র্যাবের অভিযানে ধরা জালিয়াতচক্র, ৬৪ হাজার জাল স্ট্যাম্প উদ্ধার
জাল জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল এবং রেভিনিউ স্ট্যাম্পে সয়লাব রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশ। সেসব জাল স্ট্যাম্প বিক্রি হচ্ছে বৈধ ভেন্ডারদের মাধ্যমেই। এতে একদিকে সরকার যেমন হারাচ্ছে রাজস্ব, তেমনি ভোগান্তিতে পড়ছেন মানুষ। এমন এক জালিয়াতচক্রের হোতা ফরমান আলীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩ ও এনএসআই। একদিনের অভিযানে শুধু মতিঝিল থেকেই জব্দ করা হয়েছে বিভিন্ন মূল্যের ৬৪ হাজার জাল স্ট্যাম্প।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে আজ শনিবার র্যাব-৩-এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান
আরিফ মহিউদ্দিন জানান, জালিয়াতচক্রের মূলহোতা ফরমান আলী সরকার ডিগ্রি পাসের পর ১৯৯৩ সাল থেকে ভেন্ডারের ব্যবসা শুরু করেন। এরপর জাল জুডিশিয়াল ও নন জুডিশিয়াল রেভিনিউ স্ট্যাম্প নিয়ে প্রতারণার দায়ে ২০১৭ সালে পল্টন থানায় ফরমান আলীর বিরুদ্ধে মামলা করে সিআইডি। ওই মামলায় তিনি কারাভোগও করেন।
আরিফ জানান, জামিনে বেরিয়ে একই অপরাধে জড়ান ফরমান। অবশেষে শুক্রবার আবারও গ্রেপ্তার হন তিনি। এ সময় ফরমান নিজেকে ভেন্ডার হিসেবে পরিচয় দিলেও জব্দ সব স্ট্যাম্প সম্পর্কে তার রেজিস্টারপত্রে সঠিক হিসাব দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ আরও জানান, জালিয়াতচক্রের হোতা ফরমান আলীর সঙ্গে গ্রেপ্তার অন্য তিন জন হলেন—তুহিন খান (৩২), আশরাফুল ইসলাম (২৪) ও রাসেল (৪০)।
র্যাব জানায়, ফরমান আলীর সহযোগী তুহিন খান অবৈধ জাল স্ট্যাম্প মতিঝিলের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ দোকানে প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রি করতেন। আশরাফুল ইসলাম আগে গ্রামীণফোন কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গত দুই বছর আগে ফরমান আলীর সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন। আর রাসেলের নামে রাজধানীর পল্টন থানায় ২০১২ সালের একটি অস্ত্র আইন ও একটি অপহরণের মামলা রয়েছে।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সম্প্রতি র্যাব-৩ ও এনএসআই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অপরাধচক্রের বিষয়ে জানতে পারে। পরে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় যৌথ অভিযান চালিয়ে অবৈধ জাল জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি তৈরি চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অভিযানে ১০০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ছয় হাজার ৫০০টি, ৫০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প তিন হাজার, ৩০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৪০০টি, ২৫ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৫০০টি, ২০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প চার হাজার, ১০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প দুই হাজার ৫০০টি, পাঁচ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ছয় হাজার ৫০০টি, দুই টাকা মূল্যমানের অনুলিপি স্ট্যাম্প এক হাজার ৫০০টিসহ মোট ২৪ হাজার ৮০০টি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প জব্দ করা হয়।
এ ছাড়া ৩৮ হাজার ২০০টি রেভিনিউ স্ট্যাম্প জব্দ করা হয়। এর মধ্যে ৫০০ টাকার ২০০টি, ১০০ টাকার তিন হাজার ৬৪০টি, ৫০ টাকার চার হাজার ২০০টি, ২৫ টাকার ১৬০টি, ২০ টাকার তিন হাজার ৭২০টি, ১০ টাকার ১১ হাজার ২৮০টি, পাঁচ টাকার ১৪ হাজার ২৮০টি, চার টাকার ২৪০টি ও দুই টাকার ৪৮০টি।
স্ট্যাম্প জব্দের পাশাপাশি ওই যৌথ অভিযানে কার্টিজ পেপার ৫০০০টি, মনিটর একটি, সিপিইউ একটি, প্রিন্টার একটি এবং নগদ আট লাখ ৮৬ হাজার ৪৬০ টাকা জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে র্যাব-৩-এর অধিনায়ক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, রেভিনিউ স্ট্যাম্প সংগ্রহ করে প্রতারণামূলকভাবে বিক্রি করে অন্যায়ভাবে লাভবান হয়ে আসছে চক্রের সদস্যরা। ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে এসব জাল স্ট্যাম্প তৈরি করা হচ্ছে। বৈধ ও অবৈধ ভেন্ডরদের মাধ্যমে তা বিক্রি করা হচ্ছে। এতে রাষ্ট্র আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়—উদ্ধার করা স্ট্যাম্পের বিষয়ে গ্রেপ্তার চার জন কোনো ধরনের কাগজপত্র দেখাতে ও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি।