সারা রাত দাঁড়িয়ে ঈদের ফিরতি যাত্রা, টিকেট কেটেও ভোগান্তি

রাফিয়া বেগম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ঈদ উদ্যাপনে গিয়েছিলেন যশোরে নিজগ্রামে। আজ শনিবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ে তাঁর অফিস করার কথা। তাই, তাঁকে ঢাকায় ফিরতেই হবে। কিন্তু, বাসে অথবা ট্রেনে—কোথাও টিকেট পাচ্ছিলেন না তিনি।
শুক্রবার রাত পৌনে ১১টা। যশোর থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রেনে ওঠেন রাফিয়া বেগম। ‘ছ’ বগির মুখেই তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁর জন্য বসার নির্ধারিত স্থান নেই। তিনি দাঁড়িয়েই রইলেন। এভাবে ঘণ্টাদুয়েক যাওয়ার পর তিনি ট্রেনের মেঝেতে বসে পড়েন।
কিন্তু, রাফিয়া বেগম বসে পড়ায় অনেকের দাঁড়াতে সমস্যা হচ্ছে। তাঁর মতো আরও শতশত মানুষ এভাবে দাঁড়িয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। মূলত জনসভাস্থলে যেমন গাদাগাদি করে দাঁড়ায় মানুষ, এখানেও তাই। যত জন টিকেট কেটে উঠেছেন, তারচেয়ে বেশি মানুষ উঠেছেন টিকেট না পেয়ে।
কথা প্রসঙ্গে রাফিয়া বেগম বলছিলেন, ‘কিছু করার নেই। ঢাকায় তো যেতেই হবে, সেটা যেভাবেই হোক। ভেবেছিলাম, দিনের বেলা গেলে বেশি ভিড় থাকবে। তাই, রাতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু, রাতেও তো ট্রেনের কোথাও পা রাখার সুযোগ নেই। দাঁড়িয়ে থেকে নড়ার সুযোগও পাচ্ছি না। আমার ছেলেও রয়েছে ট্রেনে।’
রাফিয়া বেগম যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেখানে এক পরিবারের তিন জন বসে ছিলেন। তাঁরা টিকেট পেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে নজরুল ইসলাম একজন ব্যাংকার। তিনি বলছিলেন, ‘টিকেট কেটেও শান্তি নেই। সবাই গায়ের ওপর পড়ছে মনে হয়। অবশ্য, ওদের কিছু করারও নেই। সবার অফিস করার তাড়া। আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন প্রায়। খেয়াল করে দেখুন, দুই সারির সিটে আমরা ১০ জন বসেছি। কিন্তু, এ জায়গাটুকুর মধ্যে ১২ জন দাঁড়িয়েছে!’
যশোর-খুলনা কিংবা এর পরের স্টেশনগুলো থেকে যাঁরা টিকেট না কেটে উঠেছিলেন, তাঁরা সবাই সারা রাত ট্রেনে দাঁড়িয়ে এসেছেন ঢাকা পর্যন্ত। ট্রেনের মধ্যে ভ্রাম্যমাণ টিকেট পরিদর্শক (টিটিই) উঠে যাঁরা টিকেট কাটেননি, তাঁদেরও অবশ্য টিকেট ধরিয়ে দিয়েছেন। অন্য সময় হলে হয়তো জরিমানা করা হতো টিকেট না কেটে ওঠার অপরাধে। কিন্তু, কাউকে জরিমানা করা হয়েছে, এমনটি শোনা যায়নি।
তবে, শনিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে যখন রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে এসে ট্রেন থামে, তখন দুজন চেকার মোট পাঁচ জন মানুষকে ডেকে টিকেট চেক করেন। কেন টিকেট কাটেননি, কিংবা কীভাবে এ পর্যন্ত এসেছেন তাঁরা, এসব জানতে চাচ্ছিলেন। যদিও তাঁদের জরিমানা করা হয়েছে কি না, তা জানা সম্ভব হয়নি।
গতকাল শুক্রবার রাতে রেল পুলিশের আলতাফ হোসেন নামের এক নিরাপত্তাকর্মী বলছিলেন, ‘আজ (শুক্রবার) থেকে ট্রেনের যাত্রী বেড়েছে। আগামী শনিবার (আজ) সবচেয়ে বেশি বাড়বে। টিকেট তো নেই, কিন্তু মানুষকে তো যেতে হবে। রোববার থেকে সব অফিস খুলে যাচ্ছে। ফলে, টিকেট ছাড়াই মানুষ রওনা দিবে। ঈদের জন্য হয়তো কাউকে জরিমানা করা হবে না। কিন্তু, আইন অনুযায়ী টিকেট ছাড়া ভ্রমণ নিষিদ্ধ। সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলে যাত্রীকে জরিমানা করতে পারেন।’
রেল পুলিশের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার মনে হয়, ভাড়াসহ জরিমানা করাই ভালো। কারণ, জরিমানা করলে যাত্রীর কাছে কাগজ থাকে যে, তিনি টাকা দিয়েছেন। আর, তা না হলে অথবা টিটিইরা টাকা নিয়ে যাত্রীকে রসিদ না দিলে ওই যাত্রী পুনরায় ভোগান্তির শিকার হতে পারেন। দেখা গেল, নাসার স্টেশনে তাঁর আবার জরিমানাসহ টাকা দিতে হয়েছে ভ্রমণের জন্য।’