রাজশাহীতে আম পাড়া শুরু ১৫ মে
আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত রাজশাহীতে এবার আম পাড়া শুরু হচ্ছে আগামী ১৫ মে থেকে। পর্যায়ক্রমে সাত ধাপে বিভিন্ন জাতের পরিপক্ক আম গাছ থেকে পাড়া হবে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাননো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১৫ মে থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া শুরু হবে। তবে কোনো আম আগে পাকলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানাতে হবে।
রাজশাহীতে সাধারণত সবার আগে পাকে গুটি জাতের আম। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১৫ মে থেকে এই আম পাড়া যাবে। আর উন্নতজাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ ২০ মে, রানিপছন্দ ২৫ মে, লক্ষণভোগ বা লখনা পাড়া যাবে ২৫ মে থেকে এবং খিরসাপাত বা হিমসাগর ২৮ মে থেকে পাড়া যাবে।
এ ছাড়া ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ও ফজলি আম ১৫ জুন থেকে পাড়া যাবে। আর সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে পাড়া যাবে আশ্বিনা ও বারি-৪ জাতের আম।
অপরিপক্ব আমের বাজারজাত ঠেকাতে গত কয়েক বছর ধরেই রাজশাহীতে আম নামানোর তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এবারও সিদ্ধান্ত নিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষ থেকে অনলাইন প্লাটফর্মে জুম মিটিং করা হয়। এতে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই যদি কোনো বাগানে আম পেকে যায় তাহলে চাষি তা নামাতে পারবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে বিষয়টি লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানাতে হবে। তারপর ইউএনও সরেজমিনে বাগান পরিদর্শন করবেন। বাগানে তিনি প্রাকৃতিকভাবে আম পাকা দেখলে তা নামানোর অনুমতি দেবেন। এরপরই আম নামিয়ে বাজারে পাঠাতে পারবেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা এমন সিদ্ধান্তই হয়েছে ওই সভা থেকে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল বলেন, তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, গত কয়েক বছর থেকে আম নামানোর তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়ার কারণে ঢাকাসহ সারাদেশের ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। তাঁরা নিশ্চিত ছিলেন যে, কোনো রাসায়নিক মিশিয়ে রাজশাহীর আম পাকানো হয়নি, এটা প্রাকৃতিকভাবেই পেকেছে। ফলে রাজশাহীর আমের সুনাম অক্ষুণ্ন ছিল। তাই এবারও থাকবে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, আম পাড়ার তারিখ নির্ধারণ করা না হলে বাগানে প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধি করা হতো। কেউ যেন আগেভাগে অপরিপক্ব আম নামাতে না পারেন সেজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হতো। কিন্তু এতো জনবলও তাদের নেই। সব দিক বিবেচনায় আম নামানোর ক্ষেত্রে তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হলো। তবে আগে পাকলে অবহিতকরণের মাধ্যমে আম নামানোরও সুযোগ থাকল।
এদিকে চলতি বছর তাপদাহসহ প্রাকৃতিক বৈরিতায় গাছ থেকে আপনা আপনি ঝরে পড়ছে বাড়ন্ত আম। এতে রাজশাহীর বাগানগুলোতে কমেছে আমের পরিমাণ। তাই উৎপাদনের লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয়ে আছেন চাষিরা। তবে কৃষি বিভাগ বলেছে, বাড়তি ফলন না হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্যা নেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ততর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৩৭০ হেক্টর বাড়িয়ে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১১ দশমিক নয় মেট্রিক টন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্য হবে না বলেও মতামত রাজশাহী কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের।