওর-নদীতে প্রায় দুইশ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। দেশের আমিষের চাহিদা পূরণ করে ইউরোপ-আমেরিক ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের ৫১টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে এসব মাছ।
সুনামগঞ্জ মৎস্য অফিস জানায়, প্রতিবছর সুনামগঞ্জ থেকে শুধু হাওর ও নদী থেকে একলাখ ছয় হাজার মেট্রিক টন দেশিয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন করা হয়।
জানা গেছে, জেলেরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাল দিয়ে মাছ ধরেন। পরে নৌকা করে সেই মাছ বিলের খলায় (মাছ রাখার জায়গা) নিয়ে আসেন বাজারে। ১০ থেকে ১৫ কেজি ওজনের রুই, বোয়াল, কাতলা, গ্রাসকাপ ও কার্পজাতীয় মাছ। একইভাবে চিতল কালি বাউশ, শৈল, গজার, পাবদা, টেংরা, কই, শিং, মাগুরসহ প্রচুর ছোট-বড় মাছ ধরে খলায় থরে থরে সাজিয়ে রাখেন তাঁরা।
সকাল থেকে পরের দিন ভোর পর্যন্ত বিলে এই কর্মযজ্ঞ চলতে থাকে। স্থানীয়রাসহ আশপাশের জেলার মানুষরা মাছ দেখতে এসে কিনে নিয়ে যায়। এভাবে টানা মার্চ মাস পর্যন্ত বিলে মাছ ধরা ও বিক্রি চলে।
বিলের ইজাদার ও শ্রমিকেরা জানান, দুই-তিন বছর পরপর প্রাকৃতিকভাবে পরিচর্যা করে মাছ ধরা হয়। সুনামগঞ্জের মাছ খেতে সুস্বাদু হওয়ায় এই মাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এই মাছ সুনামগঞ্জসহ দেশের সব জেলায় পাঠানো হয়। প্রতিবার মাছ ধরার মৌসুমে হাওরের নির্দিষ্ট অস্থায়ী জায়গাতে বসতি গড়ে দিনরাত কাজ চলে টানা তিন মাস।
সুনামগঞ্জ মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মণ্ডল বলেন, ‘এক জেলায় একসঙ্গে এতো সংখ্যক মাছ আর কোথাও পাওয়া যায় না। সুনামগঞ্জের হাওর গুলোতে দেশীয় ছোট মাছের বৈচিত্র্যতায় ভরপুর। আর পানি দুষণমুক্ত হওয়ার কারণে এবং প্রাকৃতিক জলজ উদ্ভিদ খাওয়া এই জেলার মাছ খেতে খুবই সুস্বাদু। তাই দেশে-বিদেশে এই মাছের চাহিদা বেশি। তবে, দেশি মাছ যাতে বিলুপ্ত না হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন কর্মকর্তারা। তারা জেলেদেরকে বিল শুকিয়ে বা বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করছেন।’