‘শেখ মুজিবনগর’ প্রকল্পের নামে জমি দখল, মাছ লুটের অভিযোগ
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিসাখালীতে এক হাজার ৩২০ বিঘার মৎস্য ঘের জোর করে দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে পাঁচ শতাধিক সন্ত্রাসী রাতারাতি ওই ঘের দখল করে নেয়।
জানা গেছে, দখলকারীরা প্রতিদিন চার লাখ টাকার মাছ বিক্রি করে সেখানে লুটপাট শুরু করেছে। এই জমি ও ঘেরের রেকর্ডিয় মালিকরা তাদের জমি ফিরে পেতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছোটাছুটি করছেন।
এদিকে, দখলদাররা নিজেদের ভূমিহীন দাবি করলেও এলাকাবাসী বলছে, এরা ভূমিদস্যু। তারা বিভিন্ন ডাকাতি মামলার আসামি। তাদের নেপথ্যে রয়েছে গোপন চরমপন্থিরা।
অপরদিকে দখলকারীদের দাবি, এ জমি সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত। আমরা এখানে আবাসন প্রকল্প করব।
তবে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বলেছেন, দখলকৃত জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন। যেটুকু খাস জমি রয়েছে, তা সবই রাস্তা ও একটি খালের মধ্যে।
পারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, দখলদাররা ভূমিহীন নয়। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে জমি ও ঘের দখল এবং সন্ত্রাস ও ডাকাতির অভিযোগ আছে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে খলিসাখালী, ঢেবুখালি, নোড়ারচকসহ কয়েকটি এলাকার কিছু লোকের নেতৃত্বে পাঁচ শতাধিক সন্ত্রাসী রাতারাতি ওই ঘের দখল করে নেয়। এ সময় তারা অস্ত্রের মুখে জমি ও ঘেরমালিকদের বাসাবাড়ি ভেঙেচুরে কর্মচারীদের মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। তারা দু’তিন দিনের ব্যবধানে দুই কোটি টাকার মাছ ওই ঘের থেকে লুট করে বিক্রি করে এবং সেই টাকা ভাগাভাগি করে নেয়। এরপর থেকে দৈনিক সাদা জাতের রুই, কাতল ভেটকিসহ নানা প্রজাতির মাছ লুট করে তা বেচে দিচ্ছে। ওই এলাকায় যাতে কেউ যেতে না পারে সেজন্য তারা সড়কে বাঁশ বেঁধে রেখে নারীদের পাহারায় বসিয়েছে। এভাবে তারা সেখানে একক কর্তৃত প্রতিষ্ঠা করে লুটপাট করে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জমির মালিক ডা. নজরুল ইসলাম, গোলাম মোরশেদ ও মো. আনসার আলী জানান, পুরো জমি আমাদের রেকর্ডিয়। চলতি সাল পর্যন্ত ভূমি করও পরিশোধিত। এ এলাকার একটি ভূমিগ্রাসী চক্র আমাদের জমি ও মাছের ঘের অস্ত্রের মুখে দখল করে নিয়ে লুটতরাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা বাধা দিতে গেলেই তারা হামলা করছে। এমন অবস্থায় নিজেদের জমি ফিরে পেতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আবেদন করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সুফল পাইনি।
দখলকারীরা সেখানে ‘শেখ মুজিবনগর, খলিসাখালী আবাসন প্রকল্প’ নামের একটি ব্যানার টানিয়ে তাদের দখলকে পাকাপোক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল সোমবার দখলদারদের পক্ষে সুনীল স্বর্ণকার নামে এক ব্যক্তি ঢাকায় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, এ জমি খাস। কিছু লোক জাল দলিল করে তা দখল করে রেখেছিল। আমরা তাদের উচ্ছেদ করেছি। এখন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।
জমির রেকর্ডিয় মালিকরা জানান, তারা এখানে ৩০ খণ্ড জমিতে ৭০ বছর ধরে চাষাবাদ ও মাছের ঘের করে আসছেন। কিছুদিন আগে সন্ত্রাসীদের একটি দল এই জমি দখল করে নেয়। এ ব্যাপারে দেবহাটা থানায় জানালেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই গত ১২ সেপ্টেম্বর তারা সাতক্ষীরা আদালতে একটি মামলা করেছেন।
জানা গেছে, ২৭টি দাগের এক হাজার ৩২০ বিঘা জমির মালিক চণ্ডীচরণ ঘোষ। তার কাছ থেকে বিনিময় সূত্রে এই জমি লাভ করেন কাজী আব্দুল মালেক। এই জমির এসএ রেকর্ডের পর মালিকপক্ষের কাছ থেকে বর্তমান মালিকরা তা সাবকবলা দলিল মূলে কিনে নেন। এই জমি দখল করার অসৎ উদ্দেশে জোনাব আলী নামের এক ব্যক্তি ১৮/২০১০ নম্বরের একটি মামলা করেন। মামলাটি এখন বিচারাধীন রয়েছে। এরই মধ্যে তা দখল করে নিয়েছে সুবিধাভোগী মহল।
মালিকপক্ষ জানায়, সাতক্ষীরার ঢেবুখালীর ডাকাত সর্দার আকরাম, নোড়ারচকের রবিউল, আবুল হোসেন, ইশাদ আলী, সিরাজুল ইসলাম, আনারুল, রাজু, রিপন, আনিসুর রহমান, ফিরোজুল, চালতেতলার গোলাম ঢালী, খলিসাখালীর নুরুজ্জামান, সাইফুল ইসলাম, বাবলুসহ বেশ কয়েকজন সবসময় সশস্ত্র পাহারায় রয়েছেন। তাদের দাবি, এই জমি খাস খতিয়ানভুক্ত। এটা কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি নয়। সাংবাদিক বা অন্য কেউ যাতে গাড়ি নিয়ে সেখানে যেতে না পারে, সেজন্য তারা পথে বসিয়েছে বাঁশের ব্যারিকেড। নারীদের বসিয়েছে পাহারায়।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘খলিসাখালীর এক হাজার ৩২০ বিঘা জমির কাছে কয়েক একর খাস জমি রাস্তা ও খালের মধ্যে রয়েছে। বাকি জমি সব ব্যক্তি মালিকানাধীন।’ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় সেখানে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা চলছে।’
জানতে চাইলে দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ ওবায়দুল্লাহ্ বলেন, ‘এ বিষয়ে থানায় করা তিনটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছি। একইসঙ্গে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সব ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’