মৌলভীবাজারে চা শ্রমিকদের ট্রেনলাইন অবরোধ
মৌলভীবাজারে চা শ্রমিকরা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে কুলাউড়া স্টেশনে প্রবেশের আগে স্কুল চৌমুহনা এলাকায় সিলেটগামী আন্তনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে দেয়। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত তারা ট্রেনটি আটকে রাখে।
এ সময় শ্রমিকরা রেললাইনের ওপর শুয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে রেললাইন থেকে তুলে দেয়।
অপরদিকে আজ দুপুরে কুলাউড়া শহরের নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় চৌমুহনীতে সড়কপথ অবরোধ করে শ্রমিকরা। পরে বিকেল ৪টার দিকে ওই এলাকায় আন্তনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন ঘণ্টাখানেক আটকে রাখে শ্রমিকরা। এতে ভোগান্তিতে পড়ে সড়ক ও রেলপথের যাত্রীরা।
জানা যায়, উপজেলার কালোটি, রাঙ্গিছড়া, রাজানগরসহ কয়েকটি বাগানের সহস্রাধিক শ্রমিক সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে। এ সময় চা শ্রমিকরা তাদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদি হাসান, কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদেক কাওসার দস্তগীর, কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুস ছালেক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করলে শ্রমিকরা তাদের অবরোধ তুলে নেয়।
শ্রমিক আন্দোলনের আজ ১৫তম দিনে মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগানের মধ্যে বেশ কিছু বাগানে চলছে ধর্মঘট। বেশ কয়েকটি চা বাগানে শ্রমিকরা দুপুরে পাতা উত্তোলন করেন। সকাল সাড়ে ১১টায় মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ফিনলে টি কোম্পানির ভাড়াউড়া চা বাগানে সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন তাদের মজুরির বিষয়ে। তিনি তাদের আশ্বাস দেন মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে। প্রধানমন্ত্রী দুর্গাপূজার আগে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ঘোষণা দেবেন বলেও জানান তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপারসহ অন্য কর্মকর্তারা।
এ সময় উপস্থিত শ্রমিকরা জেলা প্রশাসককে কাজে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দেন। এর আধাঘণ্টা পর ভাড়াউড়া চা বাগানে শ্রমিকরা নামেন চাপাতা উত্তোলন করতে।
এদিকে দেশীয় চা সংসদ, সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান জি এম শিবলি জানান, শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে প্রতিদিন চা শিল্পের লোকসান হচ্ছে ২০ কোটি টাকা। তিনি আশা করছেন শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন।
চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে প্রথম দফা ঢাকায় বাংলাদেশ শ্রম অধিদপ্তর কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠক, পরে শ্রীমঙ্গল শ্রম দপ্তরে এবং সর্বশেষ গত রোববার মধ্যরাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠকে আটজন শ্রমিক নেতা ১৪৫ টাকা মজুরি মেনে নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ স্বাক্ষর করে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন। পরে তারা সাধারণ শ্রমিকের চাপে তা প্রত্যাখ্যান করেন। সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত ৮ শ্রমিক নেতা এরপর থেকে তাদের মুঠোফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট থেকে শ্রমিকরা তাদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকার দাবিতে ধর্মঘটে নামেন। এরপর ১৩ আগস্ট অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়ে মানববন্ধন, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করে করে আসছে শ্রমিকরা। ১৪ ও ১৫ আগস্ট দুদিন স্থগিত থাকার পর ১৬ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত পূর্ণদিবস ধর্মঘট পালন করে আসছে চা শ্রমিকরা।