সময় এসেছে ডিজিটাল আইনকে কবরে পাঠানোর : ডা. জাফরুল্লাহ
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, এখন সময় এসেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে কবর দেওয়ার। এই আইন দিয়ে অপরাধ দমন করা যায় না।
এ সময় জাফরুল্লাহ চৌধুরী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রসঙ্গ এনে বলেন, ‘গতকাল কাশিমপুর কারাগারে ডিজিটাল আইনে কারাবন্দি মুক্তচিন্তার লেখক মোস্তাক আহমেদ মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যুর জন্য সরকারকে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে হবে, বলতে হবে ভুল হয়েছে।’
কারাগারে মৃত্যুর জন্য মোস্তাকের পরিবারকে এখনই ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলেও দাবি করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি আরও বলেন, ‘এখন সময় এসেছে ডিজিটাল আইনেকে কবরে পাঠানোর।’
আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ শিশু কল্যাণ পরিষদের মিলনায়তনে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সভা ও জাতীয় কাউন্সিলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এসব কথা বলেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হওয়া লেখক মুশতাক আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান। তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ছিলেন। এই মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অনেকে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়েছে। তবে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
পুলিশ জানায়, ঢাকার রমনা মডেল থানায় মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে গত বছরের ২ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১১/২৫(১)(খ)/৩১/৩৫ ধারা) মামলা করা হয়। ওই মামলায় তাঁকে একই মাসের ৬ মে গ্রেপ্তার করা হয়। গত বছরের ৮ আগস্ট মুশতাক আহমেদকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে তাঁর হাজতি নম্বর ছিল ৯২৭/২০২০।
‘শ্রমিকের মৃত্যুতে বিমা বাবদ ৫০ লাখ টাকা দেওয়া কঠিন না’
কর্মক্ষেত্রে একজন শ্রমিকের মৃত্যুতে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘কোনো শ্রমিকের যদি কর্মক্ষেত্রে মৃত্যু হয় তাঁকে ৫০ লাখ টাকার বিমা দেওয়া কোনো কঠিন কাজ না৷ দেশের বাইরে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, তাদের দেখভাল করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। গত কয়েক বছরে শুধু কাতারেই হাজারের উপর শ্রমিক মারা গেছেন। তাঁদের প্রত্যককে ৫০ লাখ টাকা করে দেওয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য।’
শ্রমিকরাই দেশ গড়ার কারিগর এবং তাঁদের সৃষ্টির ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আরও বলেন, ‘আজকে যত বৈভব, যত বড় বড় স্বপ্ন তার প্রত্যেকটার ক্ষেত্রে অবদান রয়েছে আপনাদের শ্রমিকদের। আজকে আপনারা না থাকলে বাংলাদেশ নেই। এই ৯৫ ভাগ মানুষ কেউ নেই।’
সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি মোখলেসুর রহমান মাস্টারের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ এ এম ফয়েজ হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন হাফিজ আহমেদ মজুমদার, শ্রমিকনেতা জাকির হোসেন, আবদুল হাকিম, আম্বিয়া খাতুন, ইঞ্জিনিয়ার ওসমান গনি, গোলাম কাদের, জান্নাতুল ফেরদৌস, এম এম আই সবুজ খান প্রমুখ।