ভারতে যৌন নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি তরুণী এক বছর ধরে নিখোঁজ ছিলেন
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/05/28/india_1.jpg)
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী শহর বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশের এক তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। তাদের গ্রেপ্তারের এ খবর জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশও। এ ঘটনায় দুই দেশেই মামলা হয়েছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিসিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা ডিএমপির হাতিরঝিল থানায় মানব পাচারকারী আইন ও পর্নোগ্রাফি অ্যাক্টে একটি মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনআর (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।’
মামলার এজাহারে তরুণীর বাবা বলেন, ‘মগবাজার এলাকার ফুটপাতে ব্যবসা করেন তিনি। তার মেয়ের ছয়-সাত বছর আগে বিয়ে হয়। স্বামী তিন বছর ধরে কুয়েতে থাকে। স্বামী বিদেশ যাওয়ার পর থেকে সে আমার বাসায় ও শ্বশুরবাড়ি—উভয় জায়গায় থাকত। মেয়ে ১৫ মাস আগে আমাকে জানায় সে দুবাই যাবে। আমি তাকে নিষেধ করি। তবে এক বছর ধরে সে নিখোঁজ। পরে আমি জানতে পারি, মগবাজারের রিফাদুল ইসলাম ওরফে টিকটক হৃদয় তাকে ফুসলিয়ে বিক্রির উদ্দেশে পাচার করে। কিছুদিন আগে জানতে পারলাম মেয়ে হৃদয়ের সঙ্গে ভারতে আছে। তবে ভিডিও দেখে আমি আমার মেয়েকে চিনতে পারি। ভিডিওতে হৃদয়কে দেখা গেছে। সেই আমার মেয়েকে নিয়ে গেছে।’
সাইবার ক্রাইমের নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ ইন্টারপোল প্রোটোকলের আওতায় ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে। তা ছাড়া মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্টেন্স (এমএলএ) অন ক্রিমিনাল ম্যাটারস অ্যাক্ট-২০১২-এর আওতায় মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স চুক্তির (এমএলএটি) ভিত্তিতে যোগাযোগ হচ্ছে। দুই দেশেই মামলা হয়েছে। দুই দেশের পারস্পরিক আইনি কাঠামোয় এই মামলার তদন্ত একটি বিরল উদাহরণ হয়ে থাকবে। অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দায়ীদের বিচার নিশ্চিত করা হচ্ছে।’
ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের দেশে আনতে পারলে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করব। এই মানবপাচারের সঙ্গে আরও কারা জড়িত, তাদেরও আইনের আওতায় আনা সম্ভব। তাদের মাধ্যমে দেশ থেকে আরও অনেক মেয়ে পাচার হয়ে থাকতে পারে। সে তথ্যও আমরা জানতে চাইব।’
গত কয়েক দিন ধরে ভারতের কর্নাটক রাজ্যে বাংলাদেশি ওই তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভাইরাল ভিডিওটি ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগেরও নজরে আসে। তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘ভিডিওতে দেখা যায় আনুমানিক ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে তিন-চারজন যুবক অমানুষিকভাবে যৌন নির্যাতন করছে। ধারণ করা ভিডিওটির একজন নির্যাতনকারীর সঙ্গে রাজধানীর মগবাজার এলাকার একটি ছেলের ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া ছবির সঙ্গে মিলে যায়। ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের তদন্তে দেখা যায়, যুবকের নাম রিফাতুল ইসলাম হৃদয়। হৃদয়ের পরিচয় তার মা ও মামার কাছ থেকেও শনাক্ত করা হয়। স্থানীয় লোকজন তাকে টিকটক হৃদয় নামে চেনে। এ ছাড়া তরুণীর বাবা-মাকে খুঁজে বের করে পুলিশ। মেয়েটির বাড়ি কিশোরগঞ্জে। তাদের মেয়ে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার একটি বাসায় থাকত।’