সাবেক স্ত্রীকে খুনের মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
গাজীপুরে ডিভোর্স দেওয়ার প্রতিশোধ নিতে গার্মেন্টসকর্মী সাবেক স্ত্রীকে কুপিয়ে ও গলা কেটে খুন করেন তাঁর সাবেক স্বামী। এ ঘটনায় স্বামীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মমতাজ বেগম এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডের আসামির নাম মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে শরিফুল আলম (৪৭)। তাঁর বাড়ি নীলফামারী জেলার সদর থানার রামকলা এলাকায়।
গাজীপুর আদালতের ভারপ্রাপ্ত পিপি মকবুল হোসেন কাজল জানান, মহানগরীর কাশিমপুর থানার সারদাগঞ্জ সুলতান মার্কেট এলাকার হাজি রুহুল আমিনের কলোনিতে ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় জিএমএস গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করতেন মোহছেনা বেগম (৩৫)। তিনি রংপুরের পীরগাছা থানার সৈয়দপুর গ্রামের মজিবুর রহমানের মেয়ে।
একই কারখানায় ডেইলি লেবার হিসেবে কাজ করতেন মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে শরিফুল। একই কারখানায় চাকরির সুবাদে তাদের মধ্যে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর স্ত্রী মোহছেনা জানতে পারেন স্বামী শরিফুল আগে বিয়ে করেছেন এবং তার চারটি সন্তান রয়েছে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই কলহ লেগে থাকত।
একপর্যায়ে মোহছেনা তাঁর স্বামী শরিফুলকে ডিভোর্স দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শরিফুল বিভিন্ন সময়ে মোহছেনাকে খুনের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছিলেন।
২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর রাতের ডিউটি শেষে সকালে বাসায় ফিরেন মোহছেনা। তিনি বাসায় আসার পর পরই শরিফুলও ওই বাসায় আসেন। এ সময় ডিভোর্সের প্রতিশোধ নিতে মোহছেনাকে বটি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে এবং ধারাল চাকু দিয়ে গলা কেটে খুন করেন। এরপর শরিফুল ঘরের দরজা আটকিয়ে ভেতরে অবস্থান করেন।
ঘটনার সময় মোহছেনার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। তারা ডাকাডাকি করলেও ভেতর থেকে দরজা খুলছিলেন না তিনি।
এ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ এসে ভেতরে প্রবেশ করে রক্তাক্ত কাপড়ে শরিফুলকে আটক করে। এ সময় পুলিশ নিহত মোহছেনার মরদেহ এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটি ও চাকু জব্দ করে।
এ ঘটনায় নিহত মোহছেনার ছোট ভাই সাদ্দাম হোসেন বাদী হয়ে জিএমপির কাশিমপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দীপঙ্কর রায় ২০২১ সালের ১০ মার্চ আসামি সাইফুল ইসলাম ওরফে শরিফুলকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালত দীর্ঘ শুনানি ও ১৫ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আজ মামলার একমাত্র আসামি মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে শরিফুলকে মৃত্যুদণ্ডা দেন। রায় ঘোষণাকালে আসামি শরিফুল আদালতেই উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন ভারপ্রাপ্ত পিপি মকবুল হোসেন কাজল। আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফারহানা খানম।